পেঁয়াজি বিক্রি করে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে মোকলে রানী

নাম মোকলে রানী।স্বামীকে হারিয়েছে প্রায় ১০ বছর। ভূমি ও গৃহহীন এই রানীর বয়স বাড়লেও দুঃখ আর কষ্ট কমেনি। নেই নিজস্ব একখন্ড জমি বা একটি থাকার ভালো ঘর। ভয়ে কাটছে দিন। কখন ভেঙ্গে দেয় ওয়াপদা বাঁধে নির্মিত অর্ধ ভাঙ্গা ঘরটি। স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব এই রানী এখন গুলগুলি আর পিয়াজি বিক্রি করে দুঃখ আর কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। এর উপর ভাড় পড়েছে বাবা হারা নাতি ও নাতনীর। ভূমি ও গৃহহীন এই রানী একখন্ড জমি আর একটি ঘরের আশায় পাড় করছে সময়।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের মিনাবাজার ওয়াপদা বাঁধে বসবাস করছেন মৃত গোলজারের স্ত্রী মোকলে রানী। প্রায় ১০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। দু’মেয়ে বিয়ে হয়ে আলাদা হলেও এক মেয়ে শাহিনুর স্বামীকে হারিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান, আর দু’সন্তানকে রেখে যান মায়ের কাছে। মোকলে রানীর স্বামী কাঁধে করে মাটির হাড়িপাতিল বিক্রি করতেন এবং দিন এনে দিন খেতেন। টানাটানি সংসার, তাই ক্রয় করতে পারেননি থাকার জন্য একখন্ড জমি বা তৈরি করতে পারেননি একটি ভালো থাকার ঘর। স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় এই বৃদ্ধা পড়েন বিপাকে। এর উপর মেয়ের ঘরের দুই সন্তান। প্রথম প্রথম অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও পরে গ্রামবাসীর সহযোগীতায় স্থানীয় মিনা বাজারে একটি দোকান দেন।

দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলগুলি ও পিঁয়াজি ভেজে বিক্রি করেন এবং যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে সংসার চালিয়ে আসছেন প্রায় ১০ বছর থেকে। কষ্ট আর টানাটানির সংসার তাই পড়ে আছেন বাঁধের রাস্তায়। দিন যাচ্ছে ভয় তাড়া করছে কখন নোটিশ আসে বাঁধ কর্তৃপক্ষের এবং সরিয়ে নিতে হবে ঘরটি।

আরো পড়ুন:
চৌগাছায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে মতবিনিময়
ক্ষেতলারে হস্ত ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ১০ দিন শেষে সমাপ্ত

চিন্তা আর ভাবনায় থাকা অসহায় এই মোকলে রানী বলেন, ‘ঘর ভাঙ্গি দিলে মুই কই যাইম বাহে, মোর তো একনা জায়গাও নাই’। তিনি আরো বলেন, দুপুরে দোকান খুলি পিঁয়াজি ও গুলগুলি তৈরির জিনিসপত্র বাকি নেঁও। বিক্রি করি সবার টাকা পরিশোধ করি ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা রোজগার হয়, তাই দিয়েই খাওয়া পরা, এর উপর নাতির পড়াশুনা, নাতনির খরচ। এলাকাবাসী বলেন, মোকলে রানীর ভাজা পিয়াজি ও গুলগুলি বেশ মজা হয় তাই শুধু গ্রামের নয় দুর থেকে লোকজন আসে তা খেতে। কিন্তু তার কোন জমানো টাকা নেই তাই দোকান খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাকি নেয়। পড়ে সবার টাকা পরিশোধ করে যা থাকে তা দিয়েই কষ্ট করে চলছে।

তারা আরো বলেন, যদি সরকারের পক্ষ থেকে তাকে জায়গাসহ ঘরের ব্যবস্থা করা সহ পুজিঁর ব্যবস্থা করে দেয়া হতো তাহলে তার ও পরিবারের কষ্ট দুর হতো। মোকলে রানীর দাবি সরকারের পক্ষ থেকে একখন্ড জমি, একটি ঘর তাহলে তিনি বাকি জীবন একটু শান্তিতে কাটাতে পারেন। ভয় যেন না থাকে ঘর ভাঙ্গার। কথা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো তার পাশে দাঁড়াতে।

আগস্ট ২৮.২০২১ at ২০:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ফহ/জআ