ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র প্রস্তুত ও প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ৪ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

পাইকগাছায় এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয় পত্রের ভ্রম সংশোধনের নামে ভূয়া আইডি কার্ড প্রস্তুত ও পরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় অন্তত ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বিষ্ণু পদ সরদার।

অভিযোগে জানানো হয়, উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের মৃত ভরত চন্দ্র সরদারের ছেলে বিষ্ণু পদ সরদারের জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ ১০/৭/১৯৫৭ এর স্থলে ভুলবশত ১০/৭/১৯৬৬ হিসেবে প্রস্তুত হয়। জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখের ভূলে তিনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখীন হলে তা সংশোধনের জন্য পাইকগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করণে নিযুক্ত চারবান্ধা গ্রামের মৃত খোসাল মন্ডলের ছেলে ও স্থানীয় ১২৯ নং শিবসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পংকজ মন্ডলের দ্বারস্থ হন। এসময় পংকজ তার সকল কাগজ পত্র নিয়ে সংশোধনী ফর্ম পূরণ করে তাকে সোনালী ব্যাংকে ২৫৩ টাকা জমা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী বিষ্ণু পদ সোনালী ব্যাংকে উক্ত টাকা জমা দিয়ে রিসিভ সংগ্রহ করেন।

এর কিছুদিন পর অভিযুক্ত শিক্ষক পংকজ মন্ডল তার ব্যবহৃত ০১৯৯০-৫৭৪৯৩৯ নং মোবাইল থেকে বিষ্ণু পদ সরদারের ০১৭২১-৯৪৭৫৬৩ নং মোবাইলে কল দিয়ে পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধনে অফিসিয়াল সমস্যার কথা বলে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। জরুরী জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনে বিষ্ণু পদ কোন প্রতিবাদ না করে তিন কিস্তিতে পংকজকে ৩২ হাজার টাকা প্রদান করেন।

এর কিছু দিন পর গত ১২/১০/২০২০ তারিখে পংকজ চারবান্ধা বাজারস্থ জয় কম্পিউটার’র জয়দ্রত রায়ের নিকট থেকে বিষ্ণু পদকে একটি জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করেন। এরপর ১৫ অক্টোবর ২০’ পংকজ তাকে মোবাইলে বলেন, তাকে দেওয়া পরিচয় পত্রটি কোথাও দেখালে সমস্যায় পড়বেন বলে জানিয়ে পাশে থাকা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তির সাথে বিষ্ণু পদকে কথা বলিয়ে দেন। এসময় তিনি তাকে গ্রেফতারের হুমকি দিলে ভয়ে ফের তিনি শিক্ষক পংকজ এর স্মরণাপন্ন হন। এসময় তিনি গ্রেফতার এড়াতে বিষ্ণুর নিকট ৫ লাখ টাকা দাবি করে মোবাইলে এসএমএস করে ৫টি বিকাশ একাউন্ট নম্বর পাঠান। পুলিশের ভয় ও সম্মানহানির ভয়ে নিরুপায় বিষ্ণু পদ বিষয়টি কাউকে কিছু না জানিয়ে রুপালী ব্যাংক গড়–ইখালী বাজার শাখা থেকে উত্তোলন করে গত ইং ৯/১১/২০ তারিখে পংকজের দেওয়া ০১৯৭৯-৬১৩৩২৩ নং বিকাশ একাউন্টে ২৫ হাজার, ০১৯৫৪-৬৬০৬৬৮ নং একাউন্টে ২৫ হাজার, ০১৮৭৪-৩৪৫৫০৯ নং একাউন্টে ২৫ হাজার, ০১৮৭১-২৯৪৬৫৩ নং একাউন্টে ২২ হাজার এবং ০১৭১০-৩২১৯৩৩ নং বিকাশ একাউন্টে ২৫ হাজারসহ মোট ১ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রেরণ করেন।

আরো পড়ুন:
ঘূর্ণিঝড় ” ইয়াস” ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
পাইকগাছায় ঠওঠঙ ব্র্যান্ড শপের উদ্বোধন

এরপর ঐ দিন বিকেলে ফের ০১৭১৪-৯১৩০৮৮ নং মোবাইল থেকে বিষ্ণু পদ সরদারের ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করে ঢাকাস্থ প্রধান নির্বাচন অফিসের কতিপয় নয়ন বাবু পরিচয় দিয়ে আইডি কার্ডে ভুল আছেসহ নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি প্রদর্শন করা হয়। এঘটনায় তিনি ফের পংকজ এর স্মরণাপন্ন হলে পংকজ এবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলে তার সব সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। নানা শংকায় বিষ্ণু পদ সরদার এক প্রকার বাধ্য হয়ে তার পরামর্শে পূর্বের একই ৫টি বিকাশ নম্বরে গত ১১/১১/২০ তারিখে খরচ সহ ৩০,৬০০ টাকা করে মোট ১ লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার ও প্রথম নম্বরে ১০/১১/২০২০ তারিখে ৩০,৬০০ টাকা প্রদান করেন। রূপালী ব্যাংক পাইকগাছা শাখা থেকে ঐ টাকা উত্তোলন করে তা পাঠানো হয়।

সর্বশেষ পাইকগাছা নির্বাচন অফিসে দাখিল করা জাতীয় পরিচয় পত্রের সংশোধনী আবেদনের পরি প্রেক্ষিতে বিষ্ণু পদ সরদারের আইডি কার্ড বের হলে তার মনে পংকজের প্রতারনার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়।

এ সকল ঘটনা নিয়ে বিষ্ণু পদ তার পরিবারের লোকদের সাথে আলোচনা করে নিশ্চিত হন যে, তিনি প্রতারিত হযেছেন। সর্বশেষ এসব ঘটনায় পংকজের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন।

এ ব্যাপারে ১২৯ নং শিবসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পংকজ মন্ডলের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।