দুর্নীতির আখড়া দারুল ফালাহ ছালেহিয়া সাহেব আলী আলিম মাদ্রাসা

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর তুরাগের দারুল ফালাহ ছালেহিয়া সাহেব আলী আলিম মাদ্রাসা । এমপিওভুক্তি এই মাদ্রাসাটিকে পুঁজি করে একটি মহল মেতে উঠেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহা-উৎসবে ।

নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, মাদ্রাসা ফান্ডের টাকা আত্মসাত, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, ডিউটি না করেও বেতন উত্তোলন, একজনের ডিউটি আরেকজনে করা, মাদ্রাসার বিদ্যুতের মিটার থেকে অন্যত্র সংযোগ দেওয়া, পানি বিক্রি এমনকি মাদ্রাসার জমি নিয়েও ভয়াবহ প্রতারণাসহ অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আবু জাফর মোঃ সাদেক হাসান ও স্বঘোষিত সভাপতি আব্দুল মোতালিব মিলে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে । আর এই মাদ্রাসাটিকে পুঁজি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা । তাদের এতসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন কেউ কোন কথা না বলতে পারে এই জন্য তারা গড়ে তুলেছেন একটি পেটোয়া বাহিনী । এই বাহিনীর কাজ হোল কেউ যদি কোন প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে তাদের পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া । তাই তাদের ভয়ে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পায়না ।

আরো পড়ুন :
> কুবিতে ‘শরীয়তপুর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনে’র নতুন নেতৃত্বে মামুন -ইবাদ
> পাইকগাছায় পাগলীটা মা হয়েছে বাবা হয়নি কেউ

স্বঘোষিত সভাপতি আব্দুল মোতালিব একজন বড় মাপের বাটপার । তাই তিনি বাটপারির মাধ্যমেই আবার সেজেছেন মাদ্রাসার জমি দাতা । কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে এবং আর এস পর্চা মোতাবেক স্বঘোষিত সভাপতি আব্দুল মোতালিব মাত্র ৫ শতাংশ জমির মালিক । কিন্তু তিনি মাদ্রাসার নামে প্রতারনার মাধ্যমে দিয়েছেন ১৫ শতাংশ আবার তারই ভাতিজা আলম চানের নিকট বিক্রির জন্য বায়না নিয়েছেন ৫ শতাংশর । এমন প্রতারনা করেও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন ।

সভাপতি ও প্রিন্সিপ্যাল নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করেই তাদের নিকটতম কয়েকজনকে চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । তাদের মধ্যে শুকুর আলীর ছেলে আনোয়ার, দারোয়ান আজিজুল, শুকুর আলীসহ সভাপতির মেয়ের জামাই ও ভায়রা অন্যতম । দুর্নীতির আরেক ধাপ হোল কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক নির্বাচনি (টেস্ট) পরীক্ষায় এলাও না হলে ঐ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষার সুযোগ করে দিয়ে তাকে পাশ করিয়ে দেন ।

আবার শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কোন কর্মকর্তা এই মাদ্রাসা পরিদর্শনে আসলে আগে থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী এনে মাদ্রাসা সমাগম করে রাখেন প্রিন্সিপ্যাল ।

এই ধরণের দুর্নীতির কারনে ইতি পূর্বে এলাকার লোকজন উক্ত মাদ্রাসায় আগুন দিতে চেয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে । আর এই পরিক্ষা কেলেংকারির কারনে বিগত কয়েক বছর আগে এই মাদ্রাসায় মাধ্যমিক পরিক্ষার কেন্দ্র বাতিল করা হয় । আর সভাপতি ও প্রিন্সিপ্যালের এহেন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে কয়েকজন ভুক্তভোগী মামলাও করেছিল বলে জানান অনেকে । প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ও সভাপতি মিলে মাদ্রাসার ভিতরেই অবৈধ ভাবে গড়ে তুলেছেন নামমাত্র একটি এতিম খানা । যা দেখিয়ে দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে অনুদানের নামে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা । আর এইসব দুর্নীতির টাকায় তারা দুইজনে বনে গেছেন রাতারাতি কোটি পতি ।

ইতিমধ্যে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আবু জাফর মো: সাদেক হাসান তার গ্রাম এলাকায় কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পতি এবং এই মাদ্রাসার নিকটেই কিনেছেন ২২ শতাংশ জমি এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে ।

একটি সূত্রে জানা যায়, প্রিন্সিপাল আবু জাফর মো: সাদেক হাসান মাদ্রাসা ভবনের ৩টি রুম নিয়মবহির্ভূত ভাবে দখল করে বানিয়েছেন নিজ বাসভবন । আলম চান নামে এক ভুক্তভোগী প্রতিবেদককে জানান, প্রায় ৭ বছর পূর্বে মাদ্রাসার পাসেই তার কিছু জমি এওয়াজ বদলের কথা বলে নিয়েই তার জমির উপর একটি ভবন নির্মাণ করেন । কিন্তু ৭ বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত তার সেই জমির পরিবর্তে কোন জমি দেননি মাদ্রাসার সভাপতি ও প্রিন্সিপল । ভুক্তভোগী আলম চান একাধিকবার তার জমির পরিবর্তে জমি চেয়ে আজ পর্যন্ত জমি পাননি বলে দাবী করেন । জমি চাইতে গেলেই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আবু জাফর মো: সাদেক হাসান ও সভাপতি আব্দুল মোতালিব জমি দেই দিচ্ছি বলে বিভিন্ন রকম তালবাহানা করেন । অপর দিকে সভাপতি আব্দুল মোতালিব ৫শতাংশ জমি বিক্রির কথা বলে কয়েক বছর আগে আলম চানের নিকট থেকে বায়না বাবদ টাকা পয়সা নিয়ে, পরে ঐ জমি রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে বিভিন্ন রকম তালবাহানা করে।

তালবাহানা করার কারনে ঢাকার সি এম এম আদালতে আলম চান বাদি হয়ে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ৫৪/২০২২ইং । বর্তমানে উক্ত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে । তাই তাদের এহেন কার্যকলাপে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সচেতন মহলের । তারা এই ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ প্রিন্সিপাল আবু জাফর মো: সাদেক হাসান ও স্বঘোষিত সভাপতি আব্দুল মোতালিবের অপসারণ চায় এবং তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান ।

উপরোক্ত অভিযোগের বিষয় জানতে প্রিন্সিপাল আবু জাফর মো: সাদেক হাসানের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপরোক্ত অভিযোগ সব সঠিক নয় । তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, গার্ড শুকুর আলী নিয়মিত ডিউটি করেননা এবং আলম চানের জমির পরিবর্তে জমি দেওয়া হয়নি বলে স্বীকার করেন ।

জুন ০১, ২০২৩ at ১৮:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোমুহো/ইর