বাবার ক্লান্ত শরীরের ছায়া হবো

জীবনে কি হতে চান? এই প্রশ্নটা সবার কাছে যতটা সহজ, আমার কাছে এর উত্তরটা ঠিক ততটাই জটিল এবং কঠিন। আমি জীবনে বড় কিছু হতে চাইনা, কিন্তু, হ্যা, আমি আমার বাবা ক্লান্ত শরীরের ছায়া হয়ে দাঁড়াতে চাই। ছোটবেলা থেকেই আমার একটাই লক্ষ্য ছিল আমি জীবনে যা’ই হইনা কেন মানুষের মত মানুষ আমি হবোই। আর এই কাজটিই এখন আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন বলে মনে হয়।

ছোটবেলা থেকেই কোনো মানুষের কষ্ট আমার সহ্য হতোনা, কোথাও কোন অন্যায় অবিচার দেখলেই মনটা বড়ই ছটফট করতো, সেটার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ইচ্ছে হতো কিন্তু পরিস্থিতি ও আমার ভেতরের জড়তায় সেটা কখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, হারাতে পারিনি আমি কখনো আমার ভেতরের ভয়কে, কাটাতে পারিনি জড়তা, হতে পারিনি জীবন যুদ্ধের সাহসী সৈনিক।

আরো পড়ুন :
চট্রগ্রামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্টে দুই কোচের মারামারি
সমাজের অধঃপতন, ধর্ষণ আজ শিল্পে পরিনত হয়েছে
দু’দলের কোচের মারামারি

তবে কেউ জিজ্ঞেস করলে মাথা উচু করে বলতাম মানুষ হতে চাই, এমন উত্তর শুনে অনেকে হাসাহাসিও করতো তারপর আবার ঠিক একই প্রশ্ন, মানুষ হবার পর কি হতে চাও তখন অন্য কিছু একটা বলতাম কত কিছুইতো হতে ইচ্ছে করতো তখন, একেক সময় একেকটা, কখনো ডাক্তার বলতাম, কখনো পাইলট, কখনো বা পুলিশ, সেনাবাহিনী কিংবা শিক্ষক ইত্যাদি।

কিন্তু মানুষ হওয়ার তৃষ্ণা বোধটা আমার কখনোই পাল্টেনি তবে এখন আর কেউ যদি জানতে চাই তুমি কি হতে চাও? তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ হওয়ার কথাটা মুখ ফুটে বলার প্রয়োজনবোধ করিনা কেননা আদৌও মানুষ হতে পারবো কি? ভেবে খুব ভয় হয় বুকটা কেঁপে ওঠে। তবে আমি আমার বাবার স্নেহ আর ভালোবাসায় শিখেছি কিভাবে সৎ পথে চলতে হয়৷ মেয়েদের স্বভাবতই বাবার প্রতি একটু বেশি টান থাকে আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম না।

বাবার কোলে মাথা রেখে বার বার বলতে ইচ্ছে করে বাবা আমি সেদিন আমার মন মাজারে প্রশান্তি পাবো যেদিন তোমার ক্লান্ত শরীরের ছায়া হতে পারবো।

মনে হয় চারিদিকে কত মানুষরূপ কই মানুষ তো আমার চোখে পড়েনা, মানুষ থাকলে হয়ত অমানুষিকতা এতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারতোনা, পারতোনা অমানুষিকতা পশুত্বকে হার মানাতে। কই আজকের তথ্য অনুযায়ী যারা শিক্ষিতরূপে চিহ্নিত তারা সবাই কি আদৌও পুরোপুরি মানুষ? না কি সব মনুষ্যত্বের অভিনয়!
যাই হোক,আমিও পুরোপুরি মানুষ নই! কেননা আজও পারিনি আমি আমার বাবার ক্লান্ত শরীরে শান্তির ছায়া হতে। আজও পারিনি মায়ের শত পরিশ্রমের অবসান জোগাতে। তবে সপ্ন দেখি, সপ্নের তো কোন সীমানা নেই।

লেখকঃ
মারিয়া জামান এশা
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

অক্টোবর ২৫, ২০১৯ at ১৩:৩৯:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/মাজাএ/তআ/ইব্রা