চিলমারীতে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মানে অনিয়মের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের উপহারের ঘর তৈরীতে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজে ভিত্তি ছাড়াই ঘর, নিম্নমানের ইট ও খোয়া প্রদান সুবিধাভোগীদের নিকট পরিবহন ব্যয় নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানাগেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মান প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ২দফায় মোট ৪২০ টি ঘরের বরাদ্দ আসে। এতে ১ম কিস্তির প্রতিটি ঘরের ব্যায় ১লাখ ৭১ হাজার টাকা হারে ১২০টি ঘরের জন্য ২কোটি ৫লাখ ২০ হাজার টাকা ও ২য় কিস্তির প্রতিটি ঘরের ব্যায় মালামাল পরিবহন ব্যয়সহ ১লাখ ৯৭ হাজার টাকা হারে ৩শ টি ঘরের জন্য ৫কোটি ৯১ লাখ টাকাসহ মোট ৭কোটি ৯৬লাখ ২০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। সে মোতাবেক ঘরগুলির নির্মানের কাজ শুরু করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর।

১ম কিস্তির ১২০টি ঘর গত ২৩জানুয়ারী তারিখে সুবিধাভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং দ্বিতীয় দফার বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলির মধ্যে ২৫০টি ঘর ২০ জুন তারিখে নির্বাচিত গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ৫০টি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া তেলিপাড়া এলাকায় ১৪টি ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট।

রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা সাব-বাধ এলাকায় কিছু ঘর নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে ভিত্তি হিসাবে ১৫ইঞ্চি ইটের গাথুনি পরিবর্তন করে দেয়া হচ্ছে ১০ইঞ্চি ঢালাই।ফলে ঘরে কোন ভিত্তি থাকছে না। কাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের ইট বিভিন্ন ভাটা থেকে সংগ্রহ করায় ছোট-বড় ইট দিয়ে ঘরের কাজ করায় কাজের মান খারাপ হচ্ছে বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সরেজমিনে পাত্রখাতা সাব-বাধ এলাকায় গেলে চোখে পড়ে সাজেদা বেগম নামের এক সুবিধাভোগীর ঘরের বারান্দায় ১৯ বস্তা সিমেন্ট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে যার কোন মালিক নেই। অথচ ঘর নির্মাণে সিমেন্টের পরিমান কম দেয়ায় ঘরের মান খারাপ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাশ্ববর্তী ওসমান গনি নামে এক ব্যাক্তির ঘর নির্মাণের জন্য নিম্নমানের (কাজের অযোগ্য) ইট প্রদান করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:
বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় ঠাকুরগাঁওয়ের আনোয়ার খসরু
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের নামে দুদকে মামলা

যা নিতে ওই ব্যাক্তি বহন খরচ প্রদান করেছেন ২৩ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরের মালামাল পরিবহনের জন্য পৃথক ৭ হাজার টাকা পরিবহন ব্যায় ধরা হলেও পাত্রখাতা সাব-বাধ এলাকার সুবিধাভোগীরা ব্যাক্তিগতভাবে পরিবহন ব্যায় প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। সুবিধাভোগী জহুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আ.জব্বার, আমজাদ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, দুখু মিয়াসহ অনেকে জানান, ঘর নির্মাণের জন্য মালামাল পরিবহন বাবদ তারা প্রত্যেকে ২১-২২ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। পরিবহন ব্যয়ের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গেলে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা হয়নি বলেও জানান তারা।

ঘর নির্মানের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ কোহিনুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি ঘরের মালামাল ক্রয় সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাহবুবুর রহমান জানান, ভাটায় ইট না থাকায় নিম্নমানের ইট পাঠিয়েছিল। ইটগুলি পরিবর্তন করে দিতে বলা হয়েছে। পরিবহন ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই এলাকাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সুবিধাভোগীদেরকে কিছু পরিবহন ব্যয় প্রদান করার বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। কাজ শেষে বরাদ্দকৃত পরিবহন ব্যয় সুবিধাভোগীদের প্রদান করা হবে।

অক্টোবর  ১৮.২০২১ at ১৬:০১:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ফহ/জআ