দৌলতপুরে তুচ্ছ ঘটনায় যুবলীগ নেতা বাবু গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি গাজি সালাউদ্দিন বাবু। -ফাইল ছবি।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্রিক তুচ্ছ একটি ঘটনায় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি গাজি সালাহউদ্দিন বাবুকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাতে উপজেলার ডিজিএম বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতেই তার বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলা দিয়ে শনিবার দুপুরে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে বলে তার পরিবারের অভিযোগ।

জানা যায়, দৌলতপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউল ইসলাম মহির সমর্থকদের সঙ্গে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার ডিজিএম বাজারে শুক্রবার সন্ধ্যায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী জহুরুল ইসলামের সমর্থকদের বাগবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যুবলীগ নেতা গাজি সালাহউদ্দিন বাবু ও শফিকুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী যুবককে আটক করে থানায় নেয়। শফিকুল তার বাবার জন্য ডিজিএম বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিরপরাধ যুবক শফিকুল ইসলামকে রাতেই ছেড়ে দেয় পুলিশ।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহির বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিপুল রিজার্ভ ভোটের মালিক যুবলীগ নেতা গাজি সালাহউদ্দিন বাবুর নামে সহিংসতার মামলা দিয়ে শনিবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুষ্টিয়া কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলাটি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে কোনো সহিংসতা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, এতে সামান্য উত্তেজনা দেখা দেয়। তুচ্ছ এই ঘটনাকে পুঁজি করে চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি বাবুকে ঘায়েল করতেই তার নামে মামলাা করেন। এদিকে সালাহউদ্দিন বাবুর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বাবুকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের মামলা গ্রহণ করে কারাগারে পাঠিয়েছে। বাবুকে কাবু করতে না পারলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহির নিশ্চিত ভরাডুবি হবে। মূলত এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দৌলতপুর সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি গাজি সালাহউদ্দিন বাবু গতবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এলাকায় তার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। অার বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহির নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিষিয়ে আছেন ইউনিয়নবাসী। এবারের নির্বাচনেও বাবুসহ আরো কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও প্রত্যাহার করে নেন। বাবু সমর্থন দেন দলের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের জহুরুল ইসলামকে। বর্তমান চেয়ারম্যান মহির প্রতি জনসমর্থন না থাকলেও শুধুমাত্র নৌকা প্রতীকের কারণে ‘মেরেধরে’ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি, এমন মন্তব্যই করছেন ইউনিয়নবাসী অনেকে।

আরো পড়ুন :
পাবনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২, আহত-৫
কাহালুতে মুঞ্জুর নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য চেষ্টা করেও দৌলতপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউল ইসলাম মহির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, চেয়ারম্যানের দায়ের করা মারামারির মামলায় বাবুকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩০-৩৫ জন মামলাটির আসামি তালিকায় রয়েছেন। উত্তেজনার ঘটনায় মামলা গ্রহণের সুযোগ আছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওসি নাসির বলেন, অবশ্যই মামলা নেয়া যায়। এ ঘটনায় দুজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে দৌলতপুর হাসপাতালে এ সম্পর্কিত কোনো ব্যক্তির ভর্তি থাকার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, দৌলতপুর উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী অপরিবর্তিত বা বর্তমান চেয়ারম্যানরাই দলের মনোনয়ন পান। সব ইউনিয়নেই বর্তমান চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে কমবেশি নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরেও সম্পূর্ণ ‘কাকতালীয়ভাবে’ তারাই আবার নৌকার টিকেট পাওয়ায় তা সহজেই মেনে নিতে পারেননি দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা। ফলে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই বিভিন্ন প্রতীকে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। হয়রানিমূলক নয়, তারা সবাই পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন।

নভেম্বর ১৩.২০২১ at ২২:৩৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরসে/রারি