বীরগঞ্জে ১৬০টি মন্দিরে দূর্গাপূজার প্রস্তুতি

ছয়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতু পরিবর্তনের পালাবদলে আসে শরৎ আগমনের অন্যতম কাশফুল আর নীল আকাশের বুকে ভেসে বাড়ানো শুভ্র মেঘের ভেলা। রিমঝিম বর্ষার পরই ভাদ্র-আশ্বিন জুড়ে শরৎ কালো মেঘের রাজত্ব। শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কাশফুলের শুভ্রতা।

প্রকৃতিতে যখন শরৎ আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। এখন শরৎকাল। যখন-তখন বৃষ্টি চলছে। আকাশজুড়ে সাদা মেঘের লুকোচুরি। এ সময়েই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

দুর্গোৎসবের পরিপূর্ণ রূপ দিতে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলায় ১৬০ টি মন্দিরে চলছে আয়োজকদের জোর প্রস্তুতি। ১১ অক্টোবর সোমবার পঞ্চমী ও মহাষষ্ঠী তিথি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা প্রশস্তা সামকালে দেবীর রোধন,আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ১২ অক্টোবর শ্রী শ্রী শারদীয় দূর্গাদেবী নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তামাদি কল্পারম্ভ সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্তা ও দেবী দূর্গার ঘোটকে আগমন।

মাধ্যমে শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর মহাদশমীতে প্রতিমা বিসর্জন প্রশস্তা এবং দেবী দূর্গা দোলায় গমন করবে বলে জানিয়েছেন বীরগঞ্জ কেন্দ্রীয় মন্দির পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রতন কুমার রেন্টু সাহা। দূর্গোৎসবের ইতোমধ্যে বীরগঞ্জ পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সনাতন পল্লীতে শুরু হয়েছে দূর্গোৎসবের ঘনঘটা। দেবীকে স্বাগত জানাতে সর্বত্র চলছে সাজসাজ রব।

দেশে করোনা আতঙ্ক থাকলেও আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমায় প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন তাঁরা। হিন্দুদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির জন্য মৃৎশিল্পীদের কাছে চাহিদা আসতে শুরু করেছে।এ জন্য সময় মতো প্রতিমা সরবরাহের জন্য বীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

রাতদিন মণ্ডপে মাটি দিয়ে চিন্ময়ী মায়ের, মৃন্ময়ীরূপ ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে মৃৎ শিল্পীদের হাতে। দেবীদূর্গাকে রঙতুলির আঁচড়ে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা মৎশিল্পীরা। মা ভোগবতীর ভক্তরা জানান, ভক্তদের ডাকে সাড়া দিতে কৈলাশ ছেড়ে কন্যা রূপে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে এবার বাবার বাড়ীতে আসছেন মা দুর্গা।

পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বাড়তি ৩ থেকে ৪ জন শ্রমিক নিয়ে রাত-দিন করছেন মৃৎশিল্পীরা। অন্য সময় কৃষি কাজসহ বিভিন্ন কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের অর্জুনাহার বাজারের মন্দিরে মৃৎশিল্পী গপেন বলেন, প্রতিবছর দুর্গা উৎসব আসলে কিছু টাকার মুখ দেখি।’

আরো পড়ুন :
আবারও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা, মৃত্যু আরও বাড়ল
ঘূর্ণিঝড় শাহীনের প্রভাবে পণ্ড হতে বসেছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ

এ বছর ৬টি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। প্রতিমার মূল্য ১৪ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা করে নেবেন। উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের কমোরপুর গ্রামের বলরাম পালের ছেলে সাগর পাল বলেন, আগে বাবার সাথে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেছি। পাশাপাশি বাড়িতে পুতুল তৈরি করে হাটে বাজারে বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালভাবে জীবন-যাপন করতাম। এখন আর পুতুল কেউ কিনেন না। প্রতিমা তৈরির কাজও নেই।

বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। কিন্তু মৃৎশিল্পীদের কেউ খোঁজখবর নেয় না। উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মহেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১শত ৬০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এবার প্রতিটি মণ্ডপে ৫শত কেজি চাউল বরাদ্দ পেয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় উৎসব পালন করব। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণে আমরা বড় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায় পূজার আয়োজন চলছে। শারদীয়া দুর্গা উৎসব যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

অক্টোবর ০৭.২০২১ at ১৫:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/প্ররাজি/রারি