ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর: তারুণ্যের ভাবনা

১৯৫২ থেকে ২০২৩! একাত্তর বছর পূর্বে সালাম, বরকত, জব্বারেরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের লক্ষ্যে ঢাকার পিচঢালা পথে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। বিশ্বে এমন ইতিহাস বিরল যে জাতিকে ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা শুধু একটি ভাষা নয়, বাংলা জুড়ে আছে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রাম। ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ সময় পর বাংলা ভাষাকে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিগুলো তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

তারুণ্যের শক্তি মাতৃভাষা

মায়ের শেখানো মাতৃভাষা পরিবেশ, পরিস্থিতি বা অবহেলায় সেই পরম মমতা এক সময় হ্রাস পায়। জেনে বা না জেনে শুরু হয় বিকৃতি, অপব্যবহার। আধুনিকতার নামে ভিনদেশি সংস্কৃতি চর্চায় আজ মত্ত তরুণ সমাজ। বিশেষত ভিনদেশি টিভি সিরিয়াল বা ওয়েব সিরিজের গল্প থাকে বর্তমান সময়ের তরুণদের মুখে মুখে। বাংলা ভাষায় রুচিসম্মত নাটক, সিনেমা বা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ না হওয়াই যার কারণ। এছাড়া উচ্চশিক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নেই, যা বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তাকে কমিয়ে দিচ্ছে। সর্বোপরি, ভাষাকেন্দ্রিক সচেতনতা, আবেগ কিংবা নিজস্ব সংস্কৃতিবোধের জায়গাটি নিশ্চিত করতে পূর্বসূরীদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। হোক প্রতিজ্ঞা- যে মুখে মা বলবো, সে মুখেই মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষা করতে হবে।

সাফা আক্তার নোলক
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ

বাংলা ভাষা ব্যবহার-চর্চায় সচেতনতা জরুরি

মাতৃভাষা হলো মানব অস্তিত্ব রক্ষার প্রধান একটি অবলম্বন। যে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি প্রাণ দিয়েছিল, সেই ভাষার ব্যবহার ও চর্চা সম্পর্কে তরুণ সমাজের যথাযথ সচেতনতা নেই। বর্তমানে তরুণদের মধ্যে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার ও চর্চা বেশি। বর্তমানে তরুণরা আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন, চাকরি, অফিস-আদালতসহ প্রতিক্ষেত্রেই ইংরেজি ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না, নিজস্বতা হারাচ্ছে বাংলা ভাষা। তরুণ সমাজ সচেতন হলেই বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধি পাবে, এই ভাষাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। মাতৃভাষা ও একুশের চেতনাকে বুকে ধারণ করে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে।

মো. মেহরাব হোসেন অপি
শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ

বাংলা ভাষার অবাধ বিকৃতি বন্ধ হোক

দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে বাংলা ভাষা প্রাণের বিনিময়ে সারা বিশ্বে একটি দুর্লভ মর্যাদা পেলেও বর্তমানে বাংলা ভাষায় চলছে অবাধ বিকৃতি। ভাষা আমাদের মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম একটি মাধ্যম। আমাদের সবার উচিত আমাদের নিজের ভাষা বাংলায় সঠিকভাবে কথা বলা। কিন্তু বর্তমানে ভাষার বিকৃতি ঘটেই চলেছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের উচিত মাতৃভাষার সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে জানা ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিকৃতিভাবে উচ্চারণ না করে বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে সঠিকভাবে উচ্চারণ করে তুলে ধরতে হবে।আমরা সেই জাতি, যেই জাতি মাকে ‘মা’ বলে ডাকার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি যা ইতিহাসে বিরল। তাই বাংলা আমাদের মাঝে শুধু বাহ্যিকভাবেই নয় বরং আত্মিকভাবেও যুক্ত থাকুক। বাংলা হবে সর্বময়, সবার মাঝে সবসময়।

