শাহজাদপুরের দুর্গম চরে কোরবানিকে ঘিরে ১১২ কোটি টাকা লেনদেনের সম্ভাবনা

আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদুল আযহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। এই কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের দুর্গম চরের বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট খামারে দেশি ও বিদেশি জাতের প্রায় ৮ হাজার ষাঁড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করেছে খামারিরা। যার আনুমানিক বিক্রয় মূল্য প্রায় একশো বারো কোটি টাকা। দেশীয় ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। স্থানীয় পশুর হাটগুলোর পাশাপাশি এগুলো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কোরবানীর পশুর হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাবেন তারা।বাড়তি লাভের আশায় খামারের পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে পশুর বাড়তি যত্ন আর লালন পালন করেছেন খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা।

বিভিন্ন বাড়ি ও খামারে তারা স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে দেশি ও বিদেশি জাতের ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল, দেশি শংকর, অষ্ট্রেলিয়ান, জার্সিসহ বিভিন্ন জাতের ষাঁড় বাছুর ক্রয় করে হৃষ্টপুষ্ট করছেন। মাত্র ৬-৮ মাসে এঁড়ে বাছুর লালন পালন করে কোরবানীর ঈদের গরুর হাটে বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়েও বিনিয়োগের চেয়ে বেশি অর্থ আয় করতে পারবে বলে খামারিরা আশা প্রকাশ করেছেন।

আরো পড়ুন :

> টাকা ছাপিয়ে ঘাটতি মেটালে সংকট আরও ভয়াবহ হবে
> কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএসআইআর এর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় সোনাতনী ইউনিয়নের দুর্গম চর বানতিয়ার, কুরসী, ধিতপুর, ছোট চানতারা বড় চানতারা সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রতিটি বাড়িতেই ২ থেকে ৫টি করে গরু হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। কুরসী গ্রামের দিন এক মজুরের স্ত্রী রহিমা খাতুনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার থাকার জন্য আট খানা টিনের একটা ছাপড়া ঘর আছে। ওখানেই ৪ টি ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম মাথা গুঁজে বসবাস করছি। এ বছর ২ টি ষাড় গরু লালন পালন করেছি। মাঠের কাচা ঘাস আর সামান্য কিছু দানাদার খাদ্য খাওয়ায়ে গরু দুটি বড় করেছি। আল্লাহ যদি ভালভাবে বিক্রি করতে দেয় তাহলে প্রায় ৪ লাখ টাকা বেচতে পারব। একটা গরু বিক্রির টাকা দিয়ে ২ টি এরে বাছুর কিনে আগামী কোরবানির সিজনে বড় বানাইয়া বেচব। আর একটার টাকা দিয়ে একটা ভাল করে ঘর বানিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকব।

এই দুর্গম চরে রহিমার মত অনেকেই ষাড় গরু লালন পালন করে মুনাফার টাকা দিয়ে পুরন করতে চলেছে নানা স্বপ্ন। এই দুর্গম চরের মানুষগুলো ফসলের মাঠে কৃষিকাজ বা বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ষাঁড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করে অতি অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ছোলা, সবুজ ঘাস, খৈল, ভূষি, চিটা গুড়, ছোলা, গম, মসুর, কালাই, খেশারী, জব, ভুট্টা খাওয়ায়ে ষাঁড় গরু লালন পালন করছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বিল্লাল হোসেন জানান, আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট গো-খামারে দেশি ও বিদেশি জাতের প্রায় ৮ হাজার ষাঁড় গরু হৃষ্টপুষ্ট করেছে গো-খামারিরা। যার আনুমানিক বিক্রয় মূল্য প্রায় একশো বারো কোটি টাকা। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করার কাজে উপজেলা পাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

জুন ১৯, ২০২৩ at ১১:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোআকু/ইর