বিয়ের ৩ দিন আগে ঘটকের ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা নববধূ , টাকায় রফাদফার চেষ্টা!

ঝালকাঠির রাজাপুর সদর ইউনিয়নের চাড়াখালি গ্রামে বিয়ের ৩ দিন আগে হালিম সিকদার (৪৫) নামে এক ঘটকের ধর্ষণের শিকার হয়ে কিশোরী নববধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে স্বামীর ঘর ছাড়া হয়েছেন। সোমবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে ওই নববধূ এ অভিযোগ করে ধর্ষকের বিচার ও গর্ভের সন্তান রক্ষা এবং তার পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত ও তার স্বজনরা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে এ ঘটনা রফাদফা করে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভূক্তভোগী ওই কিশোরী উপজেলার মধ্য ফুলুহার মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করতো ওই ছাত্রী। বিয়ের বয়স না হওয়ায় নোটারী পাবলিক করে এ বছরের গত ২৪ এপ্রিল সামাজিক ভাবে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। অভিযুক্ত হালিম দুই সন্তানের জনক এবং উপজেলার বড় কৈবর্তখালি এলাকার মৃত আজিজ সিকদারের ছেলে। তিনি পেশায় গাছ ব্যবসায়ী পাশপাশি এলাকায় ঘটকালী করে।

আরো পড়ুন :

> ঠাকুরগাওয়ে জমি দখলকে কেন্দ্র করে মারপিট ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ
> রাজাপুরে ভিজিএফ স্লিপ জাল করলেন ইউপি সদস্য মরিয়ম

উপজেলা শহরের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া কিশোরী নববধূ অভিযোগ করে জানান, তার বিয়ের তিন দিন আগে ২১ এপ্রিল ঘরে কেহ না থাকার সুযোগে ঘরের দরজা ভেঙে তার রুমে নিয়ে ঘটক হালিম তাকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে এবং এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়। কিশোরী এ বিষয়টি ঘটনার দিন তার নানা ও নানীসহ স্বজনদের জানালে তারা আমলে না নিয়ে উল্টো কাকে চুপ থাকতে বলেন। ধর্ষণের শিকার হওয়ার তিনদিন পর ওই ঘটকের মাধ্যমে ঠিক হওয়া পাত্রের সাথে বিয়ে হয় ওই কিশোরীর। বিয়ের বয়স না হওয়ায় নোটারী পাবলিক করে উপজেলার ছোট কৈবর্তখালি গ্রামের নুরুজ্জামানের সাথে এ বছরের ২৪ এপ্রিল সামাজিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করে স্বামী বাড়িতে তুলে দেয়া হয় ওই ছাত্রীকে।

বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ধরা পরলে স্বামীর মারধর ও পরিবারের চাপে পরে হালিম কর্তৃক ধর্ষণের বিষয়টি স্বামী ও তার স্বজনদের কাছে জানাতে বাধ্য হন কিশোরী নববধূ। এরপর নববধূর নানাসহ বাড়ির লোকজন গিয়ে ওই নববধূকে বাড়িতে এনে উপজেলার শহরের ২টি ক্লিনিকে ১৫ জুন ও ১৮ জুন আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে ৮ সপ্তাহ ৪ দিনের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি ধরা পরে এবং ধর্ষনের বিষয়টি ওই নববধূর কাছ থেকে জানতে পেরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বললে সোমবার সকালে স্থানীয় একটি মহল অভিযুক্ত হালিম সিকদারসহ উভয় পক্ষকে ডেকে নববধূকে চাপ প্রয়োগ করে ২ লাখ টাকায় রফাদফার চেষ্টা করলে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়।

লোকলজ্জা ও আত্মীস্বজনের সমযোতার চাপে বাধ্য হয়ে সোমবার দুপুরে ওই নববধূ উপজেলা শহরের এক আত্মীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ওই নববধূ ৬৯ দিনের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামী বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে উপজেলা শহরের এক নিকটাত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে সাংবাদিকরা গেলে ওই নববধূ ধর্ষক হালিমের বিচার দাবি করেন ও গর্ভের সন্তান রক্ষা এবং তার পিতৃ পরিচয়ের স্বীকৃতির দাবি জানান। ওই ছাত্রীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মহিলা অধিদপ্তর ও ব্র্যাকসহ সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।

স্থানীয় ইদ্রিস ফরাজি জানান, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষ তার কাছে গিয়েছিলো। তিনি এ বিষয়টি শালিশ মিমাংসা করা সম্ভব না বলে জানিয়ে দেয়। দোষী ব্যক্তির আইনের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি কোন শালিশ বা সমঝোতার চেষ্টা করেননি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হালিম সিকদারের বক্তব্যের জন্য মোবাইলে কল দিলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নিজে দোষী না দাবি করে সামানাসামনি কথা বলবেন বলে জানান। পরবর্তীতে তাকে কল দিলে তিনি কল রিসিভ না করে নম্বর বন্ধ করে রাখেন।

রাজাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় জানান, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি বা জানায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জুন ২৭, ২০২৩ at ২১:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোনাহাঈ/ইর