কেউ থাকতে দেয়না তাই তিন মাস ধরে পুকুরে মাঁচা বানাইয়া থাকি কোথাও জায়গা পাইনা

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজ পাশা গ্রামের অসহায় বিধবা নারী  মিনারা বেগমের বাবার বাড়ি কোন জমি না থাকায়।কেউ তাকে থাকতে দেয় ন। তিনি থাকার মতো কোথাও জায়গা না পেয়ে নলছিটি পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় মায়ের জমিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশ খুটি দিয়ে মাঁচা বানিয়ে পলিথিন দিয়ে দীর্ঘ তিনমাস ধরে বসবাস করছেন মিনারা বেগম ও তার নাতি নিরব সরদার ।

মিনারা বেগমের বিবাহ হয়েছিল ফরিদপুরে তার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে সেখানে যা জমি ছিল তা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজ হলো না পরিশেষে স্বামীর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি সব হারিয়ে শূন্য হয়ে পরেন। সেখানে থাকার মতো আর কোন জমি নাই। তাই তিনি মামা বাড়িতে তার মায়ের জমিতে ঘর উত্তোলন করে বসবাস করতে চেয়েছিলেন।

অসহায় বিধবা মিনারা বেগম  বলেন, মোর স্বামী মইরা গেছে ১৫ বছর অইছে। মোর একটা নাতি আছে ও মোর লগে থাকে। এই নাতিরে লইয়া অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি। একটা বাসা ভাড়া নিছিলাম হেয়াও পানিতে তলাইয়া যায় তাছাড়া মোর আয় রোজগারের কেউ নাই মুই বাড়া দিতে পারছি না। এর আগে মোর ভাই বাসা ভাড়ার টাকা দিতো কিন্তু এহন দেওয়া বন্ধ করে দিছে এহন মুই কই যামু, মোর যাওয়ার কোন পথ দেহি না। পরে চিন্তা করলাম সবার কাছে চাইয়া বাঁশ খুটি আইনা এই পুহোইরের (পুকুর) মধ্যে মাঁচা বানাইয়া থাহি। মোরে এই জায়গাটা দিবে না তিনবছর ধরে মামাতো ভাইগো দারে ঘুরতে আছি। মোর মায়ের জায়গা পাইমু মামাবাড়ি। কিন্তু এরপরও মোরে বাড়িতে ঘর বানাইতে দেয়নায়।

যহন তাদের দারে গেছি মোরে ধাক্কা মাইররা হালাইয়া দিছে। বাঁশ খুটি ভাইঙ্গা হালাইয়া দিছে ঘর বানাইতে দেয় নায়। এরপর মোর মামাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান কয় যদি জায়গা নেন তাহলে উপরে দিমু না পুকুরের মধ্যে আছে সেখানে নেন।পরে মুই কি করমু মোর কপালে আছে এইডা। তাই পুকুরের মধ্যে বাঁশখুটি দিয়া মাঁচা বানাইয়া তিন মাস ধরে নাতিরে লইয়া থাহি।

মিনারা বেগম আরও বলেন, মোর কোন ছেলে সন্তান নাই। একটা মাইয়া আছে তারও জামাই তাকে ছেড়ে দিছে। মোর মেয়ে চিটাগং থাকে। মুইও তিনবছর হয়েছে নলছিটিতে আইছি মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে গেছি কিন্তু কোন কিছুই পাইনি। সরকারি ঘরের জন্য দুইবার আবেদন করেছি কিন্তু তাও কপালে জোটেনি। তাছাড়া বিধবা ভাতার জন্য গেছি তা বলছে কোটা খালি নাই।

মোর নাতি নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অনেক কান্নাকাটি করে ঘর নাই এভাবে থাকা যায় না। পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। ও যে চট্টগ্রাম গিয়ে লেখাপড়া করবে তার মায়ের কাছে সেখানে অনেক খরচ বেশি। এহন যদি কেউ মোরে সাহায্য সহযোগিতা বা থাকার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে নাতিটাকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারমু।

নলছিটি পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিধবা মিনারা বেগম তার নাতিকে নিয়ে ৩ মাস ধরে পুকুরে মধ্যে বাঁশ খুটি দিয়ে মাঁচা বানিয়ে পলিথিন ছাউনি দিয়ে বসবাস করছেন। আসলে একটা মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বসবাস করছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার কাছে আসলে আমি ফেইসবুক লাইভ দিলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। পরে ঢাকার জসিম ভাই নামে এক সাংবাদিক তাদের দুইবান টিম কিনে দিয়েছে। কিন্তু তার দরকার থাকার মতো একটা ঘর।

এবিষয়ে মিনারা বেগমের মামাতো ভাইদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি তাই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নলছিটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো.  মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, মিনারা বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে ওনি যদি ভাতা পাওয়ার প্রাপ্য হয় তাহলে অবশ্যই ভাতার আওতায় আনা হবে।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মিনারা বেগমের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি ওখানে যাবো গিয়ে তার অবস্থা দেখবো। তার জন্য সরকারি সহয়তা করা হবে।

দেশদর্পণ/সুআ/রাহাঈ/ইর