দুর্নীতির পাশাপাশি এবার ঘুষের বিরুদ্ধেও কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্ক সফরের শেষ দিন স্থানীয় সময় ২৯ সেপ্টেম্বর (রোববার) প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শুধু ঘুষ গ্রহীতা নয়, ঘুষ দাতাকেও বিচারের সম্মূখীন হতে হবে।
তিনি বলেন, ঘুষ যে গ্রহণ করবে শুধু সে-ই যে দায়ী হবে তা নয়, যে দেবে সে-ও সমান দায়ী। কাজেই যে দেবে তারও বিচার হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘুষ দেয়াটা যদি বন্ধ হয়, তাহলে ঘুষ বাণিজ্য চলে না। (সরকারি- বেসরকারি অফিসে কোনো ফাইল পত্রের কাজ) দ্রুত কেউ করিয়ে নিতে ঘুষের বাণিজ্য শুরু করলে তার দায়িত্ব কে নেবে? তাই কেউ ঘুষ দেবেন না। দিলে তাকেও শাস্তি পেতে হবে।
জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে আট দিনের সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর (রোববার) রাতে নিউইয়র্ক ছাড়ের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হন। এই সফরের বিভিন্ন দিকসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান, ঘুষ, রোহিঙ্গা ইস্যু, সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের জন্য আমরা টাকা বরাদ্দ করছি। আমরা চাই এর প্রতিটি টাকা পাই পাই করে যেন ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি এই টাকা দিয়ে কমিশন বাণিজ্য হচ্ছে। একটা শ্রেণি অঢেল সম্পদের মালিক হচ্ছেন। ব্যবসা বাণিজ্য করে যে কেউ সম্পদের মালিক হতে পারে কিন্তু অসৎপথে উপার্জন করে নিজেকে বড় করে দেখানোর প্রবণতা সমাজে সাংঘাতিক একটা প্রভাব বিস্তার করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বড় হতে হলে বিনয়ী হতে হয়। কিন্তু তাতো নয়-ই বরং অসৎ উপায়ে উপার্জন করে ফুটানি দেখানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো। ব্যাপারটা এমন যে মুই হনুরে। সমাজের এই জায়গাতে একটা আঘাত দেয়ার প্রয়োজন ছিলো। তাই দিয়েছি। এটা অব্যাহত থাকবে।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে আরো বলেন, দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হবার পর যেখানে সেখানে বস্তায় বস্তায় পরিত্যক্ত টাকা পাওয়া যাচ্ছে। ওয়ান ইলেভের সময় এমনটি দেখা গিয়েছিলো।
আর একটা ওয়ান ইলেভেন যেন দেশে না ঘটে সেজন্য আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর কিছু একটা শুরু করতে হলে নিজের দলের ভেতর থেকেই শুরু করতে হবে। যদিও এজন্য আমাকে দলের ভেতর ও বাইরে থেকে নানা কথা শুনতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন।
স্মার্ট ফোন ও স্যোসাল মিডিয়া আসক্তি তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কিনা এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি যেমন আমাদের জন্য একটা সুযোগ বয়ে এনেছে তেমনি এটা সমাজে একটা সমস্যাও সৃষ্টি করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে ছেলে মেয়েরা ইন্টারনেট কীভাবে ব্যবহার করছে, কতটুকু করছে, তারা আসলে সেখানে কী দেখছে সেটা দেখার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। শিক্ষকদেরও তা লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে এ বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ আনতে সরকার একটা নীতিমালা তৈরি করবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা মিয়ানমারের সৃষ্টি করা। সমস্যা তাদেরই। সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তাদের দেশের নাগরিক অন্য দেশে রিফিউজি হয়ে আছে এটা তাদের জন্য অসম্মানজনক। এটা তাদের জাতিগত সংঘাত। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, জাতিসংঘে স্থায়ী রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯ at ১৩:১৯:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/ভোকা/এএএম