মেসি ম্যাজিক নাকি এমবাপ্পে শো

ছবি- সংগৃহীত

লুসাই আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ আর্জেন্টিনা -ফ্রান্স ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের পর্দা নামছে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে মেসি – এমবাপ্পেদের দ্বৈরথ। লম্বা একটা সময় ধরে ফুটবল বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন লিওনেল মেসি। তার জাদুকরী বাঁ পায়ে লেখা হয়েছে কতশত গল্প। ফুটবলের সবুজ আঙিনায় উপহার দিয়েছেন কত না স্মরণীয় মুহূর্ত। নানা রেকর্ড-অর্জনে সমৃদ্ধ তার ক্যারিয়ার। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটাই শুধু রয়ে গেছে অধরা। নিজের শেষ বিশ্বকাপে সেই স্বপ্ন পূরণে আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে আজ ফ্রান্সের বিপক্ষে জিততে হবে। সেই ১৯৮৬ সালে দিয়াগো মারাদোনার হাত ধরে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা, দ্বিতীয়বারের মতো। এরপর পেরিয়ে গেছে আটটি আসর। আরেকটি বিশ্বকাপ আর জেতা হয়নি তাদের। লুসাই আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ সেই আক্ষেপ ঘোচাতে প্রয়োজন শুধু একটি জয়।

সারা বিশ্ববাসী আজ মেসি এবং এমবাপ্পের পায়ের জাদু দেখতে মুখিয়ে আছেন। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে দু’জনই মহাতারকা। এবার বিশ্বকাপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা। মেসি ও এমবাপ্পে দুজনেই তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলছেন। কিন্তু এই খেলায় তাদের ক্যারিয়ারের চিত্র বিপরীত। ২০১৮ সালে ট্রফি জিতেছেন এমবাপ্পে ও তার দল। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলা মেসিকে কাঁদতে হয়েছিল স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। মেসি গত ১৫ বছর ধরে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়, শুধু পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে ফুটবলের সবথেকে বড় ট্রফি এখনো জিততে পারেননি আর্জেন্টাইন। এবারের ফাইনাল জিতলে ঘুচবে সেই আক্ষেপ।

ফরাসিদের নয়নের মণি এমবাপ্পে এই বয়সেই দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপে সামনে। ২০১৮ সালে শিরোপাজয়ী এই তারকার সামনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরার সুযোগ। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার দেখা হয়েছে মোট তিনবার। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার দুই জয়ের বিপরীতে ফরাসিরা জিতেছে একবার। সেটাও গত রাশিয়া বিশ্বকাপের রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ওই ম্যাচে ৩-৪ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। মেসিদের হারিয়ে ওই আসরের শিরোপা ঘরে তুলে নেয় ফরাসিরা।

আরো পড়ুন:
দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করে জিয়া: প্রধানমন্ত্রী
যশোর জেলা আ. লীগ নেতা মিন্টু‘র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশ দর্পণ পরিবার

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ফান্সের প্রথম দেখা হয় ১৯৩০ সালে বিশ্ব ফুটবলের প্রথম আসরে। আর দ্বিতীয় দেখা ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে। দুই আসরেই আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়েছিল ফরাসিরা। সবমিলিয়ে দুদলের ১২ দেখায় আর্জেন্টিনা জিতেছে ৬ ম্যাচ। আর ফ্রান্স জিতেছে ৩ ম্যাচ। বাকি ৩ ম্যাচ ড্রয়ের খাতায় যোগ হয়েছে। বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার ম্যাচের রেফারি কে হচ্ছেন সেটি নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। অনেক বড় নামও সামনে এসেছিল। কিন্তু সবাইকে টপকে ম্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেলেন পোল্যান্ডের রেফারি সিমন মারসিনিয়াক। সিমন মারসিনিয়াক এর আগেও আর্জেন্টিনার একটি ম্যাচে রেফারির ভূমিকায় ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে হারায় অজিদের।

এর আগেও তিনি আর্জেন্টিনার ম্যাচে রেফারি হিসেবে ছিলেন ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে। এমবাপ্পে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে উড়ন্ত সূচনাই করেন ২০১৮ সালে। রাশিয়া বিশ্বকাপে তিনি গ্রুপপর্বে পেরুর বিপক্ষে এবং ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল করেছিলেন। এবার পাঁচটি গোল করে ছুটছেন মেসির সমান তালে। ২০৩৪ সালে এমবাপ্পের বয়স ৩৫ হবে, যা এখন আর্জেন্টাইন মেসির। বিশ্বকাপে মেসির যা রেকর্ড, সেটি এক সময় ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপ্পেও। লুসাইল আইকনিকে আজ ফয়সালা হবে কার হাতে ট্রফি উঠবে সেই বিশ্লেষণ তো চলছেই সঙ্গে গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন গøাভস কে পাবেন তা নিয়েও কথা থেমে নেই।

আরো পড়ুন:
দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করে জিয়া: প্রধানমন্ত্রী
যশোর জেলা আ. লীগ নেতা মিন্টু‘র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশ দর্পণ পরিবার

বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলদাতার হাতেই উঠে গোল্ডেন বুট। আর বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার পান গোল্ডেন বল। সেরা গোলকিপারের হাতে গোল্ডেন গ্লাফস ভস। কাতার বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে এবার সমান্তরালে দুই মহাতারকা, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ও ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে। মজার ব্যাপার হলো তাদের দলই উঠে এসেছে ফাইনালে। মানে ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজলেই কেবল নিশ্চিত হওয়া যাবে কার হাতে উঠতে যাচ্ছে গোল্ডেন বুট। মেসি-এমবাপ্পে দুজনেরই চলতি বিশ্বকাপে গোলসংখ্যা ৫টি।

সোনার বুট জেতার সম্ভাব্য ফুটবলারের তালিকায় এরপরই আসছে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনারই দুই ফুটবলারের নাম। আর্জেন্টাইন হুলিয়ান আলভারেজ ও ফ্রান্সের অলিভিয়ে জিরড। ৪ করে গোল করে গোলদাতাদের তালিকার দুই নম্বরে দু’জন। তবে বিশ্লেষকরা এগিয়ে রাখছেন মেসিকেই। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। বয়স ৩৫ পেরিয়ে ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় তিনি সেটি অন্তত মাঠের ফুটবল দেখে আঁচ করার উপায় নেই। কাতারে প্রতিটি ম্যাচেই নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে এসে অন্তত সোনার ট্রফিটা নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠতে চান মেসি। এবার বিশ্বকাপ না পেলে আক্ষেপটা থেকে যাবে আজীবন।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা দিয়াগো ম্যারাডোনা আলবিসেলেস্তেদের জেতালেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপের শিরোপা। ঠিক এক বছর পর আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে জন্ম মেসির। কে জানতো, ৩৬ বছর পর এই মেসিই আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় শিরোপা জেতার স্বপ্নের কাছাকাছি নিয়ে যাবেন? কেউ ভাবেনি। ফুটবল বিধাতা তাকে নিয়ে গেছে এমন উচ্চতায়। মেসি ২০১৪ সালেও অমরত্বের স্বীকৃতির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ব্রাজিলের ডেরায় সেবার জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। চোখের জলে শেষ হয় মেসির বিশ্বকাপ। ৮ বছর পর একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফুটবল জাদুকর। এবার প্রতিপক্ষ আরেক ইউরোপিয়ান হেভিওয়েট ফ্রান্স। মেসির জন্য সেজেছে রোসারিও। আর্জেন্টিনার পতাকা, মেসির জার্সি, তার মুখ, পা, তার হাতে শিরোপা উঁচিয়ে ধরা প্রতিটি ছবি আঁকা হয়েছে নগরীতে।

আরো পড়ুন:
দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করে জিয়া: প্রধানমন্ত্রী
যশোর জেলা আ. লীগ নেতা মিন্টু‘র জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশ দর্পণ পরিবার

মেসি, মেসি’ ধ্বনিতে চারপাশ যখন প্রকম্পিত, ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমের ধারণা, অনেক ফরাসিও বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করবে। কারণ, তারাও যে মেসিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে দেখতে চায়।
চারপাশে সবার মুখে এখন মেসির নাম, সে তালিকায় অনেক ফরাসি নাগরিককেও দেখছেন দেশম। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি আর্জেন্টিনা, বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষ এবং কিছু ফ্রেঞ্চও সম্ভবত এটা আশা করে যে লিওনেল মেসি যেন বিশ্বকাপ জিততে পারে। তবে শিরোপা জিততে সম্ভাব্য সবকিছু আমরা করব।

সূত্র- ভোরের কাগজ

ডিসেম্বর ১৮.২০২২ at ০৯:৫২:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর