ত্রান চাইলে পেটাই, কাজ চাইলে পেটাই, প্রতিবাদ করলে পেটাই, ভাতা চাইলে পেটাই, পেটানোই তার অভ্যাস !

ত্রান চাইলে পেটাই। কাজ চাইলে পেটাই। প্রতিবাদ করলে পেটাই। ভাতা চাইলে পেটাই। পেটানোই তার অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে। হরহামেশা মেম্বরদের গাঁয়ে হাত তোলা এই চেয়ারম্যানের নাম কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস এক সময় চরমপন্থি দলের অস্ত্রধারী ক্যাডার ছিলেন। ভোল পাল্টে আওয়ামীলীগার সেজে হয়েছেন চেয়ারম্যান।

এখনো তার দেহরক্ষি হিসেবে বহাল রয়েছে পুলিশের মোস্ট ওয়ান্ডেট আসামী ছয়খাদা গ্রামের হাশেম আলী। দুধর্ষ এই হাশেম আলীর দিয়ে পরিষদের সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন চেয়ারম্যানের কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস। দোড়া ইউনিয়নের তিনজন মহিলা মেম্বরের লিখিত অভিযোগ থেকে কাবিল চেয়ারম্যানের অপকর্মের চিত্র ফাঁস হয়েছে। এই তিন মহিলা মেম্বর হলেন সাহিদা খাতুন, আয়েশা ও কাললী। তিন মহিলা মেম্বরই চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত ও গালিগালাজের শিকার হয়েছেন। তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক, কোটচাঁদপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওসির কাছে। কিন্তু কোন ফলাফল পান নি।

আরো পড়ুন :
তালতলীতে সাজাপ্রাপ্ত আসারি গ্রেফতার
ঠাকুরগাঁওয়ে আরো এক যুবক করোনায় আক্রান্ত
চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রীর আত্মহত্যা

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, কাবিল উদ্দীন চেয়ারম্যানের হাতে প্রথম মারধর কেয়ে হাসপাতালে যান ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বর রেজাউল ইসলাম। এরপর থেকে তিনি ধারাবাহিক ভাবে মহিদুল মেম্বর, কাকলী মেম্বর, আয়েশা মেম্বর ও সাহিদা মেম্বর। এর মধ্যে গত ১৩ মার্চ সাহিদা মেম্বরকে জুতাপেটা করে চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন। গত ১৬ এপ্রিল কাকলী ও আয়েশা মেম্বরকে চেয়ার তুলে মারা হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার দয়ারামপুর গ্রামের হতদরিদ্র শিলটু মিয়া ত্রান নিতে গিয়ে লাঞ্চিত হন চেয়ারম্যানের হাতে। সাহিদা মেম্বর অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস বেশির ভাগ মেম্বরদের কাজ দেন না চেয়ারম্যান। শতভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে খেয়ে ফেলেন। অথচ মেম্বরদের ভাতা দেন না। সরকারী নির্দেশনা মতে হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে ব্যাংকে জমা করতে হবে। সেখান থেকে মেম্বরদের ভাতা দিতে হবে। কিন্তু মেম্বররা ভাতা পাচ্ছেন না।

বয়স্ক, প্রতিবন্ধি, মাতৃত্ব ও বিধবা ভাতা নিতে বিশেষ কায়দায় টাকা নেওয়া হয়। ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বর শাহাজুলকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান তার দেহ রক্ষি হাশেমকে দিয়ে যাবতীয় কাজ করান। দেহরক্ষির নামে দিয়েছেন ৫/৬টি ভিজিডি ও হতদরিদ্রদের কার্ড। নামে বেনামে চাল তুলে বিক্রি করেন হাশেম আলী। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে চেয়ারম্যান এই হাশেম আলীকে দিয়ে বিচারের নামে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের কাছ থেকে বানিজ্য করেন। ফলে মানুষ ন্যায় বিচার পান না।

এ সব বিষয়ে চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দীন বিশ্বাস জানান, মেম্বরদের কাজ না দেওয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স তুলে খেয়ে ফেলা, মেম্বরদের ভাতা না দেওয়া, বয়স্ক, প্রতিবন্ধি, মাতৃত্ব ও বিধবা ভাতা নিয়ে বানিজ্য ও পরিষদে বিচারের নামে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের কাছ থেকে বানিজ্য করার বিষয়গুলো সবই মিথ্যা ও অসত্য। প্রকৃত তথ্য হলো মহিলা মেম্বর সাহিদার সাথে শ্রীরামপুরের আকতারের পরকীয়া ছিল। এ নিয়ে আমি সালিশ করে দিই। এতে মহিলা মেম্বর ক্ষিপ্ত হয়। আকতারের নামে আদালতে মামলা করে মহিলা মেম্বর এক লাখ টাকা আদায় করেছে। চেয়ারম্যান আরো জানান, এটা সত্য যে তিন মাস আগে সিঙ্গাড়া ফেলে দেওয়ার কারণে আমি সাহিদা মেম্বরের গালে চড় মারি। কাবিল উদ্দীন বলেন, ত্রান চুরির প্রেক্ষিতে সুষ্ঠ বন্টনের স্বার্থে আমি নিজেই সঠিক তালিকা করে প্রত্যেক ওয়ার্ডে প্রকৃত দুস্থদের মাঝে ত্রান দিচ্ছি। কোন অনিয়ম হচ্ছে না। তাই আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।

এপ্রিল ১৮, ২০২০ at ০৭:৩৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জেআর/এএডি