পাপড়ি রাণী
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

বাংলা ভাষায় ইংরেজি সংস্কৃতি নিপাত যাক

আজকাল অনেক উচ্চশিক্ষিত ডক্টরেট, অনার্স ডিগ্রী নেওয়া শিক্ষিত আমরাই যখন নিজের ভাষার স্বতন্ত্র বর্ণমালা থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি বর্ণমালার যথেচ্ছাচারে বাংলিশ লিখি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে, মনোজ্ঞ আলোচনার মাধ্যমও আমাদের এই বাংলিশ। অথচ আমরা সবাই শিক্ষিত। দেশের বিলবোর্ড, উন্নত বা মানসম্মত হোটেল, রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালত সব জায়গায় ভুল বাংলার ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাকে অপমান করা হচ্ছে। কেননা, ভালো চাকরির প্রধান মানদন্ডের একটি আজকাল ইংরেজি ভাষা। ভাষা দিবস মানে শুধু শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে আজ। তাই ভাষার এই অবস্থার ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ হওয়ার আগে আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসি, শহীদের রক্তের যথার্থ সম্মান করি এবং বাংলিশ নামের এমন ভাষার অমানবিক প্রায়োগিক দিক থেকে ফিরে আসি।

মাহরুমা আক্তার শিফা
শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

হৃদয় জুড়ে মাতৃভাষা

বাঙালি জাতির অন্যতম এক অর্জনের নাম মাতৃভাষা ‘বাংলা’। এর পেছনে রয়েছে অজস্র রক্তের মূল্য, হয়েছিল দফায় দফায় আন্দোলন। বাংলার গৌরব ও ঐতিহ্যজুড়ে বহমান এই মাতৃভাষা। এই ভাষার জন্য দিতে হয়েছে অনেক আত্মত্যাগ, দৌরাত্ম, সহ্য করতে হয়েছে নির্মম অত্যাচার। আর এই আন্দোলনের অবসান ঘটে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে। বাঙালি নিজস্ব করে নেয় বাংলার বুকে মাতৃভাষা। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা সেই অমূল্য সম্পদ মাতৃভাষাকে অবমূল্যায়ন করছি, বিকৃতভাবে ব্যবহার করছি। ভাষার মাধুর্যতা উপলব্ধি করতে পারছি না। আমাদের ভাইয়েরা অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে যে মাতৃভাষাকে আমাদের কাছে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছিল, তা পালনে আমরা ব্যর্থ। সর্বমহলে বাংলা ভাষাকে যেন শুদ্ধতার সাথে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়জুড়ে যেন থাকে মাতৃভাষা বাংলা।

নাজমুন নাহার মুনা
শিক্ষার্থী, চারুকলা অনুষদ

সর্বস্তরে হোক বাংলা ভাষার প্রচলন

বাঙালি জাতির দিন বদলের সূচনা হয়েছিল শহীদ সালাম, বরকত, জব্বারের হাত ধরেই। বাঙালিরাই ইতিহাসের প্রথম জাতি যারা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে। আজ সেই বাংলা ভাষাকে আমরা ভুলতে বসেছি। কথায় কথায় বাংলার সাথে ইংরেজির মিশ্রণ ঘটাচ্ছি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষাতে জোর দিচ্ছে। দেশে গড়ে উঠা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলতে জানে না, বাংলা বলতে নাকি তাদের কষ্ট হয়; যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমাদের সন্তানদের এ অভ্যাস থেকে বের করে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম দিতে হবে। চিঠি-আমন্ত্রণপত্র, তরুণ প্রজন্মের ক্ষুদে বার্তা সহ সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রতি জোর দিতে হবে। শুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চা ও বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে এবং বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র নিশ্চিত করতে হবে। ভাষার মাসে শপথ হোক শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা ও বাংলা ভাষার প্রচলন।

মো. সাকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

বাংলার গৌরব চির উজ্জ্বীবিত হোক

বাংলা ভাষা বাঙালি জাতির শুধু মুখের ভাষাই নয় একই সাথে প্রাণের ভাষা হিসাবেও আজ সর্বমহলে সমাদৃত। যেখানে বাঙালির উপস্থিতি দৃশ্যমান হয়, সেখানেই যেন বাংলা ভাষা সজীব হয়ে ওঠে। বাংলায় ভাব প্রকাশ করা বা বাংলাকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে পারাটা আমাদের বাঙালি জাতির কাছে সত্যিই গর্বের বিষয়। ১৯৪৮ সালে প্রথম দফায় ভাষাকেন্দ্রিক এক লড়াই শুরু হয়েছিলো যার ফলাফল হিসাবে আজ আমরা বাংলাকে আমাদের মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত আন্দোলনের ফলেই সমগ্র বিশ্ব জানতে সক্ষম হয়েছিলো যে তৎসময়ে শুধু বাংলাকে নিজেদের মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজপথকে রক্তে রঞ্জিত করতে ও পিছু পা হয়নি বাংলার দামাল সৈনিকরা। সেই থেকেই বাংলার সাথে বাঙালির অটুট বন্ধন। আর এই বন্ধনের মাধ্যমেই যেন যুগ হতে যুগান্তরে বাংলার ঐতিহাসিক গৌরব চির উজ্জীবিত হয়ে উঠুক।

আফরোজা আক্তার
শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

মাতৃভাষার চেতনা বাস্তবায়িত হোক

ভাষার মাস এলে ভাষার গান, ভাষার আলোচনা, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ থেকে পুরো বছর বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক চেতনার জাগরণ ও চর্চা থেকে বিমুখ থাকি। অথচ বাংলার সূর্যসন্তানরা শুধু মাতৃভাষা রক্ষার জন্যই নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। অপরিচিত ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের ফলে নিজস্ব চিন্তা ও মেধাশক্তিকে যথার্থভাবে বিকশিত করতে পারিনি বলে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থান ভয়ানক সমস্যায় জাতি আজ জর্জরিত। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের সমৃদ্ধ ও বিকশিত করেছে নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা ও গবেষণার ফলে। বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক অবহেলার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে শিক্ষা ও গবেষণার বিষয়গুলো বাংলাতেই করা এখন সময়ের দাবি। তাহলে বাঙালি হিসেবে নিজস্ব ঐতিহ্যকে জাগ্রত করার পাশাপাশি নিজেদের চিন্তা ও মেধাশক্তিকে ফলপ্রসূ করা আমাদের জন্য সহজ হবে। বাস্তবায়িত হবে লাখো শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা।

আসাদুজ্জামান আপন
শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ

বাংলা সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ জরুরি

বাংলা ভাষা ও স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীর কোনো জাতিই ভাষার জন্য জীবন দেয়নি। বাংলাই একমাত্র ভাষা যে ভাষাকে অর্জন করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে অনেক সাহসী বাঙালি। বাঙালির মনে-প্রাণে-অস্তিত্বে জড়িয়ে আছে বাংলা ভাষা। এ ভাষা বাঙালি জাতির জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু অত্যন্ত কষ্টকর বিষয় হলো তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি, আকাশ সংস্কৃতি ও অবাধ তথ্য প্রবাহের ফলে বাংলা ভাষার অবস্থান জাতির জন্য ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তাছাড়াও বর্তমানে শিশুরা হিন্দি কাটুনের প্রতি ঝুঁকছে যার ফলে তারা ছোট থেকেই হিন্দির প্রতি পারদর্শী হচ্ছে। এই অপসংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণের জন্য একুশের চেতনাকে বুকে লালন করতে হবে, বাড়াতে হবে বাংলা সাহিত্যচর্চা।

শেখ শাহরিয়ার হোসেন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

মায়ের ভাষা বাংলা পূর্ণ মর্যাদা পাক

বাংলা ভাষা ও স্বাধীনতা একটি বিশ্বজনীন ভাবনা। বাংলা মায়ের ভাষা। পৃথিবীতে বাংলা’ই একমাত্র ভাষা ভাষা যা লক্ষ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। এ ভাষা বাঙালি জাতির জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্ব করে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসই যেনো ভাষার প্রতি ভালোবাসা সীমাবদ্ধ না হয়, বছরের প্রতিটা দিনই যেনো মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ভাষার প্রতি প্রেম এবং সেই সাথে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার, শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে। বাংলা ভাষার অশুদ্ধ ব্যবহার মানেই বাঙালির আত্নহত্যাকে অবমাননা করা। আর এইজন্যই বাংলাদেশ সরকার বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১৯৮৭ সালে ভাষা প্রচলন আইন জারি করে। বর্তমানে মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভাষা। বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার, প্রচার, সঠিক চর্চার মাধ্যমেই প্রকাশিত হবে বাঙালির মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের মহিমা।

শ্রেয়সী সিকদার
শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

মাতৃভাষা বাংলার সঠিক বিকাশ জরুরি

মাতৃভাষা বাংলার সঠিক বিকাশ বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে থেকে ভাষার বিকাশ শুরু করার মাধ্যমেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভাষার বিকাশ সম্ভব। বর্তমানে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে দেখা যায় ভাষা বিকৃতি, যেটা আমাদের কখনোই কাম্য নয়। সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত হলেও আমাদের ভাষার রয়েছে অনেক নেতিবাচক বিকৃতি।বর্তমানে তরুণ সমাজেও দেখা যায় ভাষা নিয়ে এই বিকৃতি। যেখানে আমাদের উচিত বাংলা ভাষার বিকাশ করা, সেখানে দেখা যায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে বিভিন্ন বিকৃতি। যে ভাষার জন্য প্রাণ দিলো ভাষা শহীদেরা, সে ভাষায় দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন বিকৃতি এবং ধারণ করা হচ্ছে না বাংলা সংস্কৃতিও। বিকৃতি হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতিরও। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বে বাংলা সংস্কৃতি নামে যেটি প্রকাশ পাচ্ছে সেটি আসলে উগ্রতা। ভাষার বিকাশ হোক ইতিবাচক এবং ফিরে আসুক নৈতিকতা, বন্ধ হোক সংস্কৃতির বিকৃতি। সঠিক বিকাশ হোক মাতৃভাষা বাংলার।

মো. আফজাল হোসেন
শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ

বাংলা ভাষা আমাদের অস্তিত্বের পরিচয়

মাতৃভাষা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিকাশে বিশাল ভূমিকা রাখে। মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে একটি জাতির আত্মমর্যাদা, সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানগত সম্মান এবং বিভিন্ন জাতিগত পটভূমি গঠনে সবার জন্য সমান সুযোগ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ভুলভাল ইংরেজি বলতে পারাকে গর্ব নয়, শুদ্ধ বাংলা বলাকেই যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যে দেশ ও জাতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে অহংকার করে, সে দেশে ভাষাচর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি নেই। পরিবার থেকে প্রশাসন সব জায়গাতেই শুদ্ধ ও পরিশীলিত বাংলা ভাষার প্রচলন চালু করতে হবে। বাংলা নিয়ে গবেষণার উপর আরো বেশি করে জোর দিতে হবে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে জানা এবং বলা যেমন জরুরি তেমনি আমাদের আঞ্চলিক ভাষাগুলোকেও আগামী প্রজন্মে প্রবাহিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। তবেই কেবল মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধার ব্যাপারটা আরো বেশি উপলব্ধি করা যাবে। একই সাথে বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা আঞ্চলিক ভাষার শব্দগুলোও বেঁচে থাকবে অনেকদিন।

বিথী রানী মন্ডল
শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ

ফেব্রুয়ারি ২১.২০২৩ at ২১:২৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/এসআর