ঘোড়াঘাটে বধ্যভ‚ মির তালিকায় নেই শানাই পুকুরের নাম

ঘোড়াঘাটে বধ্যভ‚মির তালিকায় নেই শানাই পুকুরের নাম স্বজনদের দাবী স্মৃতিস্তম্ভ-বদ্ধভূমি ফলক নির্মানের। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাঙালিদের গণহত্যার পর এর চিহ্ন মুছে ফেলতে অসংখ্য লাশ গুম করেছে। তারা বাঙালিদের নির্যাতন ও হত্যার জন্য বিশেষ বিশেষ স্থান বেছে নিয়েছিল।পাকিস্তানিরা বাঙালি হত্যায় সব সময় বুলেটও ব্যয় করেনি। তারা কখনও বেয়োনেট দিয়ে, কখনও ধারালো ছুরি দিয়ে নির্মমভাবে মানুষ জবাই করেছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছিল মানব সন্তানের লাশ। হত্যার পর হতভাগা মানুষের মৃতদেহ ফেলে দেয়া হয়েছে খাল-বিল-নদীতে।

যেখানে নদী ছিল না সেখানে তারা মৃতদেহগুলো মাটিচাপা দিয়েছে। ফলে হত্যার চিহ্ন মুছে ফেলার জন্য নদী বা খালে লাশ ফেলে দেয়া ঘাতকদের কাছে সহজ উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। একাত্তরের নয় মাস দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা এ ভাবে গণহত্যার চিহ্ন অনেকটাই মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। ইতোমধ্যেই বহু গণকবরের ওপর দালান কোঠা ঘর বাড়ি তোলা হয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বনজঙ্গলে ঢাকা পড়ে অবহেলায় অনেক গণকবর আজ লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাঙালিদের হত্যা করে যেসব স্থানে তাদের মৃতদেহ মাটিচাপা দিয়েছিল, ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই সে সব বধ্যভ‚মি ও গণকবর শনাক্ত করা জরুরি। জেলা উপজেলা ভিত্তিক এ সব বধ্যভ‚মি ও গণকবর শনাক্ত করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মমতার বহু মাত্রিকতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ সম্ভব হবে বলে মনে করে স্বজনরা।

আরো পড়ুন:
এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে চুরি হচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা
খুন নয়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এমনি এক হত্যা যঞ্জ চালিয়েুছল দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার বলাহার গ্রামে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা বলাহার উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদসায় স্থাপিত করেছিল ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পে ধরে এনে হত্যা করে শত শত বাঙালিকে। ক্যাম্পের পার্শ্বে শানাই পুকুরের চারটি পাড়ে পুতে রেখেছিল অসংখ্য মানুষের মরদেহ।এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিক্ষিপÍ ভাবে গণ কবর। শানাই পুকুর এখন উপজেলার মানুষের দুঃখ আর যন্ত্রনার ইতিহাস।

১৯৭১ সালে পাক বাহিনী উপজেলার বলাহার গ্রামে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই ক্যাম্পে শত শত বাঙালিকে ধরে এনে হত্যা করে। এ কারনে ক্যাম্পটির নাম রাখা হয়েছল জল্লাদ খানা। স্বজনরা অনেকেই চেয়েছিলন শহীদের রক্তে রঞ্জিত শানাই পুকুরে তাদের হারানো মানুষগুলোর জন্য স্মৃতিস্তম্ভ বা বদ্ধভূমি ফলক। স্বাধীনতার ৫১ বছর অতিবাহিত হলেও শহীদদের জন্য নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা বদ্ধভূমি ফলক। ১৯৭১ সালে ঘোড়াঘাট উপজেলার বলাহার উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদসায় পাক বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে। এর পর পাঁচবিবি উপজেলার ছাতিনালী গ্রামে অপর একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।

ঘোড়াঘাট থেকে ছাতিনালী ক্যাম্পে পাক সেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য ঘোড়াঘাট উপজেলার কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা ভারতের হিলি সীমান্ত দিয়ে পার হয়ে এসে রাতের আঁধারে ঘোড়াঘাট উপজেলার ঘোড়াঘাট হিলি সড়কে তোষাই জোড়গাড়ী ও চোরগাছা নামক গ্রামের মাঝ খানে একটি ব্রীজে ডিনামাইট স্থাপন করে। পর দিন সকালে একটি পাক সেনা অফিসারের জীপ পার হওয়ার সময় ডিনামাইটটি বিস্ফোরিত হয়। ডিনামাইটটি বিস্ফোরনে ব্রীজসহ জীপটি উড়ে যাওয়ার সংবাদে পাক হানাদার বাহিনীর মাথায় খুন চেপে যায়। সেদিনই প্রায় ৬/৭ হাজার পাক সেনার একটি ক্যাম্প বলাহার হাইস্কুলে স্থাপন করা হয়।

আরো পড়ুন:
এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে চুরি হচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা
খুন নয়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন

হাইস্কুলের পাশেই ছিল একটি মাদরাসা। মাদ্রাসাটি ছিল মাটির ঘর। এই ঘরের ভিতরেই বাঙ্গালিদের ধরে এন টর্চার করা হয়। ঘরটির নাম রাখা হয় টর্চার সেল । এর পর থেকে শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। ওই মাদ্রাসার মাটির ঘরের পাশেই ছিল শানাই পুকুর। পাক সেনাদের শারিরীক নির্যাতনে যন্ত্রনায় ও হত্যাজজ্ঞে নিহত বাঙালিদের ওই শানাই পুকুরে চারটি পাড়ে পুতে রাখা হয়েছে সেই সব শহীদদের। স্বাধীনতার ৫১ বছর অতিবাহিত হলেও শানাই পুকুরের শহীদের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা বদ্ধভ‚মি হিসেবে তালিকায় নাম রাখা হয়নি। স্বজনদের দাবী শহীদের রক্তে রঞ্জিত শানাই পুকুরে তাদের হারানো মানুষগুলোর জন্য স্মৃতিস্তম্ভ বা বদ্ধভূমি ফলক নির্মানের।

ডিসেম্বর ১৫.২০২২ at ১৪:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর