সমাপ্তের পথে যুবলীগের ওমর ফারুকের অধ্যায়!

সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিল ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরায় যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে। এরপর পেরিয়ে গেছে এক মাস। গত এক মাসে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, যুবলীগ কার্যালয়, আড্ডার প্রিয়স্থান যুব গবেষণা কেন্দ্র কোথাও দেখা যায়নি তাকে। ফোন ধরছেন না কারো। এমনকি নেতাকর্মীদেরও না। ইতোমধ্যে ব্যাংক হিসাব তলব, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, সবশেষে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ডাক থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন তিনি।

এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, ইতি ঘটতে যাচ্ছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের। রবিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগের মিটিংয়ে হয়তো এমন সিদ্ধান্তই আসতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে ওমর ফারুক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান ও হারুনুর রশীদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দুই মাস পর ১৪৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। পরে আরো তিনজনকে পদ দিয়ে ১৫১ পূর্ণ করা হয়। যুবলীগ নেতাকর্মীরা জানান, তিন বছরের জন্য কমিটি হলেও সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি নয়, ‘টেণ্ডু পাতা’র ব্যবসা, বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন যুব সংহতির রাজনীতি থেকে ৩ বছর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা ওমর ফারুকের সিদ্ধান্তই ছিল চ‚ড়ান্ত। তার দাপটের কাছে টু শব্দ করার সাহস পাননি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও।

অভিযোগ ওঠেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারাদেশের কমিটিতে নিজের অনুগতদের পদ দেয়া বাহাত্তর ছুঁইছুঁই ওমর ফারুক চৌধুরী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অনেককেই কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ফ্রিডম পার্টি ও যুবদলের অনেকে টাকার বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগে এমন অভিযোগও করেছেন অনেকেই। নিজ সাম্রাজ্যে তিনিই ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট।

আরো পড়ুন:
ডলার সংকটের পেছনে ৯ ব্যাংকের কারসাজি
কাউন্সিলর রাজীব আটক, অস্ত্র-মাদক ও পাসপোর্টসহ নগদ টাকা জব্দ

তবে আওয়ামী লীগের চলমান শুদ্ধি অভিযানে নড়বড়ে হয়ে যায় তার রাজত্ব। অভিযান শুরু হওয়ার পরও সরব ছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। সভা-সমাবেশে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। শুরুতেই ‘শুদ্ধি অভিযান’ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়ায় যুবলীগ চেয়ারম্যান সমালোচনার মুখে পড়েন। অবশ্য বাস্তবতা বুঝতে পেরে দ্রুত নিজেই ভোল পাল্টান।

এদিকে ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ নেতাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব। এরপর থেকে অনেকটাই গৃহবন্দি যুবলীগ চেয়ারম্যান। বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। সাড়া দিচ্ছেন না ফোনে। রয়েছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কেও।

এদিকে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যায়ের সমাপ্তি কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিলেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। আজকের বৈঠকেই এর ফয়সালা হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।

অক্টোবর ২০, ২০১৯ at ১০:৫৯:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম