উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেকে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে না তাহিরপুরবাসী

একই দিনে ৬ চিকিৎসকের যোগদান, ৩ জনের বদলী

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৩লক্ষাধিক জনসাধারনের জন্য চিকিৎসাসেবা আরও একধাপ এগিয়ে নিতে ৩০শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেকে ৫০শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মান করা হয়। এরপর চলতি ২৫জানুয়ারি ২০১৯পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সুনামগঞ্জ-১এর সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন হাসপাতালের উদ্বোধন করলেও আজও চালু হয় নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্দীঘ দিন ধরেই বিশেষ রোগের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা,কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। ডাক্তার-নার্স,স্টাফসহ স্বাস্থ্যসেবার মান কিছুটা বাড়বে আশার সঞ্চার হলেও আজও সংকটের কারণে উন্নীতকরণের সুফল পাচ্ছে না তাহিরপুর উপজেলাবাসী। এর মধ্যেই সম্প্রতি ৩৯তম(বিশেষ)বিসিএসে উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয় চিকিৎসক পদায়ন করার পর আবার তিন চিকিৎসকের বদলি হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান করা হয় নি।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন চিকিৎসকগন যোগদান করেন তারা হলেন-জুনায়েদ সরকার উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র,ফয়েজ আহমদ হাসান উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র,আয়েশা আক্তার সহকারী ডেন্টাল সার্জন তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,জাহানারা আরজু উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র,সাবিনা ইয়াসমিন উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র,নিলুফার ইয়াসমিন তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

পদায়নকৃত পর পরেই বৃহস্পতিবার তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমর্রত তিন চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় কুমার সরকার,তানভীর আনসারী ও সাব্বির আহমদ চৌধুরীকে অন্যত্র বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএফপিওসহ সর্বমোট ১৩চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কোন রখমে ইউএইচএফপিও ব্যতীত পাঁচ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা কার্যক্রম চলে আসছিল। গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয় চিকিৎসকের আগমন এবং তিন চিকিৎসকের প্রস্থান হওয়ায় বর্তমানে কমর্রত রয়েছেন ইউএইচএফপিও ব্যতীত মোট আট চিকিৎসক। ৫০শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন চলতি বছরের ২৫জানুয়ারি উদ্ভোধন করলেও বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের কারনে চালু হয় নি। ফলে পুরনো ভবনেই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। হাসপাতালের ৩টি জেনারেটার ১০বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পরে আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীরা গরমে ছটফট করে। ১০বছরের বেশী সময় ধরে ডেন্টাল,ল্যাব টেকনোলজিষ্ট,রেডিওগ্রাফার পদ গুলো শূন্য রয়েছে ফলে কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য যেতে হচ্ছে বাহিরে। গত ৪বছরের বেশী সময় ধরে এক্সরে মেশিন ঘরে ভিতরে থেকে ও হাসপাতালের জন্য একটি নৌ এ্যাম্বোল্যান্স থাকলেও চালক না থাকায় একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয় নি। ফলে নৌ এম্বোল্যান্স নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের পুকুরেই যেন দেখার কেউ নেই।

উপজেলা থেকে ১০কিলোমিটার দূর বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আলীনুর মিয়া জানান,হাসপাতালে ভাল কোন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই। মহিলাদের জন্য কোন গাইন ডাক্তার হাসপাতাল নির্মানের পর থেকে না থাকায় মহিলরা চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়েন। এছাড়াও দাঁেতর ডাক্তার,এক্সরে,ল্যাবটেকনেশিয়ানসহ বিভিন্ন পদে শূন্যতার কারনে বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হয় আমাদের।

ইউএইচএফপিও ডাঃ ইকবাল হোসেন বলেন,হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য বৃহস্পতিবার ছয় চিকিৎসক যোগদান অন্যদিকে একই দিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমর্রত তিন চিকিৎসকের বদলির আদেশ হয়েছে।