২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আমি বেঁচেও মরে গেছি

বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নৃশংস সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তার একটি অন্যতম ঘটনা ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন সিনিয়র নেতারা। দলটির প্রধান এবং তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন, ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি।

ভয়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় দলকে ভালোবেসে যোগদান করেছিলেন মাহবুবা পারভীন। নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে ১৭৯৮টি স্পিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন।

আরো পড়ুন :
দিনাজপুরের হাকিমপুরে শোকাবহ ১৫ ই আগস্ট উপলক্ষে শোকসভা অনুষ্ঠিত
ক্ষেতলালে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ

বাংলাদেশ জার্নালের প্রতিবেদককে তিনি বলেন, সে দিন গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন আমি মাহবুবা পারভীন।

আমাকে মৃত ভেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৬ ঘন্টা পর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রিয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার দাদা সেখানে লাশ সনাক্ত করতে গেলে আমাকে জীবিত দেখতে পান।

পরে ৭২ ঘন্টা পর আমার জ্ঞান ফিরে এলে দেশে আমার চিকিৎসা ভাল না হওয়ায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আপা আমাকে কলকাতায় পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতাল থেকে তাকে জানানো হয়েছিল শরীরে রয়েছে ১৮০০ স্পিন্টার। এরমধ্যে মাথার দুটি স্পিন্টার তাকে অনবরত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ব্যথায় আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। আমার শারীরিক অবস্থা ভাল না। আমার পা থেকে দুটি স্পিন্টার অপারেশন করে বের করা হয়েছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীরাও তার কোন খোঁজ খবর নেন না। দীর্ঘ ১৮বছর ধরে গ্রেনেডের স্পিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন মাহবুবা পারভীনের।

২১ আগস্ট এলেই এর ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়লে এখনও ঘুমের মাঝে, মাঝে মধ্যে আঁতকে উঠে, কান্নায় চোখ মুখ ভিজে যায় সাভারের মাহবুবা পারভীনের। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে তার দেহ অবশ হয়ে যায়।

সেদিনের কথা মনে পড়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন ঘরের মাহবুবা পারবেন। এটাও বলেন যে আমি কেন বেঁচে আছি। অন্যান্যদের সাথে আমি কেন গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুবরণ করলাম না। আমি যেন বেচো এক মরা মানুষ। যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি আমি ।

মাহবুবা পারভীন বর্তমানে ঢাকা জেলা (উত্তর) আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পদে আছেন তিনি ।

তিনি আরো বলেন, তার মৃত্যুর আগে এ জঘন্য হামলার সাথে যারা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে মাহাবুবা পারভীন ।

মাহাবুবা বলেন, সাভারের নেতা কর্মীদের বাড়ী গাড়ীর অভাব নেই। আহত মাহবুবার খোঁজ খবর রাখে না কেউ সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ। আহত মাহবুবা পারভীনকে অন্যের সহায়তায় রিক্সা কিংবা বাসে যাতায়াত করতে হয় এখনো ।

২০১৬ সলের ১৫ নভেম্বর তার স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) এম এ মাসুদ স্ট্রোক করে মারা যায়। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ পারভেজ একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকুরী করেন, ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের বিদেশে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচের জন্য ১০হাজার টাকা ও এককালিন ১০ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র দিয়েছেন। এ থেকে যে টাকাটা আসে তাই দিয়ে চলে তার সংসার খরচ। বসবাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৪শ’ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন তিনি।

আগষ্ট ২১,২০২২ at :১০:৩৪ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সর/শই