কালীগঞ্জ বারপাখিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারপাখিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার পদে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসার সহসুপার মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানকে ২০১৯ সালে নিয়োগ দেন এবং তার নিয়োগপত্র ব্যাকডেটে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে দেখান প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সুপার আবুল কালাম আজাদ, যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।

তিনি ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সহসুপার পদে নিয়োগ দেন মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে। জানা যায়, তিনি অত্র প্রতিষ্টানে প্রায় আড়াই বছর চাকরী করে ২০১৭ সালের শেষে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যান। এর প্রায় এক বছর পর ২০১৯ সালে এসে অত্যান্ত চাতুরতার সাথে সহসুপার পদে হাফিজুর রহমানকে নগদ অর্থ ও মাদ্রাসায় জমি প্রদান শর্তে নিয়োগ দেন মাদ্রাসা সুপার আবুল কালাম।

আরো পড়ুন :
জাতীয় মহিলা সংস্থার উদ্যোগে ফ্রি প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা বিতরণ

তবে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গঠিত নিয়োগ বোর্ডের আদলে বর্তমান সহসুপারকে নিয়োগ দেখানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুপার আবুল কালাম আজাদ। ঐ সময় নিয়োগ বোর্ড হয়েছিল ঝিনাইদহ সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানে লিখিত কিংবা ভাইভা কোন পরীক্ষায় দেননি বর্তমান সহসুপার হাফিজুর রহমান।

তার আদি নিবাস যশোর জেলার মনিরামপুরে। শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের পূর্বে তিনি সারের ব্যবসা ও হোমিওপ্যাথিক একজন চিকিৎসক ছিলেন। শুধু তাই নয় এই সহসুপার ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের তালিকাভুক্ত নয় এমন একটা ট্রেনিং সেন্টার “লাইফ সায়েন্স” এ পল্লী হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার্থীদের ট্রনিংও দেন।

এদিকে আগের সহসুপার মোহাম্মদ রুহুল আমিনের প্রায় আড়াই বছর চাকুরীর হাজিরা খাতাসহ সকল তথ্যপ্রামান মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন খাতাপত্র তৈরী করে রেখেছেন সুপার । পূর্বের সহসুপার মুহাম্মদ রুহুল আমিনের কাছে এব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ২০১৫ সালে সেপ্টেমবরে নিয়োগ পাই।

এ সময় সুপার আমার কাগজপত্র ঠিক করে আনা বাবদ টাকা চাই। আমি ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঐ মাদ্রাসায় চাকরী করি। ততকালীন সময়ে বারপাখিয়া মাদ্রাসায় পড়–য়া সাবেক শিক্ষাথী মাসুম জানান, আমি ২০১৮ সালের দাখিল পরিক্ষার্থী ছিলাম আমি মাদ্রাসাতে পড়াকালিন সময়ে রুহুল আমিন হুজুর আমাদের ক্লাস নিয়েছেন।

তখন হাফিজুর রহমান নামে কোনো হুজুর মাদ্রাসাতে ছিলেন না। জানাগেছে, অভিযুক্ত ঐ সুপার দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম করছে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার লোক নেই। নিয়োগ বানিজ্য তার কাছে একেবারেই সহজ। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে সহসুপার নিয়োগ দিলেও জানতে পারেনি পরিচালনা পরিষদের অনেকেই।

তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, সুকৌশলে তার সকল কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জামায়াত নেত্রী রাহিদা খাতুন। যিনি ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নাশকতার জন্য গোপন বৈঠক করাকালীন কালীগঞ্জ শহরের জামায়াত নেতা আব্দুস সবুরের বাড়ি থেকে আটক হন।

মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী যাকে বড় ম্যাডাম হিসেবেই চিনেন। বিধি মোতাবেক একাধিক তৃতীয় বিভাগ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে না পারার কথা বলা হলেও দলীয় কর্মী হওয়ায় তাকেও নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন এই সুপার।
এদিকে বর্তমান সহসুপার হাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে নিয়োগ পেয়েছি। আমার নিয়োগের সবকিছু নিয়ম অনুসারেই হয়েছে।

এবিষয়ে সুপার আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রুহুল আমিনকে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে মৌখিক ভাবে খন্ডকালীন সহসুপার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং ঐ বছরের শেষের দিকে তিনি চলেও যান। রুহুল আমিনের কাছে যে নিয়োগ পত্রটি আছে সেই নিয়োগপত্র তিনি নিজে বানিয়েছেন। কোন পত্রিকাতে নিয়োগ বিঞ্জপ্তি দেওয়া হয়েছিলে তা আমার এখন মনে নেই। একটি কুচক্রীমহল মাদ্রাসার ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইনলাম বলেন, নতুন এমপিও ভুক্ত বারপাখিয়া দাখিল মাদ্রাসায় যদি কোনো কিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম থাকে তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে । তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

আগস্ট ২৩,২০২২ at ১৯:৪৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ /আক /দেপ /শই