যশোরে সেবার চিত্র বদলে দিয়েছে ”আমার আদালত”

ছবি- সংগৃহীত।

যশোরে বিভিন্ন আদালতের সেবার চিত্র বদলে গেছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ও পদক্ষেপ জানতে এখন আর কারও কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে না। নিজের মোবাইল ফোনে ‘আমার আদালত’ অ্যাপ থেকেই জানা যাচ্ছে সব তথ্য। আগে মামলার যেকোনো তথ্য জানতে ঘুরতে হতো আদালতের এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে। কখনো আইনজীবী আবার কখনো আইনজীবী সহকারীদের কাছে। এতে সময়ের পাশাপাশি অপচয় হতো অর্থেরও। ‘আমার আদালত’ অ্যাপ চালুর পর ঘরে বসে মুহূর্তে জানা যাচ্ছে মামলার সর্বশেষ তথ্য। এতে সবচেয়ে সুফল পাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। এ ধরনের সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিচারপ্রার্থী,আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালত সংশ্লিষ্ট সকলেই।

জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, অনলাইনে এমন সেবা চালু হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমেছে। অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে মামলার সর্বশেষ অবস্থা।

সূত্র জানিয়েছে, যশোরের ৩৬ টি আদালতের সব মামলার তথ্য এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করতে হচ্ছে ‘আমার আদালত অ্যাপ’। প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরে জেলা এবং সবশেষ সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম সিলেক্ট করে বিচারপ্রার্থীরা তাদের মামলার সবশেষ আদেশ, পরবর্তী তারিখ এবং মামলার অবস্থা জানতে পারছেন। গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘আমার আদালত’ (মাইকোর্ট) সার্চ করে যে কেউ এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারছেন।

আরো পড়ুন :

> বান্দরবানে সাথে থানচির যোগাযোগের ভরসা নৌ-পথ
> ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে হুমকিতে ৩০ কোটি টাকার সাবমেরিন ক্যাবেল

গত ১৩ আগস্ট মণিরামপুর উপজেলার মিল্টন নামে একব্যক্তির মামলার শুনানি হয়। আইনজীবীর ব্যস্ততার কারণে মামলার পরবর্তী তারিখ জেনে যেতে পারেননি তিনি। পরে নিজের মোবাইল ফোন থেকে অ্যাপের মাধ্যমে জেনে নিয়েছেন মামলার বর্তমান অবস্থা ও পরবর্তী শুনানির তারিখ।

এ বিষয়ে মিল্টন বলেন, ‘আগে মামলার তথ্য জানতে অনেক কষ্ট করতে হতো। পেশকার এবং আইনজীবী কাছে ধরনা দিতে হতো। অনেক সময় তাদের পাওয়া যেতো না। এখন নিজের মোবাইল ফোন থেকে সব তথ্য জেনে নিচ্ছি। এতে অনেক সুবিধা হয়েছে।

একইভাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সদর উপজেলার আমদাবাদ গ্রামের আরিফুর রহমান। এই বিচারপ্রার্থী বলেন,‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমার মামলার সর্বশেষ তথ্য জেনে নিয়েছি। এতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়নি। আগে হাজিরা কিংবা শুনানির তারিখের জন্য পেশকার এবং আইনজীবীকে ফোন করতে হতো। অনেক সময় তারাও ফোন ধরতেন না। এ অবস্থায় টাকা খরচ করে আদালতে যেতাম। এখন আর কাউকে ফোন করতে হচ্ছে না। মোবাইল ফোনে মামলার সর্বশেষ অবস্থা জেনে নির্ধারিত দিনে আদালতে গেলেই হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর পিপি সেতারা খাতুন বলেন, ‘সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে মক্কেলদের মামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে সময় লাগতো। এতে ভোগান্তিতে পড়তেন বিচারপ্রার্থীরা। এখন অনলাইন সেবায় বিচারপ্রার্থী নিজেই নিজের মামলার সব তথ্য জানতে পারছেন। এতে আমাদের চাপ অনেক কমে গেছে। সেইসাথে সুফল পাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।’

এটিকে যুগোপযোগী দাবি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, সময় নেই অসময় নেই মক্কেলরা তাকে কল করতেন। জানতে চাইতেন মামলা সম্পর্কে। খুঁজতে হতো ডায়েরি অথবা কল করতে হতো সহকারীকে। কিন্তু এখন আর তা করা লাগছে না। মোবাইল ফোনে ‘আমার আদালত’র অ্যাপে প্রবেশ করে সব তথ্যই জানা যাচ্ছে। ফলে বেগ পেতে হচ্ছে না।

অ্যাপে আইনি সেবা চালু হওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমেছে বলে জানান জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘সরকার সব ক্ষেত্রে সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ‘আমার আদালত’ অ্যাপের মাধ্যমে আইনি সেবা তার একটি বাস্তব উদাহরণ। এটি দেশের বিচার অঙ্গনের একটি মাইলফলক। বিচারপ্রার্থীর বিড়ম্বনা কয়েক গুণ হ্রাস পাবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘এই অ্যাপের বিষয়ে এখনও অনেক বিচারপ্রার্থী জানেন না। আরও বেশি প্রচারণা প্রয়োজন’।

মামলার সাথে সংশ্লিষ্টরা যতবেশী এব্যাপারে জানতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন তত বেশী সুফল আসবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। যা রয়েছে ‘আমার আদালত’ অ্যাপে অনলাইন কজলিস্ট (মামলার কার্যতালিকা), জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং ‘আমার আদালত’ (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপে চালু করা হয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট কার্যদিবসে আদালতে বিচারাধীন মামলার তালিকা জনগণ কিংবা বিচার সংশ্লিষ্ট যে কেউ ‘আমার আদালত’ (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ ভিজিট করে তার মামলার সর্বশেষ তথ্যাদি পাবেন।

এই অ্যাপে অধস্তন আদালতসমূহের বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তি হওয়া মামলা সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মাধ্যমে মামলার প্রকৃত অবস্থা, কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি এবং বিচারিক নানান পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে।

বিচারপ্রার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ, বিচারক এবং আইনজীবীরা নিজ নিজ প্রয়োজনে ‘আমার আদালত’ (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট থেকে যশোরের বিচার ব্যবস্থায় চালু হয়েছে এই অ্যাপটি। যা ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে।

আগস্ট ১৭, ২০২৩ at ১৩:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর