উপকূলে ২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা

ছবি- সংগৃহীত।

ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র প্রভাবে দেশের সকল উপকূলীয় এলাকায় সর্বোচ্চ ২০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। আমেরিকান পূর্বাভাস বলা হচ্ছে, বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০৪ কিলোমিটার উঠতে পারে । সেই সঙ্গে ১৮৫ কিলোমিটার গতিতে দেশের স্থলভাবে আঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, যখন মোকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ অতিক্রম করবে সেই সময় যে কোন বিল্ডিং এর ৩ তালার নিচে আশ্রয় নেয়া কোন মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতি ইঞ্চি মাটি সমুদ্রের পানির নিচে থাকবে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগলিক অবস্থান ও আকৃতির কারণে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকা কক্সবাজার ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে আঘাত করলেও পুরো বাংলাদেশের সকল উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখীন হবে। ঘূর্ণিঝড়টি যাত্রাপথ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগলিক অবস্থান ও আকৃতির কারণে ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের হুমকির সম্মুখীন হবে বলে মনে করেন তিনি।

আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড় মোকা এর বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০৪ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। এমনকি স্থল ভাগের উপরে উঠার পরেও ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় প্রায় ১৬৭ কিলোমিটার।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকা আজ (১২ মে) ভোররাত ০৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১১২৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৮৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও আরো ঘণীভূত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৫ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

এতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০২ (দুই) নম্বর (পুন:) ০২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হলো।

এদিকে, জলোচ্ছাসের প্রবল আশঙ্কা থাকায় মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, কক্সবাজার জেলার সকল দ্বীপ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে হবে শনিবার দুপুরের মধ্যে। সন্ধ্যার পূর্বে নিশ্চিত করতে হবে সকল মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোন দারিদ্র-মানুষ যেন তাদের কুঁড়েঘরে না থাকে নিশ্চিত করতে হবে। সকল দারিদ্র মানুষকে বাণিজ্যিক হোটেলগুলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে অনেক মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে টেকনাফে। যখন মোকা সেন্টমার্টিন দ্বীপ অতিক্রম করবে সেই সময় যে কোন বিল্ডিং এর ৩ তালার নিচে আশ্রয় নেয়া কোন মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতি ইঞ্চি মাটি সমুদ্রের পানির নিচে থাকার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ এর বেশি।

মে  ১২, ২০২৩ at ১০:২৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর