পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট: সাড়া না পেলে দেশব্যাপী ধর্মঘটের চিন্তা-ভাবনা

তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে খুলনাসহ তিন বিভাগের ২৬ জেলায় তেল বিক্রয় বন্ধ রয়েছে। রবিবার (ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির ডাকে অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়। আর এ কারণে দিন শেষে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না পেলে দেশব্যাপী ধর্মঘট পালনের বিষয়টি চিন্তা ভাবনায় আছে বলেও জানিয়েছেন জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির নেতৃবৃন্দ।

জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, জ্বালানি তেল ব্যবসার সাথে জড়িত সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে তেল বিক্রির কমিশন ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ, তেল ব্যবসায়ীদের পরিচয় সুনির্দিষ্টকরণ, ট্যাংকলরি ভাড়া বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের দুর্ঘটনা বীমা প্রথা চালু, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়ে আসছিল। দাবি আদায়ের জন্য ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন:
চুয়াডাংগায় ফেনসিডিল সহ গ্রেফতার ১
অবৈধভাবে সীমান্তে পারাপারের সময় ৫ জন আটক

কাবুল বলেন, তাদের দাবি বাস্তবায়নে কার্যকরি আশ্বাস পেলে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন। যানবাহন চলাচল একেবারে যাতে বন্ধ না হয় সে কারণে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না পেলে দেশব্যাপী ধর্মঘট পালনের বিষয়টি চিন্তা ভাবনায় আছে।

খুলনা বিভাগের জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুরাদ হোসেন বলেন, “কর্মবিরতির কারণে খুলনার পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রয়েছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলায় ট্যাংক লরি যাচ্ছে না । পাম্পে তেল বিক্রিও বন্ধ রয়েছে।”

এদিকে, ধর্মঘটের ফলে অতিরিক্ত ট্রাক-লরির চাপে ফিলিং স্টেশন, ট্রাক-লরি স্ট্যান্ডে জায়গা হচ্ছে না। বহু ট্রাক ও লরিকে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

তাদের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশন দেওয়া, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট করা, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেওয়ার নিয়ম বাতিল, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম বাতিল, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামূলকভাবে ক্যালিব্রেশনের নিয়ম বাতিল, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ছাড়া ডিলার বা এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন কোনো পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় জ্বালানী তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রোল পাম্পের পাশে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরি থেকে চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।

এদিকে, ধর্মঘটের কারণে যশোরের ৭৪টি পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেলসহ সব ধরণের জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। দ্রুত বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবহণ মালিকরা।

ডিসেম্বর ১, ২০১৯ at ১৭:০৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/দেপ্র/এআই