ভাইয়ের শিশুপুত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি; ৫ আসামি গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় চাচাতো ভায়ের শিশুপুত্রকে অপহরণের পর ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা ভুক্তভোগী শিশুটির চাচা মোঃ কাজী সুমনসহ ৫ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেইসাথে অক্ষত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়ছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার মোঃ কাজী লালের ছেলে মো. কাজী সুমন (৩০), হাউসপুর ক্যানেলপাড়ার মো. মিজানের ছেলে মো. শাওন (২৪), একই এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে মো. আকাশ (২০), হেমায়েতপুর রাজারপাড়ার মোঃ সেলিমের স্ত্রী মোছা. রাশেদা খাতুন (৩৫) এবং আসাননগর গ্রামের মৃত আকমল হোসেনের ছেলে মোঃ খোরশেদ আলম (২৪)। তারা সকলেই চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা।

তাদের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১লা এপ্রিল) দুপুরে আলমডাঙ্গা থানা চত্বরে এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে পুরো ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর।

তিনি জানান, বুধবার (৩১শে মার্চ) বিকাল ৪:১৫-৪:৩০ মিনিটের মধ্যে আলমডাঙ্গা পৌরশহরের কলেজপাড়া থেকে মোঃ কাজী সজীবের ৪ বছর বয়সী শিশুপুত্র ফারহান অপহৃত হয়। অপহরণের পর শিশুটির বাবার নিকট অজ্ঞাত মোবাইল নাম্বার থেকে কল করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্রটি। পরবর্তীতে সেই মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়না। অপহরণ ঘটনার ঘণ্টা তিনেক পর সন্ধ্যার সময় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান শিশুটির বাবা মোঃ সজীব।

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ তাকে দ্রুত একটি জিডি করতে বলে শিশুটির খোঁজে উদ্ধার অভিযানে নামে। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে পুলিশ দেখতে পায় শিশু ফারহানের হাতে চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে তাকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে নিয়ে দু’জন ব্যক্তি দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

সিসিটিভি’র ফুটেজ ও মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জসহ পুলিশের একটি চৌকস টিম তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বুধবার রাত ৩টার দিকে আলমডাঙ্গার ক্যানেলপাড়ার জামাত আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া আসামি মোঃ শাওন ও রাশেদা খাতুনকে গ্রেফতারপূর্বক অচেতন অবস্থায় শিশু ফারহানকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয় পুলিশ।

উদ্ধারের পরই তাকে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুটি যেন চিৎকার করতে না পারে এজন্য অপহরণকারীরা তাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেছিলো। বুধবার রাতেই শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। শিশুটির বাবা মোঃ সজীব সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর থেকে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।

তবে বিষয়টি আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানানোর পর তারা কঠোর পরিশ্রম করে আমার শিশুপুত্র ফারহানকে মুক্তিপণ ছাড়াই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আমি এই অভিযানে অংশগ্রহণ করা সকল পুলিশক সদস্যের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামিদের দখল হতে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