অনিয়মই যেখানে নিয়ম, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ

রাজশাহী নগরীর রাণীনগর নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট বানিজ্য, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই যে কোনদিন তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ নাসিরুদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রানীনগর নৈশ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও ৮ম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট বানিজ্যের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে স্কুলে নিয়মিত আসা বন্ধ করেছেন প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলাম।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ইচ্ছা মতো স্কুলে আসেন আর খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। এছাড়া স্কুলে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ২০১৫ সালের জুন ও জুলাইয়ে দুইজন শিক্ষিকা ও একজন শিক্ষককে চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে কাব্যতীর্থ শিক্ষিকা একজন ও সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষিকা একজন। জানা যায়, কাব্য তীর্থ পদে যোগদানের সময় হিন্দু (সনাতন ধর্মাবলম্বী) ছাত্র-ছাত্রী দেখানো হয়েছিলো ১০০জন। তবে বাস্তবে সেই সময় স্কুলে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রী ছিল মাত্র দুই জন। এছাড়া সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো অবৈধ কমিটি গঠন করে।

হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক রোকনুজ্জামান বলেন, আমাকে এখনও (বিএড) স্কেল দেননি প্রধান শিক্ষক। বারবার অনুরোধ করার পরও তিনি এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করছেন না। প্রধান শিক্ষকক সম্প্রতি আমাকে জানিয়েছেন, তিনি যতদিন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আছেন ততদিন আমাকে বিএড স্কেল দেবেন না।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বলছেন, তার সার্টিফিকেটে সমস্যা রয়েছে। আর রোকনুজ্জামান বলছেন, ইচ্ছা করেই আমাকে বিএড স্কেল দেয়া হচ্ছে না।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ, খেলাধুলা, লাইব্রেরীসহ বিভিন্ন সরকারী অনুদান আসলে তিনি শিক্ষকদের সাথে কোন প্রকার মিটিং বা আলাপ আলোচনা করেন না। অনুদানের অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট (সনদপত্র) নিতে আসা শিক্ষার্থীদের নিকট ৪শ’ ও ৫শ’ টাকা করে দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের ২০১৬/১৭/১৮/১৯ সালের এসএসসি ও জেএসসি ফরম পূরনের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের পকেটে রাখেন। স্কুলে দুই বছরের কোচিং-এর টাকা কোন শিক্ষকদের না দিয়ে তিনি একাই লোপাট করেন। এ কারণে স্কুলে কোচিং বন্ধ হয়েছে। কারণ পারিশ্রমিক ছাড়া কোন শিক্ষক কোচিং করাবেন না।
লাইব্রেরীর ৫৮০ কেজি বই বিক্রি করেন প্রধান শিক্ষক। যা বিদ্যালয়ের পিয়ন দুলাল স্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন:
২৩ বিজিবি যামিনীপাড়া ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের বিদায় ও নবাগতকের বরণ অনুষ্ঠান
রাজশাহী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

এদিকে, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিয়মাতান্ত্রিক পন্থায় ও নীতিমালা মেনে যেভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার কথা সেভাবে তা হয়নি। ঘরে বসে পকেট কমিটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মোঃ শরিফুল ইসলামের মুঠো ফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, ৮ম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট দিয়ে আমি মানুষের উপকার করি। তবে টাকা নেওয়াসহ বিষয়গুলি এড়িয়ে যান। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার মুঠো ফোন কেটে দেন।

নভেম্বর ১২, ২০১৯ at ২০:২৫:৩০ (GMT+ 06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এমআর/এআই