লিফট ক্রয় দূর্নীতি আড়াল করতে যবিপ্রবি‘তে ৫৪ দিন ধরে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ

যবিপ্রবি। ছবি- সংগৃহীত।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) গত টানা ৫৪ দিন যাবৎ শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। সারা দেশে ৫৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন পুরোদমে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন তখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় কমানোর টুঙক অযুহাত, উপাচার্য ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের আন্দোলনে এই অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নেপথ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ভবনের ১২টি লিফট ক্রয়ের দুর্নীতি ঢাকতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোল দমাতে উপাচার্যের ঘনিষ্ট শিক্ষকগণ এমন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সংকটের সমাধান হচ্ছে না। এমন অবস্থায় তারা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

যবিপ্রবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে কৃচ্ছ্র সাধনের পরিপত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে যবিপ্রবি প্রশাসন ১০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সব বিভাগের ক্লাস শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তে অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বিরোধিতা করে কয়েক দিন বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা কৃচ্ছ্র সাধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব এসি, লিফট ও এসি বাস চলাচল বন্ধের দাবি তোলেন।

আরো পড়ুন :

> শিবগঞ্জে ভুল অস্ত্রোপচারে গৃহবধূর জীবনের সংশয়
> শিবগঞ্জে প্রতারণার দায়ে  দুই ইরানী যুবক আটক

এর মধ্যে ১৮ জুলাই যবিপ্রবি উপাচার্যের ঘনিষ্ট শিক্ষকরা অভিযোগ তোলেন, ১৬ জুলাই কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া সব ভবনের লিফটও বন্ধ করে দেয়। ১৮ জুলাই তারা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের গাড়ি বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে।

এরপর যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ওই দিনই জরুরি সভা করে লাঞ্ছনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ আগস্ট থেকে সব ক্লাস স্বশরীরে হওয়ার কথা ছিল। তবে শিক্ষকরা আসেননি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েন। তারা সেশনজটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেমিস্টার ফি কমানো; নবনির্মিত একাডেমিক ভবনে লিফট স্থাপন; দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতিসহ ১২ দফা দাবিতে গত ১৭ জুন বিকেল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬টি বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বহনকারী বাসের চাবি কেড়ে নেওয়া ও অফিসকক্ষের এসি বন্ধ করে দেওয়ার এক অভিযোগ তুলে শিক্ষক সমিতির ডাকে গত ২২ জুলাই থেকে ধর্মঘট পালন করছেন শিক্ষকেরা। এর আগে আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের থামাতে ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে নবনির্মিত একাডেমিক ভবনে লিফট স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

যদিও এক পক্ষের শিক্ষকরা বলছেন, এগুলো মনগড়া, টুনকো এক অযুহাত। তাদের দাবি সারা দেশে ৫৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন পুরোদমে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন, তখন যবিপ্রবি ব্যক্তিস্বার্থে লিফট দূর্ণীতি আড়াল করতে এমন কৌশল নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সূূত্রের দাবি ফলে কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে ৫৪ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এদিকে, এরই মধ্যে ক্যাম্পাস শুন্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক পদে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নেপথ্যে রয়েছে লিফট ক্রয় দূর্নীতিসহ নিয়োগ বাণিজ্য বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা বলেন, অনলাইনে ক্লাসের ঘোষণার পর শিক্ষকরা গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্লাস বর্জন করেছেন। অনলাইন ক্লাসের প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করেছিলেন, তাদের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবি জানানো হবে।
এদিকে যবিপ্রবির সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সংকটের সমাধান হচ্ছে না। এর পেছনে ভিন্ন কারণও থাকতে পারে। কারণ, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবনে লিফট স্থাপন চেয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। উপাচার্য আশ্বাস দিলেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সেই লিফট স্থাপন করা যায়নি। শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামতে পারেন– এমন আশঙ্কায় ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে উপাচার্য-ঘনিষ্ঠরা ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি নিতে পারেন।

যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মো. গালিব বলেন, শিক্ষার্থীরা গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা অপমানিত হয়েছেন। অপমান লাঞ্ছনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। ওই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। সুষ্ঠু বিচার হলে শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে, যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মো. গালিব বলেন, লিফট ক্রয় দুর্নীতির সঙ্গে আন্দোলনের কোনো যোগসূত্র নেই।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য চলতি বছরের ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানদের বৈঠকে ১০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষা মূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লিফট ও বাস বন্ধ করে দেয়। যাতে শিক্ষকেরা অপমানিত হয়ে সব প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন। চিকিৎসাজনিত কারণে দেশের বাইরে থাকায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেননি। ক্যাম্পাসে ফিরে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ নেবেন।

আগস্ট ১০, ২০২৩ at ১৯:৪৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর