জাবি’র ডাইনিং হল কর্মচারীদের তিন দফা দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডাইনিং হল কর্মচারীরা চাকরি স্থায়ীকরণসহ তিন দফা দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

রবিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ডাইনিং হল কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় ডাইনিং কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়ীকরণ, চাকুরির বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা ও কর্মচারীদের বীমার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। পরবর্তীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। কর্মচারীদের দাবীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা একাত্নতা পোষণ করেন।

জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল হক রনি আরও বলেন, ‘ডাইনিং কর্মচারীদের সেই খাবার খেয়ে আজ অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক, অফিসার হয়েছেন কিন্তু আজ আপনারা সে কথা ভুলে গিয়েছেন। অনেক প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অনেকবার কর্মচারীদের আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কিছুই করেননি।

তিনি আরো বলেন, ডাইনিং হল কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া না মানলে দরকার পড়লে ঘটি বাটি নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে যাব। প্রয়োজনে আমরা দিনের পর দিন এই বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রাখব।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, ‘কর্মচারীরা রক্তকে ঘাম করেন বলেই ছাত্ররা ডাইনিংয়ে দুবেলা খেতে পারছে। কর্মচারীদের এই যৌক্তিক দাবী যদি এখন মানা না হয়, তাদেরকে যদি আবার মাঠে নামতে হয় তার ফল খুব ভালো হবে না।’

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহির ফয়সাল বলেন, ‘৩৭ বছর হলের ডাইনিংয়ে চাকুরী করার পরও কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক জন কোটি টাকা লুটপাট করবে অন্যদিকে হলের ডাইনিংয়ের কর্মচারী না খেয়ে থাকে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যেতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশে এই বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না।’

শেখ হাসিনা হলের কর্মচারী রুজিনা বলেন, ‘আট বছর ধরে চাকুরি করে আসছি কিন্তু এখন বেতন পাচ্ছি ছয় হাজার টাকা। স্থায়ী কর্মচারীরা যেখানে আরাম আয়েশে চলছে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে কম বেতন পাই আমরা।’

রংমালা নামে শহীদ সালাম-বরকত হলের এক কর্মচারী বলেন, ‘৩২ বছর ধরে কাজ করে আসছি। বেতন তো খুবিই সামান্য তারপরও গতমাস থেকে আমাকে আর বেতন দিচ্ছে না।’

আরো পড়ুন:
চলে গেলেন ভারতীয় উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর
পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পাবনায় ‘ওপেন হাউজ ডে’ অনুষ্ঠিত

ডাইনিং হল কর্মচারী সমিতির সভাপতি মনির হোসেন বলেন, ‘চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। একের পর এক প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি আসেন কিন্তু আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। নতুন কর্মচারিকে দেওয়া হয় চার হাজার আশি টাকা, আর যারা ত্রিশ বছর ধরে চাকুরি করে আসছে তাদের বেতন এখন আট হাজার চারশো আশি টাকা, ইনক্রিমেন্টও নাই। দুই বছর আগের এক আন্দোলনের ফলে যারা ৩২ বছর চাকুরি করবে তাদেরকে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হবে এরকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আবার হঠাৎ করে অনেক কর্মচারীর চাকুরিও চলে যায়। যে কর্মচারি এত দিন হলে কাজ করে আসলো তার চাকুরি চলে গেলে সে কী করে চলবে?

এবিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও চাকুরির মেয়াদ নিয়ে সিন্ডিকেটের নীতিমালা আছে। সে নীতিমালায় বলা আছে তাদের চাকুরির মেয়াদ ৩২ বছর। অথবা তাদের ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত। এর আগেও কর্মচারীদের অবস্থার উন্নয়নে তাদের সাথে কথা বলেছি। মাঝখানে তাদের বেতন বন্ধ ছিল উপাচার্যের নির্দেশে সেটাও দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও তারা আন্দোলনে নামছে।

ফেব্রুয়ারি ০৬.২০২২ at ১৬:০৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নউ/জআ