জাবি উপ-উপাচার্যের দৌড়ে ‘বিতর্কিতরা’ এগিয়ে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দপ্তরে গত দশ মাস দায়িত্বশীল ব্যক্তি নেই। দীর্ঘদিন পদশূণ্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকাণ্ড একমুখী পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, শিক্ষক রাজনীতির জটিল সমীকরণে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে দেরিতে নাম সুপারিশ করেছে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম। এরপরেও যে তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছে তারা প্রত্যেকেই আওয়ামীপন্থী শিক্ষক রাজনীতিতে ‘বিতর্কিত’ হিসেবে চিহ্নিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়, উপাচার্য না থাকায় গত বছরের ১৭ই এপ্রিল থেকে তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলমের উপাচার্যের দপ্তরে অফিস করা শুরু করেন। এতে প্রায় ৯ মাস ধরে উপ-উপাচার্য ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, সিনেট, একাডেমিক কাউন্সিল সহ গুরুত্বপূর্ণ সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, উপাচার্য এই পদে সাবেক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, অধ্যাপক বশির আহমেদ ও অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ এর নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, সুপারিশকৃত তিনজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীধারার শিক্ষক রাজনীতিতে বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত।

জানা যায়, পরিসংখ্যান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ২০২২ সালের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের লুটতরাজকারী ও নারী নিপীড়নকারী হিসেবে মন্তব্য করেন। পরে তিনি এ মন্তব্যের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিজ স্বার্থে একাধিকবার দল পরিবর্তন ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দুই আওয়ামীপন্থী উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং তাদেরকে উৎখাত করার অভিযোগ রয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলমের নিজস্ব এলাকা ঢাকার ধামরাইয়ে বসবাসকারী অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তাঁর বারবার দল পরিবর্তনের কারণে সরকার বিব্রত হয়ে হাইকমান্ড থেকে মীমাংসার ব্যবস্থাও করেছিলেন।

এদিকে অধ্যাপক বশির আহমেদের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতি ও ১৯ ব্যাচের ছাত্র সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে অংশ্রগ্রহণ করতেন এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রদল সদস্য ছিলেন। এমনকি সে তৎকালীন (১৯৯১-৯২) ছাত্রদল নেত্রী শামীমা সুলতানার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

এছাড়া তিনি সিলেকশন বোর্ডের সদস্য সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খুরশীদা বেগমের নোট অব ডিসেন্ট থাকা সত্ত্বেও ‘ক্ষমতার জোরে’ অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পান বলে জানা গেছে। তাছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে গবেষণাপত্র প্রকাশে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে অধ্যাপক বশিরের বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়াই নামের পূর্বে ‘ডক্টরেট’ ব্যবহারের অভিযোগ আছে। জানা যায়, তিনি ২০১০ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার জন্য ছুটি নিলেও শেষ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি নিজ বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আবারও পিএইচডিতে ভর্তি হয়েছেন।

তবে ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করে অধ্যাপক বশির বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, আমি কখনো ছাত্রদল সংশ্লিষ্ট রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না।

অন্যদিকে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ট শিক্ষক অধ্যাপক মফিজুল কবির টানা তিনবার ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। অধ্যাপক ফিরোজ ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা ও অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নে জালিয়াতির পৃষ্ঠপোষক ও প্রশ্রয়দাতা ছিলেন। পরে তৎকালীন প্রশাসন ওই বিভাগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি স্থগিত করেন। এছাড়া একই সময়ে একই শিক্ষাবর্ষে তিনবার ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্নাতক (সম্মান) পর্বে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক রাজনীতিতে কখনো সক্রিয় ছিলোনা, যে কারণে দলের কোন পদেও তাকে দেখা যায়নি।

আরো পড়ুন:
>সিকিমেও এবার ভূমিকম্পের আঘাত
>সিলেটে টিকটক অভিনেত্রী সনিয়া হত্যার তীর সজিবের দিকে

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়ন করে চলেছে। অধ্যাপক নূরুলকে আমরা সজ্জন হিসেবে জানলেও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মকারী শিক্ষকদের দুষ্ট বলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছেন। এমনকি আমাদের কোণঠাসা করে বিএনপি সংশ্লিষ্টদের প্রাধান্য দিচ্ছেন উপাচার্য।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম একাধিকবার সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘যাদের নাম প্রস্তাব করেছি তা নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত গোপন রাখবো। এর অতিরিক্ত মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা।

ফেব্রুয়ারি ১২.২০২৩ at ১৮:০৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/ এসআর