আ. লীগের পদ পেতে মরিয়া কুখ্যাত রাজাকারের ভাই সহিদুল, ত্যাাগী নেতাদের ক্ষোভ

যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে কুখ্যাত রাজাকার চৌগাছার পাতিবিলা গ্রামের ফরিদ মিয়ার ভাই সহিদুল। স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে গত কমিটিতে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন।

সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ একটি কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের কুখ্যাত অস্ত্রধারি রাজাকার চৌগাছার পাতিবিলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ফরিদ মিয়ার ছোট ভাই সহিদুল ইসলামের নাম আছে। কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটির এসকল নাম নিয়েই উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

আরও পড়ুন :
দশমীর রাতে অতিরিক্ত মদ্যপানে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
রিশা হত্যা মামলায় আসামি ওবায়দুলের ফাঁসির রায়
যশোরে আন্তর্জাতিক নাট্যেৎসব শুরু ১২ অক্টোবর

এব্যাপারে, চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডা. নূর হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, ফরিদ হোসেন ওরফে ফরিদ মিয়ার যুদ্ধকালিন সময়ে রাজাকার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বীর এই মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, ফরিদ চিহ্নিত এবং কুখ্যাত অস্ত্রধারী রাজাকার ছিল। তার অপর চাচাতো দুভাই শাহাজাহান মিয়ার ছেলে ফন্টু ও আলমও রাজাকার ছিলেন। তাদের একজন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন।

এছাড়া, সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা রুকুনুদ্দৌলাহর লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর’ বইয়ে চৌগাছার রাজাকারদের যে নামের তালিকা রয়েছে সেখানে চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়নের শাহাজাহান মিয়ার ছেলে ফন্টু ও আলমের নাম রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর অনুসারী সহিদুল ইসলাম ওরফে সহিদুল মিয়াকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় কেন্দ্র থেকে তিনি শোকজ নোটিশ পেয়েছেন। তিনি বহিস্কার হতে পারেন আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর সহিদুল মিয়াকে এপদে নিতে মরিয়া।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলছে, কুখ্যাত রাজাকার ফরিদ মিয়ার ভাই সহিদুল মিয়াকে সিনিয়র সহসভাপতি পদে আনতে দীর্ঘদিনের পরষ্পর বিরোধী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এসএম হাবিব ও সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর এমনই চুক্তিতে দুই নেতা এক হয়েছেন।

ওই কমিটিতে আরো যাদের রাখা হয়েছে তারা প্রায় সবাই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট আত্তীয় ও ঘনিষ্ঠজন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুগ্ম-সম্পাদক পদে সভাপতির ভাইপো এসএম সাইফুর রহমান বাবুল। এছাড়াও, সহ-সভাপতি পদে রয়েছে তিতাস গ্যাসের সিবিএ নেতা শাহা আলম সরকার, হাফিজুর রহমান ও পৌর কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান, এসএম তবিবরসহ বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ওই কমিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী ও যোগ্যনেতারা স্থান না পাওয়ায় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।

বর্তমানে ২০১৮ সালের ১০ মার্চ কেন্দ্র থেকে তিন সদস্যর একটি কমিটি অনুমোদন করেন। সে কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদক-যুগ্ম-সম্পাদক পদ তিন জন রয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার বলেন, আমি ৮নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এই সেক্টরে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন তোফায়েল আহাম্মেদ। অন্যািদকে, সহিদুল মিয়ার ভাই ফরিদ মিয়া একজন চিহ্নিত ও অস্ত্রধারী রাজাকার ছিল। তাদেরই চাচাতো আরো দু’ভাই রাজাকার ছিল এবং একজন যুদ্ধকালেই মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। চিহ্নিত রাজাকারের ভাইকে আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি বানাতে হবে কেন? তার চেয়ে যোগ্যলোক কি আওয়ামী লীগে নেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

দেশ দর্পণে আরও পড়ুন :
বাসে বোমা হামলায় নিহত ১০
ডাকাত দলের ৮ সদস্য গ্রেপ্তার
জায়েদের সাথে মাহির অন্যরকম সম্পর্ক

সহিদুল মিয়ার ভাই ফরিদ মিয়া রাজাকার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডা. নূর হোসেনও। তিনি বলেন ফরিদ মিয়া একজন চিহ্নিত রাজাকার ছিল।

উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, সহিদুল মিয়ারা মুলত মুসলিমলীগ পরিবার। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শাহাজাহান মিয়া শান্তি কমিটির (পিস কমিটি) চেয়ারম্যান ছিলেন। এবং সহিদুল মিয়া যুদ্ধ পরবর্তী জাসদ গনবাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

এ ব্যাপারে সহিদুল মিয়াকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

অক্টোবর ১০, ২০১৯ at ১৮:০৫:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/এআর/আজা