জাবির সমাবর্তনে উইকেন্ড প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আসন্ন ষষ্ঠ সমাবর্তনে উইকেন্ড প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের যেন সমাবর্তন না দেওয়া হয় সে দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সংলগ্ন সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা আরো একটি দাবি জানিয়ে বলেন সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে যে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে তা কমাতে হবে। দাবি মানা না হলে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষনা দেন তারা। গত ২৩ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সমাবর্তনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে এক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, এবারের সমাবর্তনে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রী- ২৫০০ টাকা, স্নাতকোত্তর ডিগ্রী- ২৫০০ টাকা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর (উভয় ডিগ্রী একত্রে)- ৪০০০ টাকা, এম. ফিল. ডিগ্রী- ৬০০০ টাকা, পিএইচ. ডি ডিগ্রী- ৭০০০ টাকা এবং উইকেন্ড/ইভেনিং প্রোগ্রাম- ৮০০০ টাকা।

এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর আসন্ন সমাবর্তনে উইকেন্ড প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, “আজকে একটি পবিত্র দিনে যেখানে উৎসবমুখর থাকার কথা সেখানে আমরা এই হঠকারী প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। উইকেন্ড কোর্স বন্ধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। ইউজিসি উইকেন্ড কোর্স বন্ধের নোটিশ দিয়েছে কিন্তু আমরা দেখি সেটা বন্ধ না করে বরং সমাবর্তন দেওয়ার মাধ্যমে সেটাকে বৈধকরণ করার পাঁয়তারা করছে প্রশাসন।”

“স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও প্রশাসন ঢাবিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু ঢাবিতে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি, স্বাস্থ্য বিমা আছে, স্নাতকোত্তরে আসন ফাঁকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী নিচ্ছে। এসব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এসব সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ নিতেও পারবে না। যেখানে টাকার সম্পর্ক সেখানে এই কর্তৃপক্ষকে পাওয়া যায়।”

টাকার বিনিময়ে এভাবে সার্টিফিকেট দিলে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হবে আশংকা করে তিনি বলেন, “সমাবর্তন দেওয়ার মাধ্যমে এটা জায়েজ করা হলে বাকি বিভাগগুলোও উইকেন্ড কোর্স চালু করবে। বিশ্ববিদ্যালয় দিনশেষে প্রাইভেট জায়গায় পরিণত হবে। আর যদি প্রশাসন তাদেরকে সমাবর্তন দেয়ার ধৃষ্টতা দেখাতে চায় তাহলে ২৫ তারিখের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতিই হবেন আমাদের এবং প্রশাসনের সমস্যার মিমাংসাকারী।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, “আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ পাবলিকের টাকায় চলে। সেখানে শুধুমাত্র কিছু মানুষ নিজেদের টাকার জোরে পড়াশোনা করতে আসে, একটা সার্টিফিকেট নিতে আসে; এটি রাষ্ট্রের জন্য, জনগণের জন্য অপমান। এই অপমানের জায়গা থেকে আমরা উইকেন্ড কোর্সকে বৈধ ভাবতেই পারি না, সেখানে দীর্ঘ সাত বছর পর আসন্ন সমাবর্তনে ‘অবৈধ’ শিক্ষার্থীরা কীভাবে অংশ নেয়, এটা বোধগম্য না।”

“এই সমাবর্তনের জন্য যে ফি নির্ধরণ করা হয়েছে সেটি কি আমাদের অভিশাপ হয়ে এসে দাড়িঁয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেমন পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে এটা সবারই জানা, এত পরিমাণ টাকা দিয়ে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃস্বপ্ন।”

আরো পড়ুন:
>নদীর তলদেশ থেকে বিদেশি মদের চালান উদ্ধার গ্রেফতার ১
>নাইজেরিয়ায় বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ৫৪

কর্তৃপক্ষ যদি তাদের ‘মাস্তানি আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড’ বন্ধ না করে তাহলে নতুন করে কর্মসূচির দিতে বাধ্য হবে বলে জানান তিনি। ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশফার রহমান নবীনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম ও ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার কর্মী শারমিন আক্তার।

জানুয়ারি ২৬.২০২৩ at ১৬:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএইচ