বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নির্বাচন নিয়ে ‘অস্থির হওয়ার কিছু নেই’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্ষদের নির্বাচন নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ‘অস্থির হওয়ার কিছু নেই। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে মাননীয় উপাচার্য দ্রুত সব পর্ষদের নির্বাচন আয়োজন করবেন।’

বৃহস্পতিবার (৯ র্মাচ) শিক্ষক পরিষদ এই বিবৃতি প্রকাশ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রসঙ্গে ২রা মার্চ প্রকাশিত জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতির প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসাথে শিক্ষক পরিষদের বিবৃতিতে উপাচার্য কন্যার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জবাব এবং সমাবর্তনের আর্থিক হিসাব নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের উত্তর দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে, ‘শিক্ষক ফোরামের বিবৃতিকে অত্যন্ত নিম্নরুচি ও অশিক্ষকসুলভ, নোংরা প্রচারপত্র এবং ছিদ্রান্বেষী তৎপরতা বলে আখ্যায়িত করা হয়।’

বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুত গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত একাডেমিক কার্যক্রম বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ ৬ষ্ঠ সমাবর্তন মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। সমাবর্তন সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি খাতওয়ারি এর আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা সকলেই জানি সমাবর্তনের মত বৃহৎ একাডেমিক কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর নেই। এত বড় আয়োজনের বিভিন্ন খাতের হিসাব চূড়ান্ত করার জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সে সময় না দিয়েই অরুচিকরভাবে “জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম” এর নামে একটি আপত্তিকর লিফলেট প্রচার করা হয়েছে। যা অত্যন্ত নিম্নরুচি ও অশিক্ষকসুলভ। প্রকৃত পক্ষে এ লিফলেটের মাধ্যমে এর প্রচারকারিগণ নিজেদের অসততাকেই উন্মুক্ত করেছেন। আসলে এ ধরনের লিফলেট ছিদ্রান্বেষী তৎপরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ‘নিশ্চয় তাদের সময়ের (বিএনপি শাসনামলে) সমাবর্তনে আয়-ব্যয়ে অনেক অসঙ্গতি ছিল। তারা নিজেরা হয়ত লুটপাটে জড়িত ছিলেন। তাই ধরেই নিয়েছেন বর্তমান প্রশাসনও তাদের মত আয়-ব্যয়ের হিসাব আড়াল করতে চান। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য বর্তমানে হিসাব আড়াল করার প্রশ্নই আসেনা। যথা সময়ে যথাস্থানে তা তুলে ধরা হবে।’

আরো পড়ুন :
>দুমকিতে আগুনে পুড়ে ফার্স্টফুডের দোকান ছাই
>স্বর্ণপদক প্রাপ্ত চাঁদপুরের দুই শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা প্রদান

উপাচার্য কন্যার ফলাফল নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, ‘লিফলেটে বিভিন্ন ঘটনায় মাননীয় উপাচার্যের নির্লিপ্ততার অভিযোগ তোলা হয়েছে। যা নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। সকলেই জানেন এমন সক্রিয় উপাচার্য কম দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামাত্রিক ঘটনা-দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল এবং তিনি নিজে অথবা সিনেট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সদা তৎপর। অত্যন্ত দুঃখজনক যে লিফলেটে উপাচার্যের কন্যাকেও টেনে আনা হয়েছে। ন্যূনতম মানবিকতা থাকলে তারা বরং প্রশ্ন করতেন উপচার্য হওয়ার আগে তাঁর কন্যা স্নাতকে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে উপাচার্য হওয়ার পরে স্নাতকাত্তর পরীক্ষায় ৭ম স্থান পেল কেন?’

‘লিফলেটের মাধ্যমে “জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম” নিজেদের অসততাকেই উন্মুক্ত করেছেন’ শীর্ষক বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘নামে বেনামে দুর্নীতির কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সততার পরীক্ষায় সদাউত্তীর্ণ বর্তমান উপাচার্য এবং কোনো কোনো সহকর্মির বিরুদ্ধে অপপ্রচারও আমাদের গোচরে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে প্রচারকারীদের সামনাসামনি এসে প্রমাণ করার উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সবশেষে নোংরা প্রচারপত্র বিলির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সকলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এর আগে গত ২রা মার্চ জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ দিন পর সমাবর্তন আয়োজিত হওয়ায় প্রায় ৩১ হাজার গ্র্যাজুয়েট এই সমাবর্তনে সার্টিফিকেট পেয়েছেন। তবে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফি, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় হয়রানি, অসামঞ্জস্যপূর্ণ খাবারের মেনু, মাত্রাতিরিক্ত প্যান্ডেলের খরচ, সমাবর্তনের লোগো নকল করা সহ নানান বিতর্কে অর্ধেকেরও বেশি গ্র্যাজুয়েট (১৬ হাজার ৪৯৭ জন) সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। এমনকি ফার্মেসী বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুব রিনাদ- এর ছবি অনুমতি না নিয়ে আমন্ত্রনপত্র ও বিভিন্ন বিলবোর্ডে ব্যাবহার করার অভিযোগ উঠেছে! এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে সমাবর্তন ঘিরে নজিরবিহীন সংখ্যক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এক বছর আগে দায়িত্ব পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল আলমের প্রশাসনিক অদক্ষতার নজির এখানেই শেষ নয়। ক্যাম্পাসে অসংখ্য মটর সাইকেল দূর্ঘটনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুলেন্স কর্তৃক ড্যান চালক ও গর্ভের শিশু হত্যা, এম্বুলেন্সে মাদক আনা নেয়ার ঘটনা ও সালাম বরকত হলে যুবককে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি সহ নানান চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উপাচার্য দৃষ্টিকটু রকমের নির্লিপ্ততা দেখিয়েছেন।

আরও বলা হয়, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অনৈতিক সম্পর্কের প্রভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হলে পুরো প্রশাসন অভিযুক্ত শিক্ষককে রক্ষার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদিত স্নাতকোত্তর পরীক্ষা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। উপাচার্যের কন্যা উক্ত পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থী থাকায় ক্যাম্পাসবাসীর মনে এই ঘটনা নানান প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। ১৯৭৩-এর অ্যাক্ট, অর্ডিন্যান্স ও সংবিধিকে সমুন্নত রাখা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ করে উপাচার্যের আইনগত দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য।’

মার্চ ০৯, ২০২৩ at ১৭:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নাউ/মমেহা