যশোরে আ. লীগের ৬ ইউনিটে পুরোনোদেরই আরও কয়েক বছর নেতৃত্বে থাকার বন্দোবস্ত!

নতুন করে সম্মেলন না দিয়ে যশোরের ৫ উপজেলা ও পৌর শাখার আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের মাধ্যমে আজ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়ার কথা রয়েছে। আর এ উদ্যোগ নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। স্থানীয় তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের দাবী দীর্ঘ দিনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়ায় উপজেলাগুলোসহ পৌর আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারছে না। পুরোনোদেরই আরও কয়েক বছর নেতৃত্বে থাকার বন্দোবস্ত হচ্ছে দাবি তাদের।

যশোরের আট উপজেলার মধ্যে পাঁচ ও পৌর শাখা আওয়ামী লীগের বিদ্যমান কমিটির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করতে কেন্দ্র থেকে এক সপ্তাহ আগে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার শেষ দিন। দলীয় সূত্র জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন।

যশোর সদর, ঝিকরগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও মনিরামপুর এই পাঁচ উপজেলা এবং পৌর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ নেই। সমস্যা বেঁধেছে, নতুন করে সম্মেলন না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগে নেয়ায়। দীর্ঘদিন পরও নতুন নেতৃত্ব না পেয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

আরো পড়ুন:
> কলমাকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হলেন আশিক নূর
> চট্টগ্রামে র‍্যাব-৭ কর্তৃক মাদকসহ আকট-২

এসব উপজেলায় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি হয়। সে সময় প্রতিটি উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেননি কেউ। উল্টো পুরো মেয়াদকালেও কেউ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি।

এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারছে না উপজেলাগুলোতে। তৃণমূলের দাবি মেনে সম্মেলন না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদের মাধ্যমেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নামে পুরোনোদেরই আরও কয়েক বছর নেতৃত্বে থাকার বন্দোবস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সমালোচক হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ হতে যাওয়া কমিটিতে কাঙ্খিত পদ না পাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির নির্দেশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভা আহ্বান করা হয়েছে। এতে যশোর সদর, মণিরামপুর, অভয়নগর, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা উপজেলা এবং যশোর পৌর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত থাকার জন্য জানানো হয়েছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট আসনের এমপিরাও উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে, এসকল ইউনিটে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে তোড়জোড় শুরু হয়। তবে শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নেতারা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আমি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এখন সুদিনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো শীর্ষ পদে যেতে পারলাম না। আংশিক কমিটিতেই ৯ বছর পার হয়ে গেল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে পুরোনোরাই এভাবে হয়তো আরও ৯ বছর একই পদে থেকে যাওয়ার চিন্তা করবেন। তাহলে নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে কীভাবে?’

অভিযোগের বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আংশিক কমিটি গঠনের পর দুই দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পরে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের তাঁর দপ্তর ঢাকায় ডেকে নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে কমিটির তালিকা জমা দিতে বলেন। সেটাও করেছি। তারপরও কেন কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলো না, তা আমাদের জানা নেই।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মী অভিযোগ করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একক আধিপত্য বিস্তারর ও ক্ষমতার অপব্যবহারে দলে তৈরি হয়েছে তীব্র বিভক্তি ও দলবাজি। তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে না পারায় সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হচ্ছে সংগঠন।

যদিও এ দাবি না মেনে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কেন্দ্রের নির্দেশ রয়েছে। এজন্য সভা আহ্বান করা হয়েছে। যশোর সদর ও পৌর, মণিরামপুর, অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও ঝিকরগাছা উপজেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত থাকবেন।

সম্মেলনের দাবির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে উপজেলাগুলোর কমিটি গঠনে সম্মেলন করা হবে কি না, সেটা বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ at ১৯:৩৫:০০(GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ/এমএইচ