সুলভ মূল্যের পণ্য যেন সোনার হরিণ

ছবি- সংগৃহীত।

সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়। ভোর থেকে দাঁড়িয়েও অনেকে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যান। রাজধানীর মুগদা থেকে তোলা – মাহবুব হোসেন নবীন

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে রিকশা চালিয়ে শ্যামলীর দিকে যাচ্ছিলেন মোজাম্মেল হক। পথে আদাবরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই ভ্রাম্যমাণ গাড়ির পেছনে ছোট জটলা দেখে থামলেন তিনি। গাড়ির গায়ে লেখা গরুর মাংস ৬৪০ টাকা কেজি। এর পর বিক্রেতার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হলেন সত্যিই গরুর মাংস এ দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা? পরে পকেটে হাত দিয়ে হতাশ হলেন এ রিকশাচালক।

বিমর্ষ চেহারায় রিকশার প্যাডেল ঘোরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মাংস নিলেন না এমন প্রশ্নে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মোজ্জাম্মেল বলেন, ‘সে সাধ্য কি আর আমাদের হবে?’ আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে মেয়েটা বলছে, গরুর মাংস খাবে। ও ক্লাস ফাইভে পড়ে। এখানে বাজারের চেয়ে দাম কম। কিন্তু ৬৪০ টাকায় কেনার সামর্থ্যও আমাদের নেই।

আধা কেজি মাংস নিয়ে চারজনের সংসারে কার মুখে দেব?’ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ২০ স্থানে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকায় (বাজারমূল্য কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা), খাসি প্রতি কেজি ৯৪০ টাকায় (বাজারমূল্য ১,১০০ টাকা), ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকায়, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকায় (৯০ টাকা) এবং ডিম প্রতি পিস ১০ টাকায় (বাজারে ১২ টাকা) কিনতে পারবেন। তবে গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার ২০০ টাকা, প্রতি লিটার দুধ ৬০ টাকা ও এক হালি ডিম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

আবার এক জায়গায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও ছিল অন্য জায়গায়। এসব তদারকি করতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও মাঠে দেখা যায়নি। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ময়ূর ভিলার বিপরীতে সড়কে ভ্রাম্যমাণ বিক্রিয় কেন্দ্রে ক্রাচে ভর দিয়ে এসেছেন মজিবুল হক। উদ্দেশ্য কিছুটা কম মূল্যে মুরগি ও কিছু ডিম কেনা। প্রতি কেজি মুরগি ৩৪০ টাকা দেখে শুধু এক ডজন ডিম নিয়েই বাড়ি ফেরেন তিনি। তবে মজিবুল কেনার পর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ২৫ জনের ভাগ্যে তাও জোটেনি।

রাজধানীর গ্রিন রোডে নিজস্ব বাড়ি আছে শহিদুল পাটোয়ারীর। তিনি ডিম কিনেছেন ৩০টি, গরুর মাংস ১ কেজি এবং মুরগির মাংস ১ কেজি। খাসির মাংস শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কিনতে পারেননি। খামারবাড়িতে প্রীতি সুলতানা নামের এক ক্রেতা কিনতে এসে না পেয়ে ফিরে গেছেন। আর তেজগাঁও থেকে আসা তাসলিমা বেগম কিনতে পেরেছেন শুধু মুরগি। আতিকুর রহমান ব্যক্তিগত কাজে রিকশায় জিগাতলা গিয়েছেন। যাওয়ার পথে মোহাম্মদপুরে গাড়ি দেখে ভেবেছিলেন, কাজ শেষে আসার পথে মাংস কিনবেন। কিন্তু এক ঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখেন, মাংস শেষ। পরে তিনি এক কেজি দুধ সংগ্রহ করেন।

রাজধানীর তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী গুলশান আরা বেগম সুলভমূল্যে পণ্য কিনতে সকাল ১১টায় খামারবাড়িতে পৌঁছান। এসে জানতে পারেন, গরু ও খাসির মাংস শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে ২ কোটি মানুষের জন্য ২০টি গাড়ি খুবই কম। শুক্রবার ছুটির দিনের শুরুতে খামারবাড়ি (ফার্মগেট) স্পটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় পণ্যবাহী ফ্রিজিং গাড়ি নির্ধারিত স্থানে থাকার কথা থাকলেও গাড়ি এসেছে সাড়ে ৯টায়।

জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর) গিয়ে দেখা যায়, জাপান গার্ডেন সিটির সামনে নির্ধারিত স্থানে ফ্রিজিং গাড়িটি নেই। কিছুটা দূরে এগিয়ে আদাবর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়িটির দেখা মিলেছে। তবুও স্বস্তি: খামারবাড়িতে চাকরিজীবী আসফাক এলাহী লাইনের মাঝামাঝিতে ছিলেন। সকাল ১০টার মধ্যে দুধ, ডিম ও মাংস কিনেছেন। তিনি বলেন, গরুর মাংস বাইরে ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।

এখানে কম দামে বিক্রির কারণে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে। সময় পেলে পরে আবারও আসব। মোহাম্মদপুরের গৃহবধূ আর্সিয়ানা বেগম মাংস, দুধ ও ডিম সংগ্রহ করতে পেরে বেশ খুশি। খামারবাড়িতে চাকরিজীবী আসফাক এলাহী লাইনের মাঝামাঝিতে ছিলেন। সকাল ১০টার মধ্যে দুধ, ডিম ও মাংস কিনেছেন। তিনি বলেন, গরুর মাংস বাইরে ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। এখানে কম দামে বিক্রির কারণে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে।

সময় পেলে পরে আবারও আসব। মোহাম্মদপুরের গৃহবধূ আর্সিয়ানা বেগম মাংস, দুধ ও ডিম সংগ্রহ করতে পেরে বেশ খুশি। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে সংসার সামাল দেওয়া কঠিন। এখন কিছুটা হলেও খরচ কমবে। দুধ, মাংস ও ডিম পেয়েছি। সবই টাটকা মনে হচ্ছে। বাজারের চেয়ে ভালো।

আরো পড়ুন :
> রাত সাড়ে ১০টায় এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে পুরো দেশ
> বিশ্বের ২৩০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, এটি আমাদের কাজ না। তার পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে করোনার সময় থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে পণ্য দিয়ে সহায়তা করছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। পণ্যের দামের বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তার পরও আমরা বাজারের চেয়ে প্রতিটি পণ্য কমে দিচ্ছি। ঢাকার দুই কোটি মানুষকে এ সেবা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। তার পরও সাধ্য পরিমাণ চেষ্টা করছি। বাকি বড় ব্যবসায়ীদেরও এ রকম উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

মার্চ ২৫, ২০২৩ at ১০:১৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সকা/সুরা