১৪ ডিসেম্বর ঘোড়াঘাট হানাদার মুক্ত দিবস

আজ ১৪ই ডিসেম্বর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট হানাদার মুক্ত দিবস। এই দিনে ঘোড়াঘাট হানাদার মুক্ত হয়।১৯৭১ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার স্বাধীনতাকামী দামাল ছেলেরা, বৃদ্ধ, বনিতা, নারী, পুরুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে । এরই ধারাবাহিকতায় ঘোড়াঘাটের তৎকালীন মুজাহিদ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর বদর উদ্দিনের রক্তে সঞ্চালিত হয় ঘোড়াঘাটের মাটি।

তার তেজদীপ্ত বক্তব্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। আর এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই তিনি ঘোাড়াঘাটের মজাহিদ বাহিনীর সদস্য হযরত আলী, আনছার, মজিবর রহমান, আ. লতিফ খাঁন, মো. হান্নান, আনোয়ার হোসেন, শাহাজাহান, নজরুল ইসলাম, আ. হান্নান, দুদু মিয়া, মফিজ উদ্দিন, ইসমাইল, আমিরুল ইসলাম সহ আরো সহযোদ্ধাদেরকে সংগে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর আমবাগানে অবস্থানরত তিন ও চার বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে যোগদান করেন।

ওই বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ল্যাপ্টেনেন্ট রফিক এবং সুবাদার আলতাফ হোসেন ও হাওয়ালদার মেজর মুুনসুর আলী। এরই সূত্র ধরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এক দল সেনা বাহিনী রংপুর হতে সাজোয়া গাড়ী নিয়ে এসে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে সন্ধি করার কথা বলে ওয়ারলেছ বার্তায় জানান যে, তারা ভাই ভাই হানাহানি না করে শান্তির জন্য আলাপ করার কথা বলে পলাশবাড়ীতে যেতে বলে।

আরো পড়ুন:
১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবি হানাদার মুক্ত দিবস
রাত ১টায় প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার মোকাবিলা করবে ক্রোয়েশিয়া

বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক খাঁন সেনার কথায় বিশ্বাস করে গত ইং ২৭/০৩/১৯৭১ তাং বেলা অনুমান ২ টার দিকে সেখানে গেলে বাঙ্গালী সৈনিকরা আক্রোমনের শিকার হন। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হলে হাওয়ালাদার খমির উদ্দিন ও নায়েক আঃ মালেক সহ মুজাহিদ ইসলাইল নামের তিনজন বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ঐ সময় খাঁন সেনারা লেঃ রফিককে কৌশলে ধরে নিয়ে যায়। তখন থেকেই আলতাফ হোসেন সুবাদার ও মজাহিদ মেজর বদর উদ্দিনের রক্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের সঞ্চালন বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশ দানাদার মুক্ত করে স্বাধীন করতে হবে এই প্রত্যয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝপিয়ে পড়ে।

যুদ্ধের কৌশল মতে বেঙ্গল রেজিমেন্ট সহ মুজাহিদ মেজর বদর উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীদেরকে নিয়ে পলাশবাড়ী বিটিসির উত্তর পুর্ব পার্শ্বে রংপুর মহা সড়কে বেরিকেট সৃষ্টি করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর পরিকল্পনা মোতাবেক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রোমন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মুজাহিদ বাহীনির মুক্তিযোদ্ধারা একটি করে খন্ড দলে ভাগ হয়ে মাদারগঞ্জ চৌধুরীনি হয়ে রংপুরের দিকে রওনা দেয় এবং একটি দল পলাশবাড়ীতে এ্যাম্বুশ নিয়ে থাকে। এই অবস্থায় খন্ড খন্ড ভাবে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলে সেখানে তুমুল যুদ্ধের সম্মুখিন হয়।

গোলাবারুদের সল্পতার কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী বন্ধু ভারতে গিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষন নিলেও মুজাহিদ মেজর বদর উদ্দিন বাংলার মাটিতে অবস্থান নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞায় যুদ্ধের প্রস্তুতিতে আত্মগোপনে থাকা কালে খাঁন সেনার হাতে আটক হয়। সেই সময়ে আর সি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে খাঁন সেনাদের ক্যান্টনমেন্টে তাকে একটি ঘরে আটক রেখে হাত-পা বেধে ঝুলিয়ে রোড দিয়ে শরীর কেটে ওই কাটা স্থানে লবণ ছিটিয়ে যন্ত্রনা দিতো। মেজর বদর উদ্দিনকে খাঁন সেনারা জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তার সাথে কে, কে ছিল, ইনশাল্লাহ আমি একাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমার সাথে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই।

আরো পড়ুন:
১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবি হানাদার মুক্ত দিবস
রাত ১টায় প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার মোকাবিলা করবে ক্রোয়েশিয়া

বেইনেট চার্জের মাধ্যমে খতবিক্ষত করে অমানুষিক ভাবে চরম যন্ত্রনার পরেও মেজর বদর উদ্দিন তার সহযোদ্ধাদের নাম প্রকাশ করে নাই। অবশেষে খাঁন সেনাদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তার শরীর হতে মাংস পচে খষে ২১ দিন পর চির নিদ্রায় না ফেরার দেশে চলে গিয়ে শহীদ হন মেজর বদর উদ্দিন। মেজর বদর উদ্দিন সহ সারা বাংলাদেশে আরো অগনিত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলেও তারা না থাকলেও তাদের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাঅক্ষরে শহীদের খাতায়, আর তারই সাথে চির অমর হয়ে থাকবে এই স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। ঘোড়াঘাট থেকে ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে গিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে দির্ঘ্য ৯ মাস যাবৎ খাঁন সেনাদের সাথে লড়াই করে ১৪ই ডিসেম্বর ঘোড়াঘাটকে হানাদার মুক্ত করে।

১৯৭১ সালে টানা নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলাকালীন মুক্তিবাহিনী সহ যৌথ বাহিনীর অব্যাহত গেরিলা হামলার মুখে ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল দিয়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৩ জন শহীদ হন। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে যারা প্রাণ হারান তারা হলেন, ঘোড়াঘাট সদরের মেজর বদর উদ্দীন, আমিরুল ইসলাম, আব্দুর রশীদ খোকা, কুলানন্দপুর গ্রামের আইযুব আলী, আফসারাবাদ কলোনীর সোহরাব আলী, মোশারফ হোসেন, খাইরুল গ্রামের মহেন্দ্রনাথ সরকার, পালশা গ্রামের তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী আব্দুর রশীদ, সাইফুল ইসলাম, ডুগডুগিহাট গ্রামের বগা মন্ডল ও তার ছেলে, কশিগাড়ী গ্রামের সিরাজ উদ্দিন, হিজলগাড়ী গ্রামের ওসমান আলী, জোড়গাড়ী গ্রামের সায়েদ আলী।

আরো পড়ুন:
১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবি হানাদার মুক্ত দিবস
রাত ১টায় প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার মোকাবিলা করবে ক্রোয়েশিয়া

আমরা ঘোড়াঘাটের মানুষ প্রতি বছর হানাদার মুক্ত দিবস পালন করে থাকি। কিন্তু ঘোড়াঘাটে মেজর বদের উদ্দিন সহ অন্যান্য শহীদের বদ্যভুমির কোন সংস্কার বা উন্নয়ন হয়নি। ঘোড়াঘাটবাসী উন্নয়নশীল আওয়ামীলীগ সরকারের হস্তক্ষেপে ঘোড়াঘাট শহীদের বদ্যভূমির উন্নয়ন চায়।

ডিসেম্বর ১৩.২০২২ at ১১:২২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর