কালীগঞ্জে এক অন্ধ মা আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ছেলের শিকলবন্ধি জীবন

মা অন্ধ আর ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। মা রহিমা বেগমের কোমরের সাথেই তার ১০ বছরের ছেলে আব্দুর রহমানের কোমরে শিকলে তালাবন্ধি দেখা যায়। তারা শহরে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ান। গত মঙ্গলবার শহরে এসেছিল ভিক্ষা করতে। কিন্তু সন্ধ্যার পর মা রহিমা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আশ্রয় নেয় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে হাসপাতালের মেঝেতে শিকলবন্ধি অবস্থায় মা ছেলে শুয়ে থাকার দৃশ্যটি নজরে আসে হাবিব ওসমান নামে এক গনমাধ্যম কর্মীর। তিনি তাৎক্ষনিক দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপরই ভাইরাল হয়ে পড়ে ঘটনাটি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের অন্ধ রহিমা হতদরিদ্র ভ্যানচালক ছালাম হোসেনের স্ত্রী। এদিকে ফেসবুকে ওই মানবিক পোষ্টটি দেখে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তিনি তাৎক্ষনিক ওই মা ছেলের শোবার জন্য বেডের কাপড় সহ চিকিৎসার সহায়তার ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী হাবিব ওসমান জানান, তাদের এক সাংবাদিকের অসুস্থ্যতার খবর শুনে কয়েকজন সাংবাদিক মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তারা দ্বিতীয় তলাতে উঠেই দেখেন মেঝেতে শিকল বন্ধি অবস্থায় মা ও ছেলে শুয়ে রয়েছে। এ সময় মা রহিমা বেগম সাংবাদিকদের জানায়, তিনি অন্ধ, চোখে দেখেন না। তার একমাত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ছেলেকে সাথে নিয়ে শহরে ভিক্ষা করে বেড়ান। তিনি জানান, তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি শিশু সন্তান হারিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় তার কোমরের সাথে শিকলবন্ধি করে ছেলেকে আটকে রেখেছেন। আজকে ভিক্ষা করতে এসে একটু অসুস্থ্যতা বোধ করায় তিনি এ হাসপাতালের মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, এসময়ে কোন বেড খালী না থাকায় তারা মেঝেতেই রাত কাটান। পরদিন বুধবার সকালে মা ও ছেলে বাড়িতে ফিরে যান।

আরো পড়ুন:

> শিক্ষা অফিসারের রোষানলে পরে পদ হারালেন শিক্ষিকা
> নওয়াপাড়া পৌরসভা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডিউটিরত ডাক্তার কৌশিক আহম্মেদ জানায়, তিনি রাতে ছিলেন না। খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই রাতে একজন মহিলা হাসপাতালের আশে পাশে ঘোরাঘুরির পর রাতে থাকার জন্য মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছিল। সকালে তারা চলে গেছেন।

অন্ধ রহিমা বেগম জানায়, প্রায় ৮/৯ বছর আগে তাদের বাড়ীতে আগুন লেগেছিল। সেই আগুনে তিনি মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে দৃষ্টি শক্তি হারান। তার স্বামী একজন হতদরিদ্র ভ্যান চালক। সংসারের অভাব অনটনের কারনে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়।

রহিমার স্বামী ভ্যান চালক ছালাম হোসেনের সাথে কথা বলতে সংবাদকর্মীরা তার বাড়ীতে গেলেও তাকে পায়নি। তিনি তার ভ্যান নিয়ে বাইরে গেছেন এবং রাতে ফিরবেন। তার কোন মোবাইল না থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অন্ধ মা ছেলেকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া পৌর মেয়র আশরাফ বলেন, মা ও ছেলের এক শিকলে বন্ধি জীবন দৃশ্যটি অত্যান্ত বেদনাদায়ক। ওই পরিবারটির বেচে থাকার জন্য ব্যাক্তিগতভাবে সহায়তা করবেন বলে জানান তিনি।

আগষ্ট ৩০,২০২৩ at ১০:০০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বেহুবি/ইর