সাভার ও ধামরাইয়ে হাউজিং সোসাইটি ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রবাহমান নদী ও খাল দখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে নদী হারাচ্ছে গতিপথ। অনেকস্থানে বিলিন হয়ে গেছে খড়স্ত্রোতা খাল। ক্ষীণ হয়ে যাওয়া নদী এখন মৃত প্রায়। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বন্ধ হয়নি নদী দখল।
জানা গেছে, সাভার উপজেলায় ১২ টি এবং ধামরাই উপজেলায় ১৬ টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলা দু’টির নদী ও খাল মৃত প্রায়। অনেক এলাকায় মিলিয়ে গেছে খালের অস্তিত্ব। এক সময় এ জনপদ নদীকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠেছিল। এখানকার কৃষি ও শিল্পও একসময় নদীনির্ভর ছিলো। বংশাই (বংশী), গাজীখালী, ধলেশ্বরী, কাকিলাজানি, কাজীগাং, হিরানদী, তুরাগ নদী. ধলেশ্বরী নদী. বুড়িগঙ্গা নদী. গাজীখালী নদী, কর্ণপাড়া খাল, কাতলাপুর ও দরিয়ার পুরে বৈরাগীর খাল, হেমায়েতপুরে বামনি খাল, কাটাখালী, আশুলিয়ায় নয়নজুড়ি খাল। পাথালিয়ায় কর্ণপাড়া খাল, বিল বাঘিল, ধলাই বিল, পাকুরিয়া বিল, তাতী বিল, শুকনা বিল, রইপতা বিল, নোয়াদ্দা খাল, রক্তারপুর খাল, নয়ারহাটের যোগী-জাঙ্গাল (জুগী জঙ্গল) খাল, সভ্যখালিসহ অনেক নদী ও খাল এখন মৃত প্রায়। বেশীরভাগ খাল দখলদারদের কবলে পরে অস্তিত্ব হারিয়েছে।
সাভার উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বংশী নদীর ৬২জন দখলদারদের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নদীটি এখনও দখল মুক্ত হয়নি।
দেখা গেছে, নদী ও খালের তীরে আকসির নগর, যুবক হাউজিং, ধানসিড়ি ও সহ কয়েকটি হাউজিং প্রকল্প গড়ে উঠেছে। হেমায়েতপুরে সিটি হাউজিং, সুগন্ধা হাউজিং, জমজম নূর বিল্ডার্স, আশুলিয়ায় আমিন মডেল টাউনসহ অনেক হাউজিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও সাভার ও আশুলিয়ায় গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প কল-কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নদী ও খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সাভার ও ধামরাই উপজেলায় হাউজিং কোম্পানীগুলো রাতারাতি মাটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে প্রবাহমান খাল। এসব খালের অস্তিত্ব এখন বিলিন হওয়ার পথে।
এদিকে বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদীর তীর দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করায় নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।
নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বংশী নদীর দখলদারদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে ৬২ জন দখলদারের নাম রয়েছে, যা অসম্পূর্ণ। ছোট হলেও ওই তালিকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি, সরকারি দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে।
সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব জানান, সাভার, আশুলিয়ায় নদী ও খাল দখলকারীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, দ্রæত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দখল মুক্ত করা হবে। নয়নজুড়িসহ কয়েকটি খাল দখল হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন। দুর্ভোগে পরেছেন হাজার হাজার মানুষ।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবির এ ব্যাপারে বলেন, সারা বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সাভার ও ধামরাইয়ে স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এলাকার সচেতন মানুষ যদি কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তবে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মুক্ত করা হবে দখল হয়ে যাওয়া নদী ও খাল।
আগষ্ট ১২.২০২১ at ১৮:০২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সহ/জআ