করোনা আক্রান্ত দম্পতির বিষয়ে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার পিএসের বিবৃতি

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার ঢাকা থেকে পালিয়ে আসা দম্পতির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আ. ক. ম সরওয়ার জাহান বাদশার পিএস জিয়াউল কবির সুমন শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে সংসদ সদস্য এবং প্রশাসনের কী ভূমিকা ছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে। জিয়াউল কবির সুমনের বিবৃতিটি কিছুটা সম্পাদনায় পুরো তুলে ধরা হলো- করোনা আক্রান্ত রোগী কেন কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি হলো?

দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন থেকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলাম যে, একজন করোনা আক্রান্ত দম্পতি তাদের মেয়েকে গ্রামে নেওয়ার জন্য সকাল বেলায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিভিন্ন যানবাহনে এসে রাজবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছায়। সে কোনো প্রাইভেট গাড়িতে আসেনি। সংবাদটি পাওয়া যায় সম্ভাব্য সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে। সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। সে স্বীকার করে, সে ও তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। ঢাকায় তার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও পাঁচ বছরের মেয়ের চিকিৎসা পাবে না বলে ভয়ে পালিয়ে এলাকায় আসার চেষ্টা করছে। সেই মুহূর্তে তার সাথে অনেক চেষ্টা করে যোগাযোগ করা হয় এবং সে যেখানে আছে সেখানে অবস্থান করার অনুরোধ করা হয়।

আরো পড়ুন :
শিবগঞ্জে কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
চট্টগ্রামে ১১০টি পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে
গাইবান্ধায় ত্রাণের দাবিতে রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের অবস্থান

এরপর প্রশাসন, পুলিশ ও চিকিৎসকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে দৌলতপুর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ ভাই বিষয়টি অবহিত করেন এবং তাদেরকে কুষ্টিয়া অথবা ঢাকা নিয়ে যাওয়া যায় কিনা পরামর্শ করেন। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার যানবাহনের ব্যয় তিনি নিজেই বহন করবেন বলে অবগত করেন।

পরে প্রশাসন ও চিকিৎসকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আক্রান্ত রোগী যেহেতু ঢাকা থেকে বিভিন্ন যানবাহনে এসে রাজবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাতে যে সকল যানবাহন ও মানুষের সংস্পর্শে এসেছে সব গুলোই এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগ যাতে তাদের উন্মুক্ত চলাফেরায় অন্যান্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে এবং যেহেতু কুষ্টিয়াতে আইসোলেশন বেড ফাঁকা আছে তাই তাদেরকে কুষ্টিয়ার নাগরিক হিসেবে মানবিকতার দিক থেকে তার স্ত্রীর সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও পাঁচ বছরের মেয়ের দিক বিবেচনা করে এই হসপিটালে ভর্তি করা যায়, যদিও তারা সকল নিষেধাজ্ঞা আইন ভঙ্গ করেছে।

বিবৃতিতে জিয়াউল কবির মুমন আরো উল্লেখ করেন, আমরা যদি আক্রান্ত ব্যক্তির সংবাদ না পেতাম এবং সে ও তার পরিবার যদি আক্রান্তের তথ্য স্বীকার না করতো তাহলে সে যে সকল যানবাহন ও মানুষের সাথে সংস্পর্শ করে বাড়িতে এসে পৌঁছাতো তাহলে আমরা তখন কী বলতাম, সে ঢাকা থেকে এসেছে তাকে ঢাকা পাঠানো হোক অথবা তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হোক?

একটা কথা আমাদের মাথায় রাখা উচিত যে সাংসদ তার সাথে সরাসরি কথা বলে তাকে যেখানে আছে সেখানেই অবস্থান করতে না বললে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় গাড়ি পাঠানোর নিশ্চয়তা না দিলে সে আর কিছুক্ষণের মধ্যে কুষ্টিয়া হয়ে দৌলতপুরে ঢুকে পড়তো। তখন এর পরিণতি কি হতো এটা আমাদের অজানা নয়। সুতরাং পুরো তথ্য না জেনে অসম্পূর্ণ তথ্য কেউ ফেসবুক অথবা পত্রিকায় প্রচার করবেন না বলে আমরা আশা রাখি।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদী এলাকার ভ্যাগল মালিথার ছেলে তছিকুল ইসলাম (৩১) ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শিল্পী খাতুন (২৫) কর্মসূত্রে ঢাকায় অবস্থানকালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র শিশু সন্তান ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে তারা শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে দৌলতপুরে নিজ বাড়ির উদ্দেশে পালিয়ে আসার পথে ওইদিন বিকেলের দিকে রাজবাড়ীতে পুলিশের হাতে আটক হন।

একাধিক সূত্র মতে, এ ঘটনার পর রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে এই দম্পতিকে নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। রাজবাড়ীতে তাদের রাখতে অসম্মতি জানানো হয়। এদিকে কুষ্টিয়াতেও তাদের প্রবেশের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়। দুই জেলার মধ্যে এমন ঠেলাঠেলির একপর্যায়ে তাদের ঢাকায় ফেরত পাঠানোরও প্রস্তাব উঠে আসে। এ নিয়ে উভয় জেলার কর্মকর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশার হস্তক্ষেপে করোনা আক্রান্ত দম্পতিকে শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করা হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর বের হয়। সমালোচনা সৃষ্টি হয় ফেসবুকে। এ ঘটনায় জেলাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এপ্রিল ২৬, ২০২০ at ১৮:১৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর/এএডি