ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর বেডে যন্ত্রনায় ছটফট করছে রাগী, নার্স রয়েছেন ঘুমিয়ে

গত এক বছরে আমুল পরিবর্তন হয়েছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। বেড়েছে সেবার মান। সেবা প্রদানে যুক্ত হয়েছে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্র। তবে অন্তঃ বিভাগে চিকিৎসকদের কাছে আধুনিক সেবা পেলেও, নার্সদের কাছ থেকে সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। হাসপাতালের বেডে যন্ত্রনায় ছটফট করছে রাগী, নার্স রয়েছেন ঘুমিয়ে।

যন্ত্রনায় কাতরালেও, দেখা পাওয়া যায় না দায়িত্বরত নার্সদের। রোগী এবং তাদের স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ হরহামেশায় মিলছে নার্সদের বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন :

> শোকাবহ আগস্টে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের মাসব্যাপি কর্মসূচি ঘোষণা
> চৌগাছার সন্তান ব্যারিস্টার উজ্জ্বলকে মাড়ুয়া স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকদের অভিনন্দন

এমনই একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজিয়া সুলতানা। রোগীদেরকে কাঙ্খিত সেবা না দেওয়া এবং তাদের স্বজনদের সাথে খারাপ আচরণ করা সহ নানা রকম অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। শুধু তিনি নন, তার মত আরো বেশ কয়েকজন নার্সের বিরুদ্ধে রোগীদের সেবা না দেওয়ার অভিযোগ হরহামেশাই মিলছে রোগী ও তাদের পরিবারের কাছে থেকে। দিনে নার্সদের কাছে থেকে কিছুটা সেবা পাওয়া গেলেও, রাতে যেন তারা রুপ পাল্টে ভয়ংকর হয়ে উঠে। সেবা দিতে যেন বেশ অনিহা তাদের।

রবিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তঃ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রাজিয়া সুলতানা ও ফাহিমা খাতুন। ওইদিন মধ্য রাতে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় নার্সদের বসার নির্দিষ্ট রুমটি বাহির থেকে তালাবন্ধ। তবে দরজার ফাঁকা দিয়ে দেখা যায় মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছেন স্টাফ নার্স রাজিয়া সুলতানা। পাশের আরেকটি রুমে ভিতর থেকে দরজা আটকিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন দায়িত্বরত আরেক স্টাফ নার্স ফাহিমা খাতুন। ফাহিমা নার্স রুমের দরজায় তালা টিপে পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন।

হাসপাতালটিতে গত শনিবার থেকে পেটের ব্যথা সহ বেশ কয়েকটি সমস্যা নিয়ে মহিলা ইউনিটে ভর্তি আছেন পৌর এলাকার ইসলামপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ এক নারী। রবিবার দিবাগত রাতে হঠাৎ তার পেটের ব্যথা বেশি হয়। এসময় চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে ছোটাছুটি করে তার গর্ভবতী মেয়ে ফাতেমা বেগম।

ফাতেমা বলেন, ‘আমার মায়ের পেটের ব্যথা বেশি হবার সাথে সাথে আমি নিচের জরুরী বিভাগে যাই। সেখানে থাকা দায়িত্বরত এক ব্যক্তি আমাকে বলেন উপরে নার্স আছে তাদেরকে বলেন। তারা রোগীর সমস্যা জটিল মনে করলে দায়িত্বরত চিকিৎসককে ডাকবে। পরে আমি দ্বিতীয় তলায় এসে দেখি নার্সের রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকির পর তার বের হলে, আমি আমার মায়ের সমস্যা তাকে বলি। তখন তারা বলে সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে। তবুও তারা আমার মাকে দেখেনি। দুইতিনবার আমি তাদের কাছে গিয়েছি।’

অভিযুক্ত স্টার্ফ নার্স রাজিয়া সুলতানা (বামে) এবং ফাহিমা থাতুন (ডানে)।

একই সময় হাসপাতালটির পুরুষ ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলের সাথে অবস্থান করছিলেন বাবা আনোয়ার হোসেন। মধ্যরাতে ছেলের হাতে ক্যানোলা লাগানো স্থানটি ফুলে যায় এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলে যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। সেসময় একাধিবার নার্সদের কাছে সহযোগীতার জন্য মনে গলেনি দায়িত্বরত নার্স রাজিয়া সুলতানা ও ফাহিমা আক্তারের।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছেলের এই রকম সমস্যা দেখে নার্স এবং চিকিৎসকের কাছে ৪ বার গিয়েছি। নার্সরা কেও ছিল না। তারা ঘরের ভিতর দরজা আটকে ঘুমাচ্ছিল। তাদের দরজায় ডাকার পর দায়িত্বে থাকা নার্সকে অনুরোধ করে বললাম আমার ছেলেটাকে একটু দেখেন। প্রয়োজনে ক্যানোলাটা খুলে দেন। কিন্তু নার্স বললো এখন হবে না। সকালে ডাক্তার এসে দেখবে।’

রোগীদের এ সব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল আনোয়ার কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘আমার চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। হাসপাতালে রাদেত দায়িত্ব পালনের সময় কোন ভাবেই ঘুমানোর সুযোগ নেই। আমি উক্ত নার্সদের সাথে কথা বলবো। অভিযোগের সতত্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগস্ট ০৩, ২০২৩ at ২২:২৬:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর

ফটো ক্যাপশন- অভিযুক্ত স্টার্ফ নার্স রাজিয়া সুলতানা (বামে) এবং ফাহিমা থাতুন (ডানে)।