অবশেষে সেই ভণ্ডপীরের নামে মামলা

ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীমের পায়ে সিজদা করা হচ্ছে। ফাইল ছবি।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ঢাকঢোল বাজিয়ে উৎসব করে এক কিশোরের লাশ দাফন এবং পবিত্র কালেমা বিকৃত করে সেখানে নিজের নাম যুক্ত করার ঘটনায় আলোচনায় আসা ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান ওরফে শামীমের (৬৫) নামে অবশেষে ধর্ম অবমাননাসহ আরো কয়েকটি অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়। ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম তার ভক্তদের দুধ দিয়ে নিজের দুই পা ধুয়ে সেই দুধ পান করতে এবং পায়ে সিজদা করতে বাধ্য করতেন। এসব ঘটনা নিয়ে মাস চারেক আগে পরপর দুটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে দেশজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করার পরেও অজ্ঞাত কারণে এতদিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ ও প্রশাসন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে খালিদ হাসান সিপাই বাদী হয়ে ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীমকে একমাত্র আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৫, তারিখ ১৫-০৯-২০২১।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুৃলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজিসহ মামলার এজাহারে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার পর আসামি শামীম গা ঢাকা দিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা চলছে। অচিরেই তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে।

জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মহসিন আলীর কিশোর ছেলে আঁখি (১৭) ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে গত ১৬ মে রাতে ওই গ্রামের ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম ও তার ভক্তরা ঢাকঢোল বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করে তাকে দাফন করেন। দাফনের আগে ধর্মেীয় রীতি অনুসারে আঁখির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ জানাজায় অংশ নিলেও অসুস্থতাজনিত কারণে দাফনের আগেই বাড়ি চলে যান। এমপি বাদশাহ্ চলে যাওয়ার পরে ইসলাম ধর্মের প্রথা ভেঙে নিজের গড়া তরিকা মোতাবেক ঢাকঢোল বাজিয়ে উৎসবমুখর আনুষ্ঠানিকতায় আখির লাশ দাফন করেন ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম। যেখানে তার অন্তত দুই শতাধিক ভক্ত-অনুসারী উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন :
কিয়ারার অভিনয়ে আর রূপে মুগ্ধ দর্শক দুনিয়া
বিশ্বনবীকে নিয়ে কটুক্তিকারীর বিচারের দাবীতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ

এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়। প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মানুষজন। এর কয়েকদিনের মধ্যে আরেকটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এতে ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীমের ভক্তদের দুধ দিয়ে তার দুই পা ধুয়ে পায়ে চুমু খেতে এবং পায়ে মাথা ঠুকে সিজদা করতে দেখা যায়। এছাড়া ভাইরাল হওয়া দুটি ভিডিওতেই অনেকটা হিন্দু ধর্মের রীতিতে সুরে সুর মিলিয়ে ভক্তদের ‘হরে হরে হরে শামীম’ বলতে শোনা যায়। শামীম নিজ গ্রামে আস্তানা গড়ে তুলে সেখানে মাদকের আখড়া বসিয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। সেখানে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের আনাগোনাই বেশি। তাদের মাদকের নেশায় বুদ করে অসামাজিক কাজের আসর বসিয়ে ব্রেন ওয়াশ করে নিজের গড়া তরিকায় বিশ্বাসী করে তোলেন শামীম।

এছাড়া ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম নিজেকে বাংলার নবী দাবি করে পবিত্র কালেমা বিকৃত করেন। কালেমার সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত করে ‘(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ‘শামীম বাবা’ রাসুলুল্লাহ)’ এটাকেই সঠিক বলে প্রচার করেন। তার নির্বোধ ভক্তরাও বিশ্বাস করে তা জপতে থাকেন। নিজের আস্তানাতেই ভবিষ্যতে হজ অনুষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন এই ভণ্ডপীর। এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দফায় দফায় খবর বের হওয়ার পাশাপাশি তার ভণ্ডামির ভিডিও ক্লিপ দুটি ভাইরাল হওয়ায় দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়।

গত ৩০ মে স্থানীয় ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল হকের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি প্রতিনিধি দল কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের কাছে ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে তার কঠোর শাস্তি দাবি করেন। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ নিজের আস্তানায় মাদক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে শামীমের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে এতদিন প্রশাসন ও পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকায়। কিন্তু ঘটনার দীর্ঘ চার মাস পরে হঠাৎ করেই তার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়।

সেপ্টেম্বর  ১৬.২০২১ at ২২:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/রারি