জাবি অধ্যাপকের গবেষণায় ৭২% চুরি, প্রশ্ন করায় ক্ষুব্ধ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছায়েদুর রহমানের গবেষণাপত্রে ৭২% চৌর্যবৃত্তির সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি)। ওই অধ্যাপক নিজেও ৭২% চুরি বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজকে প্রশ্ন করলে উল্টো সাংবাদিকদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন অধ্যাপক ছায়েদুর।

এসময় তিনি ওই সাংবাদিককে জেরা করতে থাকে। তিনি বলেন, “গবেষণা প্রকাশনায় যেখানে নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহর ৭০% চুরি, যেখানে আবুল কাশেম মজুমদারের ৭২%, যেখানে জেবুন্নেছার ৯৮%, সেখানে আমার তো ৭২% চুরি থাকতেই পারে।” ‘অন্যদের বিষয়ে চুরি অভিযোগ থাকার পরেও কেন শুধু আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলো? তুমি এই প্রশ্ন কেন করেছো? তোমাকে কে এই প্রশ্ন করতে কে বলেছে তার নাম বলো?’ তিনি এরকম বিভিন্ন প্রশ্নে সাংবাদিকদের জেরা করতে থাকেন। যার রেকর্ড প্রতিনিধির কাছে রয়েছে।

গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য দিল আফরোজ বেগম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) পরির্দশনে আসেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছায়েদুর রহমানের গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওই অধ্যাপক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

আরো পড়ুন:
>যশোর জেলা বিজ্ঞান ক্লাব এ্যাসোসিয়েশনের নতুন কার্যনিবাহী কমিটি ঘোষণা
>ভোলায় লঞ্চে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে লস্কর আটক
>ঝিকরগাছায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

এদিকে ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রূপালী আক্তারের গবেষণা প্রকাশনায় চৌর্যবৃত্তি রয়েছে বলে দাবি করে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ করেন জাবির লোক প্রশাসন বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফুল হক। অধ্যাপক মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমানের গবেষণা প্রকাশনায় চৌর্যবৃত্তির আরেকটি পৃথক লিখিত অভিযোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন মোল্লা।

পরে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটি মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক রূপালী আক্তারের গবেষণা প্রকাশনায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের সত্যতা পায়। সুপারিশে বলা হয়, ‘ছায়েদুর রহমান ও রূপালী আক্তারের গবেষণা প্রকাশনায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩—এর ধারা ৪৪ এর উপ-ধারা ৩ অনুযায়ী ছায়েদুর রহমান ও রূপালী আক্তার গবেষণা প্রকাশনায় চৌর্যবৃত্তি করে নৈতিকতা পরিপন্থী কাজ করেছেন। এহেন কাজের জন্য উল্লিখিত আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে।’

তৎকালীন লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেন, অধ্যাপক ছায়েদুর রহমানের ৮-১০ বছরে প্রকাশিত প্রায় পেপারেই চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি লক্ষ্য করি। এটা দেখে আমি ইউজিসিতে কমপ্লেইন করি। যেখানে তার ৫ টি গবেষণায় ৫৭% থেকে সর্বোচ্চ ৮২℅ চৌর্যবৃত্তি ধরা পরে। যা জাহাঙ্গীরনগরের জন্য লজ্জাজনক।

আরো পড়ুন:
>যশোর জেলা বিজ্ঞান ক্লাব এ্যাসোসিয়েশনের নতুন কার্যনিবাহী কমিটি ঘোষণা
>ভোলায় লঞ্চে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে লস্কর আটক
>ঝিকরগাছায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

কিন্তু এসব অভিযোগের প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উপরন্তু বর্তমান ভিসি অধ্যাপক নূরুল আলম এই অধ্যাপককে পরিবহন ও একটি নতুন হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে দিল আফরোজ বেগম বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের কাজ কতটুকু হয়েছে এ বিষয়ে বর্তমান ভিসি ভাল বলতে পারবেন। ভিসি অধ্যাপক নুরুল আলম বলে, তিনি যখন পদোন্নতি পেয়েছে তখন আমি উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

এ ব্যাপারে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবুন্নেছা বলেন, অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান আমার বিষয়ে যে অভিযোগ করেছেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য-প্রমান দিতে পারবেন না। এমনকি তৎকালে ইউজিসি আমার গবেষণা পত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি সঠিক প্রমাণাধি প্রেরণ করেছি। তাছাড়া সে সময় তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আমার বিরুদ্ধে নয়। জেবুন্নেছার অস্বীকারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, ওই সময়ের তদন্ত ও অভিযোগের তথ্য প্রমাণাধী আমার কাছে রয়েছে।

জানুয়ারি ০৪.২০২৩ at ২০:২১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর