পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে নির্ঘুম রাত কাটছে পাড়ের বাসিন্দাদের

খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে ২নং কপিলমুনি ইউনিয়ানের মালথ গ্রামের আরজ মোড়লের বাড়ী হতে পদ্মাকান্দার সাবেক পিচের রাস্তার ধার হয়ে সিলেমানপুর পাল পাড়া অভিমূখী রাস্তা পর্যন্ত।

ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে অসংখ্য ঘরবাড়ী, গাছ-গাছালী, ফসলের ক্ষেত নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। প্রতিদিন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এ এলাকার বাসিন্দারা। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আংশকা করছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।মালথ ও সিলেমানপুরের নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।

সরেজমিন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, ভারী বর্ষণে ও কোটালের প্রভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার ২নং কপিলমুনি ইউনিয়ানের মালথ গ্রামের আরজ মোড়লের বাড়ী হতে পদ্মাকান্দা সাবেক পিচের রাস্তার ধার হয়ে সিলেমানপুর পাল পাড়া অভিমূখী রাস্তা পর্যন্ড কপোতাক্ষ নদের প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়ানের মালথ, সিলেমানপুর পালবাড়ির অসংখ্য ঘর-বাড়ী, মূল্যবান গাছ-গাছালী, ক্ষেতের ফসলি জমি, নদীতে বিলিন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। ভাঙ্গনে একেক জনের ৫০ থেকে ১শত বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তার পাশে,আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে, অনেকে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। মালথ ও সিলেমানপুরের মোকাম মোড়ল, গনি, পাগল, জব্বার মোড়ল, সৈয়দ মোল্যা, আঃ জব্বাররা জানান, অনেক আগে থেকেই ভাঙ্গন সৃষ্টি হলেও এতোটা ভয়াবহতা ছিল না। সম্প্রতি ভারী বর্ষণের ফলে ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। কেয়ারের রাস্তা অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সম্প্রতি ভয়াবহ ভাঙ্গনে অসংখ্য ঘর-বাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।

দুলাল, গনেশরা জানান, ৩০/৪০ পরিবারের বাড়িঘর নদীতে চলেগেছে। বাকী যারা আছি ভয়াবহ ভাঙ্গনের কারণে প্রতিদিন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। আমরা সাহায্য চাই না। বসবাসের নিশ্চয়তা চাই, চাই ভাঙ্গনরোধ। এদিকে শনিবার দুপুরে কপিলমুনি মালথ ও সিলেমানপুরের নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। এসময়ে সাথে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়াদ্দার সহ স্থানীয় এলাবাসী।

পরিদর্শন কালে ইউএনও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের আশ্বাস, ১হাজার বালি ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা, টেঁকসই ভেঁড়িবাধ নির্মানের আশ্বাস দেন।একই সাথে এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করেন। ইউপি সদস্য এজাহার আলী গাজী জানান, স্থানীয়ভাবে কয়েকবার বাঁশের পাইলিং করে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভাঙ্গনের ভয়াবহতা এতটাই বেশি কোন পাইলিং কাজে আসছে না।

ইউপি চেয়ারম্যান কওসার আলী জোমাদ্দার জানান, যারা ক্ষতিগ্রস্থ তাদের যেন পুর্নবাসন ব্যবস্থা এবং এখন যারা আছে তারা যাতে থাকতে পারে তাহার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম সিদ্দিকী জানান, ভাঙ্গনকৃত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৬শ মিটার ভাঙ্গনকৃত স্থানে ১হাজার বালি ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১১:৪৭:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আইএইচ/এমএআর