ভিজিডি কার্ডে অনিয়মের খবর, প্রতিবাদে চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন

কুষ্টিয়ার উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ড প্রদানে নানা অনিয়মের অভিযোগে শনিবার (১৬ মে) বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবরকে ষড়যন্ত্র মূলক দাবি করে এবং খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার (১৭ মে) সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদ আনসারি বিপ্লব।

বেলা ১২টায় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান সাইদ আনসারি বিপ্লব বলেন, আমার জানা মতে কোনো স্বচ্ছল পরিবারকে ভিজিডি কার্ড করে দেয়া হয়নি। যে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের স্ত্রীর নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তালিকা প্রণয়নকারী ওয়ার্ড কমিটির কাছে তাকে দুস্থ বলে মনে হয়েছে। কার্ড বরাদ্দের সময় ওই পরিবারটিকে অস্বচ্ছল বলেই ওয়ার্ড কমিটি শনাক্ত করেছে।

সম্মেলনে চেয়ারম্যান বলেন, মাস খানিক আগে চাল উত্তোলনে নানা জটিলতার প্রেক্ষিতে আমরা দাপ্তরিকভাবে সকল কার্ড সংগ্রহ করে পরিষদে জমা রেখেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও অবগত রয়েছেন। অসঙ্গতি থাকলে সেগুলো খতিয়ে দেখে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। ভিজিডি কার্ড প্রাপ্যদের তালিকায় কোনো ধরনের দুর্নীতি প্রমাণ হলে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের দেয়া ভিজিডি কার্ডের সুবিধাভোগীরা যার যে কার্ড সেই কার্ডেই নিয়মিত চাল তুলে আসছেন এবং নিয়মানুসারে তারা টাকাও জমা দিয়ে আসছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজের ভিজিডি কার্ড অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়ে চাল উত্তোলনের অভিযোগও ভোক্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন:
নিউজ প্রকাশের জেরে গাইবান্ধায় দুই সাংবাদিকের উপর হামলা
রোজাদারের মাঝে শাহীন চাকলাদের রাতের খাবারসহ ইফতার বিতরণ
যে দুটি ওষুধে করোনাভাইরাস দমনে বিস্ময়কর সাফল্য

রাশিদুল ইসলাম নামে এক মেম্বারের স্ত্রীর নামে ভিজিডি কার্ডের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, রাশিদুল বিপর্যস্ত একজন মানুষ। তিনি এলাকায় থাকেনও না। কোনো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের আত্মীয় বা পরিবার দুস্থ হলে তাকে ভিজিডি কার্ড দেয়া যাবে না এমন কোনো নিয়ম নেই। কাবের আলী নামে এক ট্রাক মালিকের মেয়ের নামে কার্ড ইস্যু করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি চেয়ারম্যানের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, একই ব্যাক্তির নাম একাধিক জায়গায় কার্ড থাকার বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। বিষয়টি দেখা হবে। তবে লেখার ক্ষেত্রেও ভুল হতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান দাবি করেন, ভিজিডি কার্ড ইস্যুতে অনিয়মের যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, কার্ড থেকেও চাল না পাওয়ার কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ৯২টি কার্ড ক্লোজ করেছি।

শনিবার (১৬ মে) প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান সাইদ আনসারি বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও প্রকাশিত খবরে আমি বা আমার পরিষদের কারো বক্তব্য নেয়া হয়নি, অভিযোগের সত্যতার ব্যাপারে জানতেও চাওয়া হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। এভাবে একতরফাভাবে খবর পরিবেশন করাটা কাম্য নয়। খবরটিকে ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে চেয়ারম্যান সাইদ আনসারি বলেন, আমার কিছু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এবং আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এতে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান চেয়ারম্যান সাইদ আনসারি বিপ্লব।

প্রসঙ্গত, শনিবার বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সরকারি নির্দেশনা না মেনে আড়িয়া ইনিয়নের সচ্ছল, পাকা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম, ইউপি সদস্যর স্ত্রীসহ তাদের আত্মীয় স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নারীরা ইতোমধ্যে খাদ্যশস্যও পেয়েছেন। ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র শ্রী মন্টু দাস অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী সেফালি দাসের নাম তালিকায় থাকার পরও তাদের বঞ্চিত করে প্রভাবশালী মহল তাদের নামের চাল প্রতি মাসে তুলে নিচ্ছে ।

আরও পড়ুন:
১২ দিনে ৫টি খুন, আটক হচ্ছে না আসামিরা
দেশে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’
মঙ্গলবার থেকে যশোরে ফের বন্ধ হচ্ছে দোকান ও মার্কেট

এছাড়া ৮নং ওয়ার্ডের কালিদাসপুর গ্রামের ফয়েজ সরদারেরর স্ত্রী রানী খাতুন, তালবাড়িয়া গ্রামের পিয়াদা আলীর স্ত্রী রোজিনা খাতুন, একই গ্রামের হাফিজুল মন্ডলের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন, কালিদাসপুর গ্রামের রেফেজ্জেল সরদারের স্ত্রী হামিদা খাতুন, ওমরপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী হাজেরা খাতুনসহ ইউনিয়নের অনেকের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকলেও তারা এ পর্যন্ত কোনো প্রকার খাদ্যশস্য পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকেই আবার জানেনও না তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ঘোড়ামারা গ্রামের কাবের আলীর তিন কক্ষের পাকা বাড়ি, বাড়িতে টেলিভিশন, ফ্রিজ, এমনকি একটি ট্রাকও আছে। অথচ তার মেয়ে লাকী খাতুন ভিজিডি কার্ড পেয়েছেন। এসব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি বলে ওই খবরে উল্লেখ করা হয়।

মে ১৭, ২০২০ at ২২:৩০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/তআ