যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ

ছবি- সংগৃহীত।

নতুন অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এডিপিও অনুমোদিত হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, যা মোট বরাদ্দের ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এ বরাদ্দ ব্যয় করা হবে। নতুন এডিপির মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হবে। আর ৯৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা দেবে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী। সভায় জনগণের অর্থ ব্যয়ে সতর্কতা ও কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ সংশোধিত এডিপির অনুমোদন দেয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সত্যজিৎ কর্মকারসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবর্গ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এবারের অনুমোদিত এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এডিপির আওতায় প্রকল্প সংখ্যা হবে ১ হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১১৮টি, সমীক্ষা প্রকল্প ২২টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ৮৯টি।

দেখা গেছে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য মোট বরাদ্দের মধ্যে ৪৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা সরকারি ব্যয় এবং উন্নয়ন সহযোগীরা দেবে ৩১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এই বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর পরেই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি, সেতু বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৬৪ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এ খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ, ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।

এর পরেই রয়েছে শিক্ষা খাত। শিক্ষা অবকাঠামো ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আগামী এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং সব খাতের এডিপির মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে, বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য ১৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এছাড়া গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলির জন্য ২৭ হাজার ৪৫ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে ১৬ হাজার ২০৪ কোটি, কৃষিতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদের জন্য ৮ হাজার ৯৯৫ কোটি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৬২ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৪৩৬ কোটি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫ হাজার ৩২১ কোটি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদনে ২ হাজার ২৯০ কোটি, সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাচ্ছে প্রতিরক্ষা খাত। এ খাতের বরাদ্দ ১ হাজার ১০ কোটি টাকা।

এদিকে বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ১৮ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা এবং সেতু বিভাগ ৯৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের নতুন প্রকল্পের জন্য ১৬ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এডিপিতে বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৩৫ কোটি টাকা, পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, এমআরটি লাইন-৬ এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা এবং এমআরটি-১ এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এছাড়া এমআরটি-৫ এর জন্য ৮৮০ কোটি টাকা, দোহাজারী রামু কক্সবাজার রেল প্রকল্পে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

মে  ১২, ২০২৩ at ১০:৪২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর