অক্সিজেনের পেছনে ছুটছে মানুষ

করোনায় আক্রান্ত না হয়েও অক্সিজেন সিলিন্ডারের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছেন মানুষ। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে হাসপাতালে জরুরি সেবা মিলবে কি-না এ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে অনেকের মনে। তাই আগাম মজুদের চেষ্টা। আর এ সুযোগে সিলিন্ডারসহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিরও অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

মূলত, অক্সিজেনের অভাবে জরুরি বিভাগে বা ওয়ার্ডে রোগী মারা যাওয়ার খবরগুলো মানুষের মধ্যে এক ধরণের নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দেয়। তাই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঘরে অক্সিজেন মজুদের জন্য স্বচ্ছল থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও ছুটতে শুরু করে। যদিও চিকিৎসকরা বিষয়টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান। এরই মধ্যে বাজার থেকে উধাও হতে থাকে সিলিন্ডার, অক্সিপালস মিটার ইত্যাদি। দামও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

সিলিন্ডারের পাশাপাশি অক্সিজেন তৈরির এক ধরণের যন্ত্র ‘কনসেনটেটর’ এর দামও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ঢাকা ফাইবার নেট নামে একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী জিয়াউদ্দিন কায়সার জানান, সিলিন্ডার বারবার রিফিল করার ঝামেলা এড়াতে তিনি একটি কনসেনট্রেটর কিনতে চেয়েছিলেন। বিএমএ মার্কেটের বিক্রেতা সাগর তার কাছে ইউওয়েল ব্র্যান্ডের একটি কনসেনটেটরের দাম ৪৫ হাজার টাকা চান, যা আগে ছিল ৩৫ হাজার টাকা। সেদিন মার্কেট বন্ধের সময় হয়ে এলে দোকানি তাকে পরদিন যেতে বলেন। কিন্তু পরদিন গেলে সাগর জানান, সেটি বিক্রি করা যাবে না। এর চেয়ে কম মানের একটি কনসেনটেটর নিতে হলে এখন ৬৫ হাজার টাকা দিতে হবে।

দেশের নামকরা অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডের ১ দশমিক ৪ ঘন লিটারের একটি সিলিন্ডার, অক্সিফ্লোমিটার, ট্রলি, মাস্ক ও কেনুলাসহ প্যাকেজের দাম ছিল ২৬ হাজার ১৭৭ টাকা। ২৫ হাজার টাকা জামানতে সেটি প্রতিদিন ২৯টাকা হিসেবে ভাড়া নেয়া যেত। সম্প্রতি এর দাম সামান্য বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৫০০ টাকা করা হলেও তা সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন অনলাইন ও মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা তা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। নার্সিং হোম বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গতকাল রবিবার লিন্ডের এমন একটি প্যাকেজের দাম হাঁকেন ৩৯ হাজার টাকা। আগাম টাকা পরিশোধের এক সপ্তাহ পর সেটি পাওয়া যাবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মী। যদিও আগে প্রতিষ্ঠানটি টেলিফোনে অর্ডার করার দুই ঘণ্টার মধ্যে সিলিন্ডার বাসায় পৌঁছে দিত।

সেইভ লাইফ নামে আরেক প্রতিষ্ঠানের কর্মী নুসরাত জানান, চীনে তৈরি ভাল মানের অক্সিজেন সিলিন্ডারের এখন বাজার মূল্য ২৯ হাজার টাকা। আগে সেটিই তারা ১৬ হাজারে বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে পি-৪ এর সত্ত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দিন জানান, করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে সিলিন্ডারের চাহিদাও বাড়ছে। ফলে তাদের স্টক শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্য কারো কাছ থেকে সিলিন্ডার এনে দিলে দাম বেশি পরে। তিনি জানান, প্রতিদিন সিলিন্ডার চেয়ে এত বেশি ফোন আসছে যে, তাদের হোম ডেলিভারির জন্য নির্ধারিত ফোনটি বন্ধ রাখতে হয়।

অক্সিজেন সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্রের দাম নিয়ে বাজারে নৈরাজ্য অবস্থা দেখা গেলেও এখনো সরকারের কোনো সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। অন্যদিকে এভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য কর্মীর তত্ত্বাবধান ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহারের নানা ঝুঁকি রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে কর্মরত ডা. আমানউল্লাহ জানান, বেশি অক্সিজেন নিলে তা শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগির খিঁচুনি, পেশিতে ঝাঁকুনি হতে পারে। চোখে না দেখা, কাশি, ব্যথা এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষতি হতে পারে। যা অনেক সময় খারাপ কিছুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে রাখতে আগুনের ঝুঁকিও বাড়ে বলে জানান তিনি।

জুন ০৭, ২০২০ at ২১:৫৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/তআ