সোনারগাঁওয়ে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে জমি রেজিষ্ট্রেশনে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে ও দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর ও সাব রেজিস্ট্রার আবু তাহের মো: মোস্তফা ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত প্রদান করেছেন ভূক্তভোগী পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামের ফরিজুদ্দিনের মেয়ে হামিদা আক্তার, বৈদ্যেবাজার ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের সহিদুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার, আঃ খালেক বেপারীর ছেলে মোঃ সহিদ ও সরদ আলীর ছেলে আঃ খালেক বেপারী।

জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের চর লাউয়াদী মৌজার আর.এস-০২ এবং ০৪ নং দাগের ৪৮ শতাংশ ভূমি বৈদ্যের বাজার রেজিস্ট্রি অফিসে-৭৩২১/১৫ইং নং দলিলে দরখাস্ত প্রদানকারী ভবনাথপুর গ্রামের ভূক্তভোগী ফরিজুদ্দিনের মেয়ে হামিদা আক্তার আম মোক্তার বলে ক্ষমতা পান। এদিকে উক্ত ভূমি নিয়ে দু’টি সিভিল মোকদ্দমাও হয়। এ ব্যাপারে উক্ত ভূমি আম মোক্তার বলে দরখাস্ত প্রদানকারী হামিদা আক্তার ও তাছলিমা আক্তারের নিকট সাফ কবলা দলিল সম্পাদনে নিবন্ধন করার বিষয়ে দূর্নীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুরের সাথে পরামর্শ করলে শাহিনুর জানান, মামলা বন্ধিয় সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে সাব রেজিস্ট্রার আবু তাহের মোঃ মোস্তফাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিলে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলটি সম্পাদন করা সম্ভব বলে তিনি জানান। এমতাবস্থায় আম মোক্তার নামা দলিলটি বাতিলের সম্ভাবনা থাকায় দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুরের এমন প্রস্তাবে দরখাস্তকারী হামিদা ও তাছলিমা রাজী হয়ে তার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা দেয়।
আরও পড়ুন: গুজবে কান না দেয়ার পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর

অপরদিকে বৈদ্যেরবাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪৭২/১৬ ইং নং দলিলটি সম্পাদনে নিবন্ধন করা হয়। আর এসকল কার্যক্রম সম্পাদন করেন দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর নিজেই। তবে জমির নকল পাওয়ার পর দেখা যায় যে, জমির নাল ঠিক থাকলেও টাকার পরিমাণ ৬ লক্ষ টাকা। টাকার পরিমাণ কম থাকায় ও তা মানতে না চাইলে সে বলে আমি আরেকটি দলিল করে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছি। এ সময় দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর মো: সহিদকে একটি হেবা দলিল তৈরী করে দেন এবং সে জানায় যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে সাব রেজিস্ট্রার আবু তাহের মো: মোস্তফাকে দিয়ে সমস্যা সমাধান করে দিব আমি তো আছিই।

পরবর্তীতে দেড় বছর পর দরখাস্তকারী হামিদা ও তাছলিমা জানতে পারেন যে, দলিলটি ১৫ লক্ষ টাকা থেকে আরেক দলিল লিখক মোঃ সেলিমকে অল্প কিছু টাকা দিয়ে কম মূল্যে সম্পাদনে নিবন্ধন করা হয়েছে। তবে বেশীর ভাগ টাকা দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর নিজেই আত্মসাৎ করেন। দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুরের সনদ নং-১৪৫, তার বাড়ী জিয়ানগর এলাকায়।

বৈদ্যেরবাজার রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিসিট্রকৃত-৫৪৭২/১৬ইং নং দলিলটি সম্পাদনে নিবন্ধনকালে পর্চানুযায়ী তফসিলে ভূমির শ্রেণী লিপিবদ্ধ করেছে। তবে দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর অনেকটাই কৌশলে দলিল লিখক সেলিমকে ফাঁসাতে উক্ত দলিলটি সম্পাদনে নিবন্ধন করতে তাকে অল্প কিছু হাত খরচ দিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে নিজেকে আইনের হাত থেকে ও সব অভিযোগ থেকে দুরে রাখতে চাইছে।

এ ব্যাপারে ভূক্তভোগী মোঃ সহিদ জানান, দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর কিভাবে আমাকে ৫৪৭২/১৬ইং নং দলিলের নাল জমি রেজিস্ট্রি করতে টাকা নিয়েছে এবং নাল জমির নকল প্রদান করেছে? প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনার যাবতীয় নাটের গুরু হলো দূর্ণীতিবাজ দলিল লিখক শাহিনুর ও সাব রেজিস্ট্রার আবু তাহের মো: মোস্তফা।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ৩০হাজার শ্রমিকের রুজি বন্ধে গভীর চক্রান্ত

এ বিষয়ে দলিল লিখক শাহিনুরের নিকট মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি তার নিজের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ কৌশলে এড়িয়ে যান।

অপরদিকে সাব রেজিস্ট্রার আবু তাহের মো: মোস্তফার সাথে মোবাইলে কথা বললে তিনি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি নন বলে লাইনটি কেটে দেন।

তাই এ ঘটনায় দূর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার, মহাপরিদর্শক নিবন্ধন বিভাগ, জেলা পুলিশ সুপার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি সোনারগাঁ থানা ও সাব রেজিস্ট্রার বৈদ্যেরবাজার এর নিকট ভুক্তভোগী বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের সাহাপুর গ্রামের হামিদা আক্তার, তাছলিমা আক্তার, মোঃ সহিদ ও আব্দুল খালেক বেপারীর পক্ষে শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

দেশদর্পণ/টিএ/এসজে