কোটি টাকা কাবিন করায় স্ত্রীকে হত্যা

রাজধানীর দক্ষিণখানে একটি বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা কানাডা প্রবাসী গৃহবধূ আফরোজা আক্তারের (৪২) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

গত ২৬ মে ঐ নারীকে খুন করে বাড়ির পাশে মাটিচাপা দিয়ে তার স্বামী আশরাফুল ইসলাম ২৮ মে কানাডায় পালিয়ে যান। কোটি টাকা কাবিন করায় ক্ষোভে স্ত্রীকে খুন করেন আশরাফুল।

বুধবার রাতে দক্ষিণখান দক্ষিণপাড়া বৈশাখী মোড়ের ঘটনাস্থল থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোছাম্মদ রেজিয়া খাতুন।

আরো পড়ুন :
> দুর্নীতির আখড়া দারুল ফালাহ ছালেহিয়া সাহেব আলী আলিম মাদ্রাসা
> স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা

তিনি আরো জানান, হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে তাকে নগদ ১৫ লাখ টাকা অফার করে ঘাতক আশরাফুলের স্বজনেরা এবং তার পরিবারের দুই সদস্যকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। আশরাফুলের পক্ষ থেকেই এসব প্রস্তাব আসে। তবে লাশ উদ্ধারে সেই প্রস্তাবে শুরুতে রাজি হওয়ার অভিনয় করতে থাকেন এসআই রেজিয়া। পরে আফরোজার লাশ মাটিচাপা দেওয়ার স্থানটি ভিডিও কলের মাধ্যমে আশরাফুল দেখিয়ে দিলে তার বাবা ও খালাসহ মোট চারজনকে আটক করেন তিনি।

ঘটনার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, কানাডায় থাকা অবস্থায় অনলাইনের মাধ্যমে আশরাফুল ও আফরোজার পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। দুজনে বিয়ে করেন। তারা বাংলাদেশে এসে এক কোটি টাকার কাবিন করেন।

আফরোজার আগের ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আশরাফুলেরও আগের ঘরে এক ছেলে আছে।

আড়াই মাস আগে আগের ঘরের এক মেয়েকে নিয়ে আশরাফুলের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন আফরোজা। হত্যাকাণ্ডের দিন সেই মেয়েকে এক আত্মীয়ের সঙ্গে সিনেমা দেখতে পাঠিয়ে দেন আশরাফুল।

দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোছাম্মদ রেজিয়া খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ২৯ মে আফরোজার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি নিখোঁজে ডাইরি করা হয়। সেটার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিখোঁজ আফরোজার খোঁজে নেমে পড়ি। তদন্তের এক পর্যায় আশরাফুলের বাবা ও তার খালা পান্নাসহ তিনজনের সাথে দক্ষিণপাড়া এলাকায় তাদের বাড়ির এক রুমে এই ব্যাপারে কথাবার্তা চলতে থাকে। পুলিশের কৌশলের কারণে তারা এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করেন। তখন তারা আমাকে নগদ ১৫ লাখ টাকা অফার করে এবং আমার দুইজন লোককে কানাডায় নিয়ে যাবে বলে প্রস্তাব দেয়। পরে তাদের সহযোগিতায় কানাডায় থাকা আশরাফুলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয়। তার কাছে কৌশলে টাকার প্রস্তাবে রাজি হয়ে লাশটা কোথায় জানতে চাইলে এক পর্যায়ে আশরাফুল ভিডিও কলের মাধ্যমে বাড়ির পাশে আফরোজাকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া সেই স্থানটি দেখিয়ে দেয়।

এসআই আরো বলেন, আফরোজা আশরাফুলের চতুর্থ স্ত্রী। এক মাস আগে কাবিন হয় তাদের। কাবিনের টাকা ধার্য করা হয়েছে ১ কোটি টাকা। এই কারণেই রাগান্বিত হয়ে মাথায় বঁটি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন আশরাফুল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসে স্বামীসহ বাবার বাড়ি নীলফামারী ডোমার উপজেলায় অবস্থান করেন আফরোজা। পরে তারা সেখান থেকে বুধবার ঢাকার দক্ষিণখানে আশরাফুলদের বাসায় আসেন। শুক্রবার (২৬ মে) এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ড সহ মাটিচাপা দেওয়ার পুরো পরিকল্পনা কয়েকজন মিলেই করেছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে আফরোজাকে হত্যা করা হয়। পরে আশরাফুল পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতায় লাশ বাসার পাশে মাটি খুঁড়ে চাপা দেন। ২৮ শে মে তিনি বীরদর্পে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

এসআই আরো বলেন, আশরাফুলের চতুর্থ স্ত্রী আফরোজা। এক মাস আগে কাবিন হয় তাদের। কাবিনের টাকা ধার্য করা হয়েছে ১ কোটি টাকা। এই কারণেই রাগান্বিত হয়ে তার স্ত্রীকে মাথায় বঁটি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন আশরাফুল।
পরদিন (২৯ মে) আফরোজার খোঁজে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। ৩১ মে মাটিচাপা অবস্থায় আফরোজার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত নারীর শরীরে মাথাসহ বিভিন্ন জায়গায় মোট পাঁচটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় আশরাফুলের বাবা ও খালাসহ মোট চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।

জুন ০১, ২০২৩ at ১৯:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোরইমি/ইর