ধান ক্রয় প্রক্রিয়ার শুরুতেই প্রশাসনের উদাসীনতা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমের ন্যায্য দামে কৃষকের ধান ক্রয় প্রক্রিয়ার লটারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ার শুরুতেই প্রশাসনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা।

সোমবার (৮ জুন) উপজেলা পরিষদ সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত বোরো ধান ক্রয়ের লটারি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার।

ধান ক্রয়ের লটারি অনুষ্ঠানে এমপিসহ অতিথিরা। ছবি: দেশ দর্পণ

বক্তব্যের শেষে লটারি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ। এর পরপরই তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগে সাংবাদিকদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। এমপি সেখান থেকে চলে গেলেও আলোচনা চলতে থাকে। বোরো সংগ্রহের এই অনুষ্ঠানে কোনো কৃষক প্রতিনিধির উপস্থিতি দেখা যায়নি। উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা ও সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, সরকারের বোরো ধান ক্রয় প্রক্রিয়ার খবর কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাতে এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে তালিকা টানিয়ে স্বচ্ছভাবে যাচাই বাছাই করতে প্রশাসন কতটা ভূমিকা রেখেছে? জবাবে কোনো সদুত্তর আসেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইউএনও শারমিন আক্তারকে খানিকটা বিচলিত দেখা যায় বলে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান। তবে দাবি করা হয়, কৃষকের যে তালিকা নিয়ে লটারি করা হচ্ছে সেটি শতভাগ স্বচ্ছ।

এ সময় সাংবাদিকেরা বলেন, রীতি অনুসারে লটারি অনুষ্ঠানে ও ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রেস কনফারেন্সে সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ করা হয়নি। এমনকি এ সম্পর্কিত কোনো তথ্যই জানানো হয়নি স্থানীয় সাংবাদিকদের। যারা উপস্থিত হয়েছিলেন তারা কেউ তাৎক্ষণিক আমন্ত্রণে, আবার কেউ কেউ পেশাগত দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা থেকে সেখানে গেছেন।

প্রশাসনের এমন গাফিলতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপস্থিত অনেকেই। অনুষ্ঠান শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সরবারাহ না করায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তা চাওয়া হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সংশ্লিষ্টদের কৃষক বাছাই প্রক্রিয়া, লটারি প্রক্রিয়া ও সরকারি দাম এবং ক্রয় লক্ষমাত্রা উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি সরবারাহের নির্দেশ দেন। এর ঘণ্টাখানিক পর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম তার হাতে লেখা একটি কাগজে ইউনিয়ন ভিত্তিক কোটার পরিমাণ লিখে সেই কাগজ ধরিয়ে দেন সাংবাদিকদের হাতে।

সরবারাহ করা কাগজটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি না হওয়ায় সাংবাদিকরা সেটি ফেরত দেন প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে। প্রশাসনের উদাসীনতা আর অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সংবাদকর্মীরা বেরিয়ে আসেন অনুষ্ঠানস্থল থেকে। এ ধরনের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে উপজেলার সংবাদকর্মীদের আহ্বান করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

আরও পড়ুন:
হচ্ছে না লকডাউন, সরিয়ে ফেলা হল সব তথ্য
অক্সিজেনের পেছনে ছুটছে মানুষ
পিতা কারাগারে, মা খুন, শিশু রোহানের কান্না থামাবে কে?

এ বছর দৌলতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন ২৬ হাজার ৯১০ মে. টন হলেও ক্রয় লক্ষ্য মাত্রা ৮০০ মে. টন। যা আনুপাতিক হারে মোট উৎপাদনের ০.০২৯৭ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, গেল মৌসুমের ধান ক্রয় প্রক্রিয়া ও কৃষকের তলিকায় অনিয়ম নিয়ে মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। যেখানে উপযুক্ত তথ্য উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকরা। এবারও ন্যায্য দামে সরকারের এই ধান ক্রয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রকৃত কৃষকরা। ইতোমধ্যে কৃষিকার্ড ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে উপজেলাজুড়ে।

কৃষকের নাম ব্যবহার করা হলেও মূলত শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটই এই ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়াসহ সরকারের এ ধরনের সব কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করে অাসছে যুগের পর যুগ। অনিয়ম ঠেকাতে দুই বছর ধরে লটারি সিস্টেম চালু করা হলেও তা কাজে আসছে না। মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তির যোগসাজশে নিষ্পেষিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষকরা।

জুন ০৮, ২০২০ at ২৩:৪৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসজে/তআ