আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশ!

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল ভারতের আদানি গ্রুপ।এই প্লান্টের মাধ্যমে আগামী মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে ৭৫০ মেগাওয়েট বিদ্যুৎ পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে তার আগেই ফের আদানির সঙ্গে সেই চুক্তিটা নিয়ে পর্যালোচনার কথা বলছে বাংলাদেশ।আদানির কোম্পানির কাছে আবার বড় ধাক্কার সম্ভাবনা। ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আর আদানি গ্রুপের সঙ্গেই এ ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশ।তবে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সেই চুক্তিটা ফের একবার পর্যালোচনা করতে চাইছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি সংবাদপত্রে তেমনই খবরই প্রকাশ হয়েছে।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি করার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ২৫ বছরের জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করার ব্য়াপারে কথাবার্তা হয়েছিল।এদিকে ইউনাইটেড নিউজ অফ বাংলাদেশের তরফে খবর, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ইতিমধ্যেই আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে চিঠি পাঠিয়েছে চুক্তির ব্যাপারটি পর্যালোচনা করার জন্য। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা এনিয়ে ঠিক কী অবস্থায় আছে সে ব্যাপার ও আদানি পাওয়ারের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের শক্তিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী নজরুল ইসলাম এই পাওয়ার প্লান্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।এদিকে বিদেশী দফতরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ের সময় জানিয়েছেন, এটা একটা সার্বভৌম সরকারের সঙ্গে একটি ভারতীয় কোম্পানির ব্যাপার। আমি মনে করি না এই ব্যাপারটির সঙ্গে আমরা কোন ভাবে জড়িয়ে আছি।

তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশীরাও যাতে লাভবান হয় সেকথা আমরা বলি। যোগাযোগ যাতে সুগম থাকে সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করি। সেটা সশরীরে হতে পারে বা শক্তি সম্পদ দেওয়ার মাধ্যমেও হতে পারে। তবে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এটা হল আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজি। যেটার মাধ্যমে বলা হচ্ছে প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকার।এদিকে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, BPDB’র ওই চিঠির মাধ্যমে এটা একটা আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছে যাতে আগের চুক্তিটার ব্যাপারে আবার পর্যালোচনা করা হয়। এদিকে এই প্লান্টের মাধ্যমে আগামী মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে তার আগেই ফের আদানির সঙ্গে সেই চুক্তিটা নিয়ে পর্যালোচনার কথা বলছে বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন :
>নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী
>নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

বিপিডিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উদ্ধিতি দিয়ে ইউএনবি জানিয়েছে, আমাদের মনে হচ্ছে কয়লার যে দামের কথা বলা হচ্ছে তা অতিরিক্ত। প্রতি মেট্রিক টনে কয়লার দাম চাওয়া হয়েছে ৪০০ ডলার।এটা ২৫০ ডলার হওয়া দরকার। আমাদের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে যে আমদানিকৃত কয়লা সরবরাহ করা তা এই দামেই করা হয়।এদিকে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে সরকার তবুও আধুনিক সরবরাহ ব্যবস্থা স্ক্যাডা চালু, বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২,৬০০ মেগাওয়াট, সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি ব্যয় বিদ্যুৎ খাতে এবং বিদ্যুতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেবে না বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সব কিছু মিলিয়ে বিপাকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

দেশের বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির অর্থ প্রদানে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগের চাহিদামাফিক ভর্তুকির অর্থ প্রদান করতে পারছে না অর্থমন্ত্রণালয়, বরং এক বছরের বাজেট থেকে পূর্ববর্তী অর্থবছরের ভর্তুকির টাকা দিতে হচ্ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ থেকে গত অর্থবছরের কয়েক মাসের ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। প্রতি তিন মাস অন্তর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)কে ভর্তুকির অর্থ প্রদান করে থাকে অর্থ বিভাগ।

ভর্তুকির অর্থ প্রদানে হিমশিম খেলেও সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা অ্যাকুইজিশন (স্ক্যাডা) পদ্ধতি প্রচলেনর মাধ্যমে ডেসকো আধুনিক বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। যারফলে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ৬৯ সাবস্টেশনের কার্যক্রম এখন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারার সঙ্গে মিরপুর এবং গাজীপুরের একাংশে বিদ্যুৎ বিতরণ করে ডেসকো। কোম্পানিটি বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে ৬৯টি সাবস্টেশনের বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

স্ক্যাডার মাধ্যমে ফিডার লোডের মান সময়ভেদে লোডের তারতম্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহের মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে লোড পরিচালনা করবে। ফলে ডেসকোর ১২ লক্ষ গ্রাহক আরও উন্নত সেবা পাবে।বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২,৬০০ মেগাওয়াট। খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন এ বছর সরকার ২,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত ৩০ জানুয়ারি সোমবার সরকারি দলের সদস্য মোরশেদ আলমের টেবিলে উপস্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।বর্তমান সরকার গত মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫,৯২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে বলে উল্লেখ করেন এই প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ খাতের উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ইতোমধ্যে শতভাগ মানুষের নিকট বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।‘
সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি ব্যয় বিদ্যুৎ খাতে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে এর পরিমাণ ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। রফতানি প্রণোদনা খাতে ২১০০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি খাতে প্রণোদনার পরিমাণ ছিল এক হাজার কোটি টাকা। রপ্তানি খাতে প্রণোদনার মধ্যে শুধু রফতানি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১৯০০ কোটি টাকা। বাকি ২০০ কোটি টাকা পাট খাতে দেওয়া হয়েছে। জানাযায় বিদ্যুৎখাতে যত ভর্তুকি দেয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের। বিদ্যুতের চাহিদানুযায়ী ভর্তুকি পায়নি বিদ্যুৎ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের জন্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ১৭ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত কোনো ভর্তুকি দেবে না অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিভাগকে এ অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো ডিসেম্বরেই।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেশে ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেয়া হয়। তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে শীতেও করতে হচ্ছে লোডশেডিং। যেমন শীতকালে জানুয়ারি মাসে দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। ফলে করা হচ্ছে লোডশেডিং। শীতকালীন সময়েই যেই অবস্থা বিদ্যুৎ বিভাগের, গরমের সিজনে আরও ভয়াবহ বিপদে পড়তে হতে পারে যদি কোন সুব্যবস্থা করা সম্ভব না হয়।

ফেব্রুয়ারি ০৪.২০২৩ at ২০:২৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/মম/এমএইচ