কাউনের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড় চরাঞ্চলে কাউনের বাম্পার ফলন হয়েছে, এতে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।কম খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম থাকায় প্রতি বিঘায় জমিতে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা লাভ হবে কাউনচাষিদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস কৃষি চাষাবাদ ও মাছ ধরা। উপজেলার চরশৌলমারী, বন্দবেড় ও যাদুরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড়ে ভাঙনের ফলে ফসলি জমি ও ভিটা-মাটি হারিয়েছেন গ্রামবাসী। তারা নদীর বালুচরে ঘর বেঁধে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা কাউন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

আরো পড়ুন :

> কালীগঞ্জে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল
> সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা বুধবার

রৌমারী উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কাউন চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার কাউন চাষ ভালো হয়েছে। খেতের সোনালি রঙের কাউন কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন কৃষকরা।

ফুলুয়ারচর গ্রামের কৃষক আসাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমিতে এবার কাউন চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৮ মণ। বাজারে এক মণ কাউনের দাম ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা যাবে। এক বিঘার কাউন বিক্রয় করে লাভ হবে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।’

খাঁনপাড়া গ্রামের কৃষক আজাহার আলী জানান, চরের বালুমিশ্রিত জমিতে অন্য ফসলের তুলনায় কাউনের চাষ ভালো হয়। কাউন চাষে খরচ কম, সামান্য সেচ দিলেও ফলন ভালো হয়। রাসায়নিক কোনো সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে পাওয়া যায় আশাতীত ফলন। কাউন চাষে পরিশ্রম কম ও লাভ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কাউন চাষ চরাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে।

কুটিরচর গ্রামের যুবক হাফিজুর রহমান, রাসেল মিয়া, রাকিবুল হাসান ও ওমর ফারুক বলেন, ‘চরাঞ্চলের কৃষকরা কাউন শস্য পাটের বস্তায় প্যাকেট করে ঘরে সংরক্ষণ করছে। বর্ষা, বন্যা ও খরার সময় এ এলাকার মানুষের কাছে নগদ অর্থ থাকে না, সে সময় কাউনই একমাত্র ভরসা তাদের। একসময় চরাঞ্চলের লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে কাউনের ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করত। আগে চরাঞ্চলের মানুষ ভাতের বিকল্প হিসেবে কাউনের ভাত খেত। এখন কাউন দিয়ে সুস্বাদু পায়েস, পিঠা, নাড়ুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরিসহ বিদেশে কাউন চাউল রপ্তানি করা হয়। এ কারণে কাউনের চাহিদাও বেশি। এক মণ কাউন বিক্রি করে দুই মণ ধান কিনতে পারেন কৃষক। কাউন এখন চরাঞ্চলের মানুষের কাছে সোনার ফসল।

বন্দবেড় ইউনিয়নের বন্দবেড় ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব পাড় চরাঞ্চলের মাটি কাউন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে কাউন চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বদলে যেতে পারে চরাঞ্চলের দরিদ্র কৃষকের ভাগ্য। কাউন একটি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। কাউন থেকে আমিষ ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ হয়। চরাঞ্চলে কাউনসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করছি।’

স্থানীয় সিএসডিকে এনজিওর নির্বাহী পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, ‘আমার চরাঞ্চলের কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থকরী ফসল কাউন, চিনাবাদাম, মাষকলাই, মুসুর ডালসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের বীজ, সার, নগদ অর্থ, পরামর্শ দেয়াসহ কৃষি প্রদর্শনী, প্লট স্থাপন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠান করে কৃষির টেকসই উন্নয়নে কাজ করছি।’

আগস্ট ১৬, ২০২৩ at ১৩:৩৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নদা/ইর