চিলমারীতে ইজিপিপি’র কাজে ব্যাপক অনিয়ম

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী(ইজিপিপি)’র ওয়েজ এবং নন ওয়েজ প্রকল্প ঘিরে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।২০২০-২১ অর্থ বছরে দুই দফায় দেয়া ওয়েজ ও নন ওয়েজ বরাদ্দের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গৃহীত প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার ১০৬টি প্রকল্প কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ প্রকল্পের অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানাগেছে,২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি) প্রকল্পের বিপরীতে ২ধাপে ৮০কর্ম দিবসের মধ্যে ৬৫কর্মদিবস কাজ করিয়ে ওয়েজ কষ্টের ৯৪টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ২কোটি ৬০লাখ টাকা এবং নন ওয়েজ ১২টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ১১লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে,উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আমজাদের বাড়ী হতে আবুল হকের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করন বাবদ ওয়েজ কষ্টের ২লাখ ৪০হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

বাস্তবে সে রাস্তায় কোন মাটির কাজ করা হয়নি। ১নং ওয়ার্ডের রমনা ষ্টেশন হতে আমজাদের বাড়ী যাওয়া রাস্তার দক্ষিণ পাশ্বে গাইড ওয়াল নির্মাণ বাবদ নন ওয়েজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৯৩হাজার ২১০টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে কোন গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়নি। একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শহিদুল আর্মির বাড়ী হতে আমজাদের বাড়ী যাওয়ার রাস্তায় প্যালাসাইডিং নির্মাণ বাবদ ৭৪হাজার ৪৯৯ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাস্তবে সেখানে দেখা গেছে আমজাদের বাড়ীতে কয়েকটি প্লেট ও খুটি তৈরী করা হয়েছে মাত্র।

উল্লেখ্য ওই স্থানে নাম পাল্টিয়ে একই জায়গায় দুই প্রকল্প দেয়া হয়েছে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চড়েয়ারপাড় মোড় হতে হালাবট পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ ওয়েজ কষ্টের ৩লাখ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বাস্তবে সেখানে কোন মাটি ফেলা হয়নি। চড়েয়ারপাড় বাধের পূর্ব পাশ্বে মনজুর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় প্যালাসাইডিং নির্মান বাবদ নন ওয়েজের প্রথম পর্যায়ে ৫৫হাজার ৪৫১টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে প্যালাসাইডিং নির্মান করা হয়নি।

৩নং ওয়ার্ডের চড়–য়াপাড়া বটতলা হতেদুলুর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করণ ও ময়নার খামার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সরকার পাড়া বাধ পর্যন্ত রাস্তায় সরকারপাড়া গ্রামের দেলাবরের বাড়ীর পূর্ব পাশ্বে প্যালাসাইডিং নির্মাণ বাবদ নন ওয়েজের ৭৯হাজার ২৬৩টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।ওই প্রকল্পে রাস্তায় কোন মাটি কাটা হয়নি এবং দেলাবরের বাড়ীরপূর্বপাশ্বে ৩বছর আগের কোন এক প্রকল্পের প্যালাসাইডিং দেখা গেছে। চিলমারী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ঢুষমারা গ্রামের মসজিদের মাঠে মাটি ভরাট বাবদ ওয়েজ কষ্টের ২লাখ ৭২হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

বাস্তবে সেখানে মাটি ভরাট করা হয়নি।ওই মসজিদেরক্যাশিয়ার আনছার আলীসহ অনেকে বলেন,মসজিদের জমানো অর্থ দিয়ে মাঠে মাটি ভরাট করা হয়েছে।কড়াইবরিশাল বাজারে ল্যাট্রিন নির্মাণ বাবাদ নন ওয়েজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫৬হাজার ৮০১টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে কোন ল্যাট্রিনের অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি।একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ঢুষমারা গ্রামের মসজিদের মাঠে প্যালাসাইডিং নির্মাণ বাবদ ৩৬হাজার ৫২টাকা বরাদ্দ দেয়াহয়েছে।

ওই মসজিদের পাশ্বে নিম্নমানের ১হাজার ইট রাখতে দেখা যায় যা প্যালাসাইডিং নির্মাণের জন্য বলে জানাগেছে। অষ্টমীরচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নটারকান্দি মৌজার আছমতের বাড়ী হতে পূর্ব দিকে কাঠের ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করন বাবদ ওয়েজ কষ্টের ৩লাখ ৮৪হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বাস্তবে সে রাস্তায় কোন মাটির কাজ করা হয়নি। ৩নং ওয়ার্ডের নটারকান্দি মৌজার আছমতের বাড়ী হতে পূর্ব দিকে কাঠের ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তার নায়েব আলীর বাড়ী সংলগ্ন পশ্চিম দিকে প্যালাসাইডিং নির্মাণ বাবদ নন ওয়েজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১লাখ ৫৬হাজার ৩৬৮টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের স্থলে পুরাতন প্যালাসাইডিং দেখা গেছে।ওই ওয়ার্ডের সদস্য মো.ফুল মিয়া বলেন,প্যালাসাইডিংটি আগে তৈরী করেছি,পরে প্রকল্প ধরানো হয়েছে।একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গোয়ালিপাড়া জামে মসজিদ হতে উত্তর দিকে ছামসুলের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় প্যালাসাইডিং নির্মাণ বাবদ নন ওয়েজ ২য় পর্যায়ে ১লাখ
৩৩হাজার ৩৯৬টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাস্তবে সেখানে কোন প্যালাসাইডিং নির্মাণ করা হয়নি। ইউপি সদস্য ফুল মিয়া জানান,ওই প্রকল্পের কাজের জন্য অর্থ ছাড় করা হয়নি।

থানাহাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মাচাবান্দা প্রামানিকপাড়া ঈদগাহ মাঠ ভরাট এবং ঈদগাহ মাঠ হতে আমিনুলের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করণ বাবদ ওয়েজ কষ্টের ৪লাখ ২৪হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বাস্তবে সেখানে মাটি ভরাট এবং রাস্তা মেরামত করা হয়নি।

নয়ারহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খেরুয়ারচর মৌজার ইউনিয়ন পরিষদ হতে উত্তরে গুচ্ছগ্রাম
পর্যন্ত ও সাইদের বাড়ী হতে পশ্চিমে বাহাদুরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করন বাবদ ওয়েজ কষ্টের ২লাখ ৮৮হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।বাস্তবে সে রাস্তায় কোন মাটির কাজ করা হয়নি। খেরুয়ারচর মৌজার ইউনিয়ন পরিষদ হতে উত্তরে গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত ও সাইদের বাড়ী হতে পশ্চিমে বাহাদুরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় আবুল দেওয়ানির বাড়ীর সামনে রিং কালভার্ট নির্মাণ বাবদ নন ওয়েজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৮৯হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে সেখানে কোন রিং কালভার্ট নির্মান করা হয়নি।একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের খেরুয়ারচর মৌজার গুচ্ছগ্রাম হতে দক্ষিণে কেশমতের বাড়ীর পাশ্বে ইউড্রেন নির্মাণ বাবদ ৭১হাজার ২৬৩টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাস্তবে সেখানে কোন ইউড্রেন লক্ষ করা যায়নি।

অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী(ইজিপিপি)তে উপজেলার ৬ইউনিয়নে মোট ১হাজার ৯শ ৯৬জন শ্রমিক জনপ্রতি প্রতিদিন ২শ টাকা হারে ৪০কর্মদিবস করে দুই পর্যায়ে মোট প্রায় ৩কোটি ২০লাখ টাকা মজুরী পাওয়ার কথা কিন্তু ২পর্যায়ে ১৫দিনের মজুরী ফেরত যাওয়ায় ৬৫দিনের মজুরী২কোটি ৬০লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যা ওয়েজ কষ্ট হিসাবে ৬ইউনিয়নে মোট ৯৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের তত্বাবধানে বাস্তবায়ন করার কথা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জন প্রতিনিধিদের তদারকির অভাবে প্রায় পৌনে ৩কোটি টাকার ১০৬টি প্রকল্প শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই থেকে যায় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো.মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন,আমাদের হাতে ইজিপিপি’র শ্রমিকদের নাম পরিবর্তনের ক্ষমতা না থাকায় তারা জনপ্রতিনিধিদের মুল্যায়ন করেন না ফলে শ্রমিকরাপ্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করে না।

আরো পড়ুন:
ফুলবাড়ীতে তরুণদের উদ্যোগে ৫ম দিনেও চলছে বিনামূল্যে করোনা টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম
পাইকগাছায় নগদ টাকা ও সরঞ্জমাদিসহ ৫ জুয়াড়ি আটক

নন ওয়েজের দুটি কাজ আছে সে দুটি করে দেয়া হবে।অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী(ইজিপিপি) প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী(প্রকল্প) মো.আতিকুজ্জামান বলেন,নন ওয়েজ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করা হয়েছে,কাজ শেষ হলে পরিদর্শন স্বাপেক্ষে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করা হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো.কোহিনুর রহমান বলেন,প্রকল্পের ওয়েজ কষ্টের কাজে কিছুটা ত্রুটি হলেও শ্রমিকদের নিকট থেকে তো টাকা ফেরত চাওয়া যাবে না। তবে নন ওয়েজের কাজ না করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাহবুবুর রহমান বলেন,প্রকল্পের কাজ না করার সুযোগ নেই। কাজ না করে থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আগষ্ট ০১.২০২১ at  ২০:০৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ ফহ/জআ