যা ইচ্ছা তাই কর তোদের প্রটেকশন আমি দিবো: ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা

ছবি- সংগৃহীত।

নবীন ছাত্রীকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক, হল কর্তৃক, শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল ও ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীর নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে স্ব-স্ব তদন্ত কমিটি। একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

তবে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নির্যাতনের মূল হুকুমদাতা যে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন অন্য অভিযুক্তরা। একাধিক অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব অভিযুক্তরা বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা আপু আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে বলে প্রত্যেকে এক ঘন্টা করে ফুলপরীকে রুমে ডেকে র‌্যাগ দিবি। যা ইচ্ছা তাই করবি। যত কিছু হবে সব আমি দেখবো। আমরা উনাকে বলি এগুলো করা তো ঠিক হবে না আপু। পরে উনি আমাদেরকে বড় বড় চোখ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। পরে অন্তরা আপু বলেন, ‘যা বলছি তাই কর। দরকার হলে ফুলপরীকে মেরে ফেলবি, আমি লাশ গুম করে দেবো। এরপরে কিছু হলে আমি একাই দেখব, তোদের কিছু ভাবতে হবে না।

এসব অভিযুক্তরা আরও জানান, ‘ঘটনার পর অন্তরা আপু আমাদের বলেন বাইরের কাউকে কিছু জানাবি না। পরে উনি জোরপূর্বক আমাদের মোবাইল থেকে কল ও মেসেজ সব ডিলিট করে দেন।’ তদন্ত কমিটির কাছে স্বাক্ষাৎকারে যাওয়ার সময় আমাদের অন্তরা আপু বলেন, ‘আগে আমি বাঁচি, পরে তোদেরকে বাঁচাবো।

এদিকে ভুক্তভোগীকে নির্যাতনের মূলহোতা যে অন্তরা, এবিষয়ে ভুক্তভোগী বলেন, অন্তরা আপু আমাকে নিজেই ডেকে নিয়ে তার মেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছে। তার মেয়েরাও নির্যাতনের সময় বলেছে অন্তরা আপুর নির্দেশেই তোকে মারা হয়েছে। তা না হলে তোকে আমরা চিনতামই না।

এর আগে গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র‌্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মীম ও হালিমা আক্তার উর্মীসহ কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

পরে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরার পৃথক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইদিনে পৃথকভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও শাখা ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক।

পরে গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কমিটির সদস্য সহকারী প্রক্টর শাহবুব আলম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এদিকে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে উচ্চ আদালতের আদেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি সূত্র বলছে, সত্যতা পাওয়া গেছে ছাত্রীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের। শনাক্ত করা হয়েছে নির্যাতনকারীদের। এছাড়া মোট ১০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে শতাধিক পৃষ্ঠার সংযুক্তি জমা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এসব প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় প্রতিবেদনগুলো দাখিল করেছেন।

এদিকে গত রবিবার সকালে রেজিস্ট্রার বরাবর বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ও ওইদিন মধ্যরাতে কেন্দ্রে অনলাইনে প্রতিবেদনের কপি পাঠিয়েছে ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত কমিটি। এসব প্রতিবেদনে ছাত্রী নির্যাতনের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছে স্ব-স্ব কমিটি বলে একাধিক সূ্ত্রে জানা গেছে।

একই দিন (রবিবার) সন্ধ্যায় হল কর্তৃক গঠিত কমিটিও প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে গতকাল সোমবার দুপুরে এক জরুরী বৈঠকে হল প্রভোস্টের সভাপতিত্বে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর হল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আরো পড়ুন:
> পাঁচবিবিতে বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের উদ্বোধন
> অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যশোরবাসী

অভিযুক্তদের বহিষ্কারের বিষয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন বলেন, এখানে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয় নেই। তারা তাদের উপযুক্ত প্রাপ্যটাই পেয়েছে। আরো প্রাপ্য পাওয়ার থাকলে সেটাও পাবে।

এ বিষয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক শামসুল আলম জানান, দুইপক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। তারা নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সোমবার প্রতিবেদনের উপর আলোচনা শেষে অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজনকে হল থেকে আবাসিকতা ও এই হলের সংযুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ ঘটনায় সাংবাদিকদের নিউজের বর্ণনায় কোনকিছু অতিরঞ্জিত মনে হয়নি।

ফেব্রুয়ারি ২৮,২০২৩ at ১৪:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ইবি/সুরা